সাবেক উপদেষ্টাদের নিয়ে সরকার প্রস্তাব খালেদার

khaleda zia বেগম খালেদা জিয়ারিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ প্রধানমন্ত্রীর সর্বদলীয় সরকারের প্রস্তাব নাকচ করে ১৯৯৬ ও ২০০১ এর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ২০ উপদেষ্টার মধ্যে থেকে ১০ জনকে বেছে নিয়ে নির্বাচনকালীন অন্তবর্তী সরকারের প্রস্তাব দিলেন বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়া।

তার প্রস্তাব অনুযায়ী, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধী দল বিএনপি পাঁচটি করে নাম প্রস্তাব করবে। আর ক্ষমতাসীন ও বিরোধীদলের ‘ঐক্যমতের ভিত্তিতে’ সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একজন ‘সম্মানিত নাগরিককে’ এই অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসাবে দায়িত্ব দেয়া হবে।

শান্তি, স্থিতিশীলতা ও গণতন্ত্রের স্বার্থে প্রধানমন্ত্রী শিগগিরই এ প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার উদ্যোগ নেবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন বিরোধী দলীয় নেতা।

দশম সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে জনমনে রাজনৈতিক সংঘাতের আশঙ্কার মধ্যেই গত শুক্রবার জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় মন্ত্রিসভার প্রস্তাব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই সরকারের জন্য বিরোধী দলের কাছে নামও চান তিনি।

প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের তিন দিন পর সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করে পাল্টা এই প্রস্তাব তুললেন বিএনপি চেয়ারপার্সন।

প্রায় ৪০ মিনিটের বক্তব্যের শেষ অংশে এসে খালেদা জিয়া বলেন, “প্রধানমন্ত্রী তার প্রস্তাবে নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকারের যে অষ্পষ্ট ধারণা তুলে ধরেছেন তাতে সেই অন্তবর্তী সরকার প্রধান কে হবেন তা খোলাসা করেননি। এতে নাগরিকদের মধ্যে এই সংশয় রয়ে গেছে যে, তিনি সংসদ বহাল ও নিজের হাতে ক্ষমতা ও প্রশাসন কুক্ষিগত রেখে বিরোধীদলকে এক অসম প্রতিযোগিতায় আহ্বান জানাচ্ছেন। এটি জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি।”

প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনকালীন ‘নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের গণদাবি’ সম্পর্কে কোনো আলোচনার অবকাশ না রেখে একতরফাভাবে ‘শুধুমাত্র নিজের সুবিধা অনুযায়ী’ একটি প্রস্তাব তুলেছেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে জাতি হতাশ হয়েছে মন্তব্য করে বিরোধী দলীয় নেতা বলেন, “আমি এখনো মনে করি, আলোচনার মাধ্যমেই বিষয়টির সুরাহা করা দরকার। এবং সেটা যত দ্রুত হয়, ততই মঙ্গল।”

এর এ লক্ষ্যেই বিএনপি ও ১৮ দলের পক্ষ থেকে নির্বাচনকালীন অন্তবর্তী সরকারের এ প্রস্তাব তুলে ধরেন তিনি।

খালেদা জিয়া বলেন, “১৯৯৬ ও ২০০১ সালে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সকল দলের অংশগ্রহণভিত্তিক দুটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ওই দুটি সরকারের উপদেষ্টারা তাদের নিরপেক্ষতার জন্য সকল মহলে প্রশংসিত হয়েছিলেন।

“ওই দুটি নির্বাচনে একবার আওয়ামী লীগ ও একবার বিএনপি বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। আমি প্রস্তাব করছি, ওই দুই সরকারের ২০ জন উপদেষ্টার মধ্য থেকে বর্তমান সরকারি দল পাঁচজন এবং বিরোধী দল পাঁচজন সদস্যের নাম প্রস্তাব করবেন।”

খালেদার ‘রূপরেখা’ অনুযায়ী, এই ১০ জনই হবেন নির্বাচনকালীন সরকারের উপদেষ্টা।

“আমার প্রস্তাব, সরকারি ও বিরোধীদলের ঐক্যমতের ভিত্তিতে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একজন সম্মানিত নাগরিককে এই অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে নির্ধারণ করা হবে।”

নিজে প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব ‘গ্রহণযোগ্য নয়’ বলে নাকচ করলেও খালেদা আশা করছেন, শান্তি, স্থিতিশীলতা ও গণতন্ত্রের স্বার্থে শেখ হাসিনা তার এই প্রস্তাব গ্রহণ করবেন।

“আমি আশা করি, তিনি এ ব্যাপারে দুই পক্ষের মধ্যে দ্রুত আলোচনার কার্যকর উদ্যোগ নেবেন। সাংবিধানিকভাবে এই নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের জন্যও আমি তার প্রতি উদাত্ত্ব আহ্বান জানাচ্ছি।”

সাংবিধানিকভাবে কীভাবে এই সরকার গঠন করা যায়- তারও একটি প্রস্তাব রয়েছে খালেদা জিয়ার বক্তব্যে।

তিনি বলেছেন,  রাষ্ট্রপতি, স্পিকার ও সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্যদের যেভাবে সংসদে নির্বাচিত করা হয়, ঠিক সেইভাবে ওই অন্তবর্তীকালীন সরকারকে ‘নির্বাচিত’ করে দিতে হবে। আর তা করতে হবে বর্তমান সংসদ ভেঙে যাওয়ার আগেই।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ