প্রাণের গুঁড়া হলুদে ক্ষতিকর সীসা
জে.ইউ জুবায়ের, এবিসি নিউজ বিডি, যুক্তরাষ্ট্রঃ স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর সীসা থাকার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বাজার থেকে প্রাণ ব্রান্ডের হলুদের গুঁড়া প্রত্যাহার করে নিতে বলেছে দেশটির খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন-এফডিএ।
ভোক্তাদের প্রাণ গুড়া হলুদ ব্যবহার না করার পাশাপাশি প্রয়োজনে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতেও পরামর্শ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এফডিএর সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এক ব্যক্তির অসুস্থতার কারণ খুঁজতে গিয়ে মসলায় ক্ষতিকর মাত্রায় সীসা থাকার বিষয়টি তাদের নজরে আসে। রাসায়নিক পরীক্ষায় প্রাণের গুঁড়া হলুদে ৫৩ পিপিএম (পার্টস পার মিলিয়ন) পর্যন্ত সীসা পাওয়া গেছে, যা নবজাতক, শিশু-কিশোর ও গর্ভবতী নারীর জন্য খুবই ক্ষতিকর।
প্রাণ কর্তৃপক্ষ বলছে, এটা তাদের প্রক্রিয়াজাতকরণের ত্রুটি নয়, বাংলাদেশের মাটির গুণের কারণেই হলুদে সীসার পরিমাণ বেশি থাকে। তবে তাদের এই দাবি মৃত্তিকা গবেষকরা উড়িয়ে দিয়েছেন।
গত মঙ্গলবার এফডিএর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নিউ ইয়র্কে প্রাণের ৪০০ গ্রামের প্যাকেটজাত গুঁড়া হলুদের আমদানিকারক ডেট্রয়েটের বেস্ট ভ্যাল্যু নামের প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যে বাজার থেকে পণ্যটি তুলে নিয়েছে।
নিউ ইয়র্কে এফডিএ এবং বেসরকারি পরীক্ষাগারে নমুনা পরীক্ষা করে প্রাণের ওই প্যাকেটের গুঁড়া হলুদে ৫৩ পিপিএম সীসা পাওয়া গেছে।
এর আগে প্রাণের ২৫০ গ্রামের প্লাস্টিক জারের গুঁড়া হলুদে ২৮ পিপিএম এবং ৪০০ গ্রামের প্যাকেটে ৪২ পিপিএম সীসা পাওয়া যাওয়ায় নিউ ইয়র্কের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এশিয়া ক্যাশ অ্যান্ড ক্যারি ইনক ও ব্রুকলিনের অন টাইম ডিস্ট্রিবিউশনস পণ্যটি প্রত্যাহার করে নেয়।
যারা ইতোমধ্যে প্রাণের গুঁড়া হলুদ কিনেছেন, তাদের তা দোকানে ফেরত দিয়ে পু্রো দাম ফেরত নিতে বলেছে এফডিএ।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সীসা শরীরে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। সীসার কারণে শিশুর মানসিক ও দৈহিক বৃদ্ধি ব্যাহত হতে পারে। গর্ভবর্তী নারী, নবজাতক এবং অল্প বয়সীদের সীসার প্রভাব এড়িয়ে চলা উচিৎ।
ইতোমধ্যে যারা প্রাণের গুঁড়া হলুদ ব্যবহার করেছেন, তাদের প্রয়োজনে চিকিৎসকের মাধ্যমে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার পরামর্শ দিয়েছে এফডিএ।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে প্রাণের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল এবিসি নিউজ বিডিকে বলেন, “আমেরিকার স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে আমাদের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে। আমরা তাদের ব্যাখ্যাও দিয়েছি। এটা বাংলাদেশের মাটির গুণাগুণের কারণে হয়েছে। প্রাণ বা অন্য কোনো কোম্পানির প্রক্রিয়াজাতকরণের সমস্যা এটা নয়।”
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের নির্ধারিত মান রক্ষা করেই আমরা সব পণ্য প্রক্রিয়াজত করি। অনেক দিন ধরেই আমরা মসলা রপ্তানি করে আসছি। তবে অনেক ক্ষেত্রে ইউরোপ বা আমেরিকার বেঁধে দেয়া মাত্রার সঙ্গে আমাদের মাত্রা মেলে না।এতোদিন কোনো সমস্যা হয়নি। এখন হঠাৎ যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য বিভাগ আপত্তি জানিয়েছে। ”
কামাল দাবি করেছেন, কেবল প্রাণ নয়, বাংলাদেশের অন্যান্য কোম্পানির গুঁড়া মসলা নিয়েও এফডিএ আপত্তি তুলেছে।
অবশ্য এফডিএর ওয়েবসাইটে প্রাণ ছাড়া আর কোনো বাংলাদেশি কোম্পানির মসলা নিয়ে গত তিন মাসে কোনে নোটিস দেখা যায়নি।
বাংলাদেশের মাটিতে সীসার মাত্রা নিয়ে প্রাণের দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের(এসআরডিআই)পরিচালক খোরশেদ আলম এবিসি নিউজ বিডিকে বলেন, “বাংলাদেশের মাটিতে সীসার মাত্রা দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য অঞ্চলের মতোই। তবে শিল্প এলাকায় মাটিতে সীসার মাত্রা স্বাভাবিকভাবেই বেশি। এই অজুহাত দেখিয়ে বাংলাদেশের মাটিকে দোষ দেয়াটা মিথ্যাচারের নামান্তর।”
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, “অনেক দেশের মাটিতে বাংলাদেশের চেয়েও সীসার মাত্রা বেশি। বাংলাদেশের জমিতে যে সীসা আছে তা টক্সিক মাত্রার নয়।”
এই গবেষক বলেন, যে কারখানায় হলুদ প্রক্রিয়াজাত করা হচ্ছে, বা যে পাত্র ব্যবহার করা হচ্ছে- সেখান থেকেও সীসার পরিমাণ বাড়তে পারে।
“সম্প্রতি আমাদের দেশের ধান নিয়ে গবেষণা হয়েছে। সেখানে আমরা চালে ক্ষতিকর মাত্রায় সীসা পাইনি। সুতরাং অন্য কোনো ফসলেও মাটির কারণে এটা হওয়ার কথা নয়।”
প্রাণের গুঁড়া হলুদ নিউইয়র্ক, পেনসিলভেনিয়া, ম্যাসেচুসেটস, ভার্জিনিয়া এবং ইলিনয় অঙ্গরাজ্যসহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যের দোকানে বিক্রি হচ্ছে। মূলত এশীয় ও দক্ষিণ এশীয় অভিবাসীই এ ধরনের মসলার মূল ভোক্তা।