প্রতিক্রিয়া জানাবেন খালেদা জিয়া
রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকারের প্রস্তাবের প্রতিক্রিয়া জানাতে সোমবার সংবাদ সম্মেলন করতে যাচ্ছেন বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া।
নির্বাচনের সময় সরকার কীভাবে চলা উচিৎ- সে বিষয়ে বিএনপির অবস্থান বা প্রস্তাবও তিনি তুলে ধরতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নির্দলীয় সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না- এই ঘোষণা দিয়ে রোববার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিএনপিপন্থী পেশাজীবীদের সম্মেলনে তিনি বলেন, সংবাদ সম্মেলনেই তিনি বিস্তারিত তুলে ধরবেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, “আজ সব কথা বলব না। কাল একটা সংবাদ সম্মেলন আছে। সেখানে বলব।”
বিরোধীদলীয় নেতার প্রেসসচিব মারুফ কামাল খান এবিসি নিউজ বিডিকে বলেন, জাতির উদ্দেশে বক্তব্য নিয়ে বিকাল ৪টায় গুলশানের হোটেল ওয়েস্টিনে সংবাদ সম্মেলন করবেন খালেদা জিয়া।
“বিরোধী দলীয় নেতা সর্বদলীয় অন্তবর্তীকালীন সরকার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবের বিষয়ে দলের অবস্থান স্পষ্ট করবেন। এছাড়া দেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েও বক্তব্য দেবেন তিনি।”
আগামী নির্বাচন নিয়ে দুই প্রধান দলের মুখোমুখি অবস্থানে দেশের মানুষের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। আওয়ামী লীগ নির্বাচিত সরকারের অধীনে নির্বাচন চাইলেও বিএনপি নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলনে রয়েছে।
এর মধ্যেই গত শুক্রবার জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার অবস্থান থেকে কিছুটা সরে নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকারের প্রস্তাব বিরোধী দলকে দেন।
ওই সরকার গঠনের জন্য সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে নাম প্রস্তাব করতে বিএনপির প্রতি আহ্বানও জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী সর্বদলীয় সরকারের প্রস্তাব দেয়ার পর বিরোধীদলীয় নেতা শনিবার দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। রোববার রাতে তিনি বৈঠক করেন ১৮ দলীয় জোট নেতাদের সঙ্গে।
সবার সঙ্গে আলোচনার পরই সোমবার সংবাদ সম্মেলনে যাচ্ছেন খালেদা জিয়া। তবে প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব কার্যত প্রত্যাখ্যান করেই রোববার দেয়া বক্তব্যে তিনি বলেন, নির্দলীয় সরকার ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হবে না।
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনের পর ফলে এখন আগামী ২৫ অক্টোবর থেকে ২৪ জানুয়ারির মধ্যে দশম সংসদ নির্বাচন হবে। নির্বাচনের সময় ক্ষমতায় থাকবে শেখ হাসিনার সরকার এবং সংসদ বহাল থাকবে।
দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না দাবি করে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার পদ্ধতি সংবিধানে পুনর্বহালের দাবি জানিয়ে আসছে বিরোধী দল।
সংসদ নির্বাচনের দিন গণনার শুরুতে আগামী ২৫ অক্টোবর দুই প্রধান দলই ঢাকায় জনসভা ডাকায় জনগণের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দেয়।
ওই উৎকণ্ঠার মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকারের প্রস্তাব দিলে তা ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখেন রাজনৈতিক অঙ্গনের অনেকে।
তবে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বিরোধী দলের কয়েকজন নেতা বলেন, নির্বাচনকালে সরকার প্রধান কে হবেন, তাসহ অনেক কিছুই এই প্রস্তাবে স্পষ্ট হয়নি।
খালেদা জিয়া আগে থেকে বলে আসছেন, নির্বাচনকালীন সরকারে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে তিনি মেনে নেবেন না।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলে আসছেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনাই থাকবেন।
পরিবেশমন্ত্রী হাছান মাহমুদ শনিবার এক সভায় বলেন, সংবিধান অনুযায়ী অন্তর্বর্তী সরকারে বিরোধী দলকে অংশ নেয়ার সুযোগ দেয়ার কোনো বাধ্যবাধকতা না থাকার পরও আওয়ামী লীগ সে সুযোগ দিচ্ছে। সরকারপ্রধানের দায়িত্বে শেখ হাসিনাই থাকবেন।
অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের পর বিএনপির মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “প্রধানমন্ত্রী দলীয় সরকার বহাল রেখে বিরোধী দলের সদস্যদের নিয়ে নির্বাচনকালীন সময়ে একটি অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠনের যে প্রস্তাব করেছেন তাতে সরকার প্রধানের বিষয়ে কোনো কথা নেই। এরকম প্রস্তাব আগেও তিনি লন্ডনে দিয়েছিলেন।”
এর আগে গত সেপ্টেম্বরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেছিলেন, তাদের প্রস্তাবিত অন্তবর্তীকালীন সরকারের রূপরেখা কেমন হবে- শিগগিরই তা জাতির কাছে উপস্থাপন করা হবে।
খালেদা জিয়া সংবাদ সম্মেলনে সেই রূপরেখা তুলে ধরতে পারেন বলেও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা।