ত্বকি হত্যার সাথে শামীম ওসমানের পরিবার দায়ী
নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জে মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকি হত্যাকাণ্ডে শামীম ওসমানের পরিবারকেই দায়ী করেছেন তার বাবা রফিউর রাব্বি। তিনি বলেন, “তিন ভাইয়ের এক ভাইয়ের প্রশ্রয়ে ও একটি সংস্থার সহায়তায় আমার ছেলের খুনীদের বাইরে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সেই এক ভাইকে ডেকে বলেছেন, নারায়ণগঞ্জে ত্বকি হত্যা নিয়ে বাড়াবাড়ি যেন না হয়। সেই ভাই বলেছেন, দুই-চারদিন হৈ চৈ হবে পরে বন্ধ হয়ে যাবে।”
ত্বকি হত্যার প্রতিবাদে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের উদ্যোগে পাঁচদিনের টানা কর্মসূচির শেষ দিন শুক্রবার বিকেলে নগরের চাষাঢ়ায় শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত গণসমাবেশে প্রধান বক্তার বক্তব্যে রফিউর রাব্বি অভিযোগ করে এসব কথা বলেন। নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট এ গণসমাবেশের আয়োজন করে।
রফিউর রাব্বি আরো বলেন, “আমার ছেলে ত্বকি মরে গেছে। নারায়ণগঞ্জে ত্বকির বয়সে যত তরুণ রয়েছে তারা সবাই আমার সন্তান। তাদের জীবনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব ত্বকি আমাকে দিয়ে গেছে। সারাদেশে সম্প্রদায়িক শক্তি সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা করছে। আমরা যখন যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ও জামায়াত শিবিরের রাজনীতি বন্ধের দাবিতে আন্দোলন করে আসছি ঠিক সেই সময় ত্বকিকে হত্যা করা হয়েছে।”
নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সভাপতি এবি সিদ্দিকের সভাপতিত্বে গণজমায়েত সভায় আরো বক্তব্য দেন- নারায়ণঞ্জ প্রেস কাবের সভাপতি কবি হালিম আজাদ, নারায়ণগঞ্জ খেলাঘরের সভাপতি রথিন চক্রবর্তী, নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি অ্যাডভোকেট প্রদীপ ঘোষ বাবু, সাবেক সভাপতি ভবানি শংকর রায়, শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, জেলা যুবলীগের সভাপতি আব্দুল কাদির, জেলা কৃষকলীগের সভাপতি রোকনউদ্দিন আহম্মেদ, জেলা বাসদের সমন্বয়ক নিখিল দাস, জেলা সিপিবি সমন্বয়ক হাফিজুল ইসলাম, শ্রমিক নেতা মন্টু ঘোষ, মাহাবুবুর রহমান ইসমাইল, কাউন্সিলর অসিত বরুন বিশ্বাস, মনিরুজ্জামান, সাগর, সাবেক কমিশনার দেলোয়ার হোসেন চুন্নু, গণ সংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক তরিকুল সুজন ও রফিউর রাব্বির বড় ভাই ওয়াহিদ রেজা।
রফিউর রাব্বি বলেন, “আমরা কোনো ভাবেই মনে করি না ত্বকিকে জামায়াত শিবির হত্যা করেছে। তাকে আমাদের সেই প্রতিদ্বন্দ্বি শক্তি হত্যা করেছে যাদের বিরুদ্ধে আমরা আন্দোলন করেছি। বাস ভাড়া বৃদ্ধির ব্যাপারে যখন আমি আন্দোলন করি তখন বাস মালিকরা র্যা বের কাছে একটি তালিকা দিয়েছিল তারা মাসে কত টাকা নাসিম ওসমান ও শামীম ওসমানকে চাঁদা দেয়। আমি সেই তালিকা দেখিয়ে ডিসি অফিসে বলেছিলাম এই চাঁদা যদি বন্ধ করা হয় তাহলে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ বাস ভাড়া ২২ টাকারও কম হবে।”
রাব্বি আরো বলেন, “নারায়ণগঞ্জে একটি টর্চার সেল আছে। সেই টর্চার সেলের আশে পাশে যারা থাকে তারা রাতে চিৎকারে শব্দ শুনতে পায়, গুলির শব্দ পায়। কিন্তু নারায়ণগঞ্জে পুলিশ গোয়েন্দা জানে না সেই টর্চার সেলের কথা শুনে না গুলি আর চিৎকারের শব্দ “
তিনি শামীম ওসমানকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “তাদের বিরুদ্ধে কথা বললে আমাদের জামায়াতের দোঁসর বলা হয়। প্রকৃতপক্ষকে জামায়াতের দোসর কারা তা নারায়ণগঞ্জবাসীকে জানাতে হবে। এই পর্যন্ত জামায়াতের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে আপনি কয়জন জামায়াত শিবিরকে মেরেছেন তার নারায়ণগঞ্জের মানুষকে বলেন। আপনার শ্বশুর জামায়াতের সংগঠন সোসাইটির সভাপতি। যে মুজাহিদের সঙ্গে কাজ করে। আমরা অসাম্প্রদায়িতার কথা বলি আপনি সাম্প্রদায়িকতার কথা বলেন। সিটি নির্বাচনের সময় আপনি হিন্দু মন্দিরে হামলা করে সংখ্যালঘুদের বুঝাতে চেয়েছেন শামীম ওসমানকে ভোট না দিলে নারায়ণগঞ্জে হিন্দুরা থাকতে পারবে না।”
গত ৬ মার্চ নিখোঁজ থাকে ত্বকি। এর পর ৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদী থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। ৯ মার্চ এ ঘটনায় নারায়ণগঞ্জে হরতাল পালিত হয়। পাঁচদিন ব্যাপী কর্মসূচির প্রথম দিন সোমবার জেলা প্রশাসকের কার্যালায় ঘেরাও ও স্মারক লিপি দেয়া হয়। মঙ্গলবার বিকাল চারটায় শহীদ মিনারে নাগরিক শোকসভা, ১৩ মার্চ বুধবার সারাদিন এলাকায় এলাকায় গণসংযোগ, ১৪ মার্চ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় শহীদ মিনারে ছাত্র সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।