চাপের মুখে আছেন এরশাদ!
ঢাকা: মহাজোট ছাড়া না-ছাড়া নিয়ে চাপের মুখে আছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। একদিকে মহাজোট ছাড়ার জন্য দলের অধিকাংশ প্রেসিডিয়াম সদস্যের চাপ, অন্যদিকে মহাজোট ছাড়ার পর তার পুরনো মামলায় জেলে যাওয়ার আশঙ্কা। আর দেশের চলমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে দলের কোন অবস্থান রাজনৈতিকভাবে দলকে লাভবান করবে সেটি তো আছেই। এ অবস্থায় সাবেক এই প্রেসিডেন্ট মানসিক চাপ ও দোদল্যমানতায় ভুগছেন বলে জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির একাধিক প্রেসিডিয়াম সদস্য ও অঙ্গসংগঠনের নেতা।
জাতীয় পার্টি সূত্র জানায়, সরকারের শরিক হওয়া সত্ত্বেও সারা দেশে জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীদের অবমূল্যায়ন, মহাজোট সরকারের সোয়া চার বছরে নির্বাচনী ইশতেহার পূরণ না হওয়া, গণজাগরণ মঞ্চ নিয়ে সরকারের সঙ্গে টানাপোড়েন, ১৪ দলের বৈঠকে জাপাকে না ডাকা, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, খুন-গুম-হত্যার ঘটনা বেড়ে যাওয়া, বিদেশীদের সঙ্গে সরকারের সম্পর্কের অবনতিসহ সর্বশেষ যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূতের উদ্বেগ প্রকাশের পর সরকারের ব্যর্থতার দায়ভার নিতে জাতীয় পার্টির নেতাদের একাংশ রাজি নন।
তারা মনে করেন, মহজোটে থেকে আগামী নির্বাচনে এককভাবে অংশ নিলে জনগণের সমর্থন পাওয়া যাবে না। এককভাবে নির্বাচন করতে হলে যত দ্রুত সম্ভব মহাজোট ছেড়ে সারা দেশে সাংগঠনিক শক্তি জোরদার করতে হবে। রংপুর সিটি করপোরেশন এবং টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) উপনির্বাচনের নজির টেনে তারা বলেন, তা না হলে ওই দুই নির্বাচনের ভাগ্যই বরণ করতে হবে দলকে।
আনুষ্ঠানিকভাবে মহাজোট ছাড়ার অনুরোধ জানাতে সম্প্রতি দলের কয়েকজন প্রেসিডিয়াম সদস্য এরশাদের সঙ্গে দেখা করেছেন বলে জাপা সূত্র জানায়। তারা চেয়ারম্যানকে বলেছেন, এককভাবে নির্বাচন করতে চাইলে এখনই মহাজোট ছাড়তে হবে দলকে।
এরশাদের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত এক প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, “নেতাকর্মীদের আবেগ-অনূভূতি ও জনতার সেন্টিমেন্ট সরকারবিরোধী, এটা এরশাদ বুঝলেও তিনি এখনই মহাজোট ছাড়ছেন না। মহাজোট ছেড়ে সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু করলে এরশাদের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয় মামলাগুলো পুনরুজ্জীবিত করে আবারও তাকে জেলে পাঠানো হতে পারে, এমন আশঙ্কা রয়েছে।”
ওই প্রেসিডিয়াম সদস্য আরো বলেন, “এরশাদ জেলে গেলে জাতীয় পার্টি আবারও ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে এরশাদ মহাজোটে থাকা না-থাকা নিয়ে দোটানায় ভুগছেন।’
এ বিষয়ে জাতীয় পার্টির মুখপাত্র কাজী ফিরোজ রশিদ বলেন, “পার্টির তৃণমূল কর্মীদের দাবি আর আমাদের দাবি একই। আমরা মহাজোট ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য স্যারকে ( এরশাদ) বলেছি। স্যার বলেছেন, ‘আমি সৈনিক, কখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে জানি।’ আমরা স্যারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি।”
শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চ এবং ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করার জন্য মঞ্চের দাবির ব্যাপারে অবশেষে দলের অবস্থান পরিষ্কার করেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান।৬ মার্চ ক্বারি হাবিবুল্লাহ বেলালীর নেতৃত্বে আলেম-ওলামাদের জাতীয় পার্টিতে যোগদান সভায় শাহবাগ আন্দোলনের সমালোচনা করে এরশাদ বলেন, “দুঃখ লাগে শাহবাগের দিকে তাকালে। তারা যা করছে, তা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। দেশের কোথায় পতাকা উড়বে, সেটি তারা ঘোষণা দেয়ার কে? তারা কি সরকার হয়ে গেছে নাকি? এত ধৃষ্টতা মেনে নেয়া যায় না।”
ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবির কড়া সমালোচনা করে এরশাদ আরো বলেন, “আমেরিকায় বাইবেল ছুঁয়ে শপথ করতে হয়। বাংলাদেশে কোরআন ছুঁয়ে শপথ করতে হয় না। আমরাই উদার। তাহলে আমাদের দেশে সমস্যা কেন?” যাদের ইসলাম ভালো লাগে না, তাদের ধর্মান্তরিত হতে, না হলে অন্য দেশে চলে যাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
দেশের চলমান অস্থিরতা ও সহিংসতার পরিপ্রেক্ষিতে ১২ মার্চ সরকারের সমালোচনা করে এরশাদ বলেছেন, দেশের অবস্থা ভালো নয়। দেশ গৃহযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে।
এরশাদের সাম্প্রতিক এসব বক্তব্য রাজনৈতিক মহলে বেশ আলোচিত হয়। বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন, সরকারের সঙ্গে এরশাদের দূরত্ব ক্রমেই বাড়ছে। রাজনৈতিক আলোচনায় এমনকি জাতীয় পার্টির তৃণমূলে একটা ধারণা শেকড় গাড়ছে যে, জাতীয় পার্টি মহাজোট ছাড়ার মোক্ষম সময় খুঁজছে।
তবে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের প্রেস সচিব ও প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভরায় বলেন, ‘এখনো আমরা মহাজোটেই আছি। স্যারের সরকারের সমালোচনা করা আর মহাজোট ত্যাগ করা এক নয়। আওয়ামী লীগের অনেক নেতাও তো সরকারের সমালোচনা করে, তারা কি আওয়ামী লীগ ত্যাগ করেছে? আমরা আগামী নির্বাচনে এককভাবে লড়ব এটাই বড় কথা।’