অপকর্ম ঢাকতে গণহত্যা ও শাহবাগ: খালেদা

661মুন্সীগঞ্জ: বিএনপি চেয়ারপারসন ও বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, “সরকারের অপকর্ম, দুর্নীতি ও নানা কেলেঙ্কারি নিয়ে যখন সারা দেশে তোলপাড় শুরু হয়েছে, তখন জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে ফেরাতে নাস্তিকদের নিয়ে শাহবাগে আন্দোলন করানো হচ্ছে। অপকর্ম ঢাকতে সরকার গণহত্যাও শুরু করেছে। গণজাগরণ মঞ্চ বন্ধ না হলে জনগণ ঢাকা অভিমুখে যাত্রা শুরু করবে। জনগণের মঞ্চ করে সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে।”

শুক্রবার বিকেলে মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে গোয়ালিমান্দ্রা মনিপাড়া কালিমন্দিরের পাশের মাঠে এক জনসভায় তিনি এ কথা বলেন।

সম্প্রতি সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দির পরিদর্শন করতে বিকেল সোয়া পাঁচটায় লৌহজংয়ে আসেন খালেদা।

খালেদা বলেন, “আর কোনো মন্দিরে যদি হামলা হয়, তাহলে সরকারকে কঠিন শাস্তি পেতে হবে। রামুর ঘটনাও সরকার ঘটিয়েছে। ওই ঘটনার পর মিডিয়াতে যার নাম এসেছিল, প্রধানমন্ত্রী তাকে সফরসঙ্গী বানিয়েছেন। সরকার ধর্মনিরপেক্ষতার নামে ধর্মহীনতার কাজ করছে।”

তিনি বলেন, “বিএনপি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির রাজনীতি করে। কিন্তু এ সরকার একের পর এক সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা করছে।”

খালেদা বলেন, “নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ভারতের অযোধ্যায় যখন বাবরি মসজিদ ভাঙা হয়, তখন বিএনপি ক্ষমতায় ছিল। বাংলাদেশে কোনো মন্দিরে তখন হামলার ঘটনা ঘটেনি। কারণ বিএনপি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির রাজনীতিতে বিশ্বাস করে, মূল্যবোধের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে।”

তিনি বলেন, “আমাদের দলের কেন্দ্রীয় অফিসে পুলিশ হামলা করেছে। আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশ গুলি চালিয়েছে। পূর্বপরিকল্পিতভাবে অস্ত্র ও বোমা রেখে পুলিশ এখন জনগণকে ধরছে।”

‘পুলিশ অতি উৎসাহী হয়ে কাজ করছে’
খালেদা বলেন, “এ পর্যন্ত ১৭০ জনকে হত্যা করা হয়েছে। এর দায় সরকার এড়াতে পারে না। এরও একদিন বিচার হবে। র্যা ব-পুলিশ অনেককে গুম করে হত্যা করেছে। কিছু দলবাজ ও বিশেষ জেলার পুলিশ অতি উৎসাহী হয়ে কাজ করছে।”

তিনি বলেন, “পুলিশ যদি এমন কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে থাকে, তাহলে জাতিসংঘ হয়তো বিভিন্ন শান্তি মিশনে বাংলাদেশের পুলিশকে আর নাও নিতে পারে।”

খালেদা বলেন, “বিএনপি ক্ষমতায় আসলে ক্ষতিগ্রস্ত মন্দির পুনর্নির্মাণ করবে।” সব ধর্মের মানুষকে নিরাপত্তা দেয়ার জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের আহ্বান জানান তিনি।

তিনি বলেন, “সারা দেশের মতো সরকার মুন্সীগঞ্জেও উন্নয়নমূলক কিছু করতে পারেনি। এখানে যা কিছু উন্নয়ন হয়েছে সব বিএনপি করেছে।”

আগামী ১৮ ও ১৯ মার্চের হরতাল সফল করতে জনগণকে আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আগামীতে আরো যেসব কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে, সেগুলোও সফল করে সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে।”

‘সরকার সন্ত্রাস করছে’
সরকার সন্ত্রাস করছে অভিযোগ করে খালেদা বলেন, “সরকার জনগণের ওপর হামলা করছে। তাদের নিরাপত্তা সরকার দিতে পারছে না। এ সরকার ব্যর্থ। তাই এ সরকারকে এখনই বিদায় করতে হবে।”

তিনি বলেন, “যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আমরাও চাই। তবে সব দলের অপরাধীদের বিচার করতে হবে। আওয়ামী লীগেও অনেক যুদ্ধাপরাধী আছে। যেমন- স্বরাষ্টমন্ত্রী। তার ব্যাপারে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীও নানা তথ্য দিয়েছেন।”

‘শাহবাগে বিচার-বিচার খেলা হচ্ছে’
খালেদা বলেন, “শাহবাগের সবাই নাস্তিক। ইসলাম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ধর্ম- কোনো ধর্মই তারা মানে না। তারা অপপ্রচার চালাচ্ছে। তারা বিচার-বিচার খেলছে।”

তিনি বলেন, “শাহবাগের আন্দোলনকারীরা আইন ভঙ্গ করে রাস্তা বন্ধ করে সমাবেশ করছে।”

খালেদা বলেন, “যদি কাউন্টার কোনো মঞ্চ তৈরি হয়, আর তাতে যদি কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে, তাহলে এর দায় সরকারকেই নিতে হবে।”

তিনি বলেন, “মহানবী সম্পর্কে ব্লগে এমন কিছু লেখা হচ্ছে যা মুখে নেয়া যায় না। এসবের প্রতিবাদ করায় বায়তুল মোকাররমে পুলিশ তালা দিয়েছে। আর শাহবাগে নাস্তিকদের পাহারা দিয়েছে।”

জনসভায় সভাপতিত্ব করেন মুন্সীগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল হাই।

এতে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মইন খান, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, সাদেক হোসেন খোকা, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট আহমদ আজম খান, কোষাধ্যক্ষ মিজানুর রহমান সিনহা, ও মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরীন সুলতানা। সভা পরিচালনা করেন জেলা বিএনপির সা্ধারণ সম্পাদক আলী আজগর রিপন মল্লিক।

এক লাখ টাকার চেক প্রদান
ক্ষতিগ্রস্ত মন্দির মেরামত ও মূর্তি পুনর্নির্মাণের জন্য এক লাখ টাকার চেক দিয়েছেন খালেদা জিয়া। লৌহজংয়ে গোয়ালিমান্দ্রা মনিপাড়া কালিমন্দির পূজামণ্ডপের সাধারণ সম্পাদক কমল চন্দ্র দাশের হাতে তিনি এ চেক তুলে দেন।

ক্ষতিপূরণের আশ্বাস
বিকেল সোয়া পাঁচটায় দিকে লৌহজংয়ের গোয়ালিমান্দ্রায় আসার পর সেখানকার ক্ষতিগ্রস্ত কালিমন্দির ঘুরে দেখেন খালেদা। হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের কাছে খালেদা জানতে চান, কখন, কীভাবে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। তারা খালেদা জিয়ার কাছে সেসব ঘটনা তুলে ধরেন। এ সময় ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দেন তিনি।

সেখানে মন্দিরে দেখা যায়, চারদিকে দেয়াল। কিন্তু ছাদ ও সেখানকার মূর্তিগুলো ধ্বংস করা হয়েছে। সেই মন্দিরটি পাকা করার ও মূর্তিগুলো পুনরায় নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন খালেদা।

লৌহজংয়ে সাজ সাজ রব
দলীয় চেয়ারপারসনের আগমনকে কেন্দ্র করে লৌহজং এলাকায় সাজ সাজ রব ছিল। রাস্তার দুপাশে ছিল দলীয় নেতাকর্মীদের ছবিসম্বলিত ব্যানার ও ফেস্টুন।

বিকেল তিনটার পর থেকে গোয়ালিমান্দ্রা মনিপাড়া কালিমন্দিরের পাশের মাঠে জনসভাস্থলে নেতাকর্মীরা মিছিলসহ আসতে শুরু করে।

বিরোধীদলীয় নেতার আগমনকে কেন্দ্র করে জেলার প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়। বিপুলসংখ্যক পুলিশ সমাবেশস্থলের পাশে ও আশাপাশের বাড়ির ছাদে অবস্থান করে।

গত ৪ মার্চ রাতে কে বা কারা গোয়ালিমান্দ্রা মনিপাড়া কালিমন্দিরে অগ্নিসংযোগ ও হামলা করে। এতে মন্দিরের নয়টি মূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ