কাল থেকে অবৈধ এই সরকার
রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ নির্বাচনের দিন গণনার শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মহাজোট সরকার অবৈধ হয়ে যাবে দাবি করে তাদের হঠাতে দুর্বার আন্দোলনে নামার ঘোষণা দিয়েছেন বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া।
তিনি বলেছেন, “কালকের পর থেকে এই সরকার আর বৈধ সরকার নয়, অবৈধ সরকার। দুর্বার আন্দোলনের মাধ্যমে তাদের ক্ষমতায় থেকে নামাতে হবে।”
বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে বিএনপি সমর্থক শিক্ষকদের সমাবেশে এ কথা বলে শুক্রবার ঢাকায় বিএনপির সমাবেশে যোগ দিতে পেশাজীবীসহ সবার প্রতি আহ্বান জানান খালেদা।
সংবিধান অনুযায়ী, বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ৯০ দিনের মধ্যে অর্থাৎ ২৫ অক্টোবর থেকে ২৪ জানুয়ারির মধ্যে আগামী সংসদ নির্বাচন হবে।
অর্থাৎ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট আগামী ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকলেও ২৫ অক্টোবর থেকে শুরু হবে নির্বাচনের দিন গণনা।
নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার পদ্ধতি পুনর্বহালের দাবি জানিয়ে আসা বিএনপি নির্বাচনের দিন গণনা শুরুর প্রথম দিন ঢাকায় সমাবেশ ডেকেছে। ওই সমাবেশ থেকে খালেদা জিয়ার চূড়ান্ত আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণার কথা রয়েছে।
শর্তসাপেক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ওই সমাবেশের অনুমতিও দিয়েছে পুলিশ। ওই সমাবেশে নতুন করে কোনো ধরনের বাধা সৃষ্টি না করতে সরকারকে হঁশিয়ার করেন তিনি।
২৫ অক্টোবর নিয়ে উত্তেজনার মধ্যেই গত ১৮ অক্টোবর নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়ে তাতে অংশ নিতে বিএনপির প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এর দুদিনের মাথায় বিএনপি চেয়ারপারসন পাল্টা প্রস্তাবে নির্দলীয় সরকারের রূপরেখা তুলে ধরে তা নিয়ে আলোচনার আহ্বান জানান, যা কোন ভাবেই মানতে পারবে না বলে জানিয়েছে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।
প্রধানমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়ায় একদিন বাদে প্রেসক্লাবের সমাবেশে বক্তব্যে খালেদা জিয়া বলেন, “এতদিন তারা বলেছে, ‘ফর্মুলা দেন’, ‘ফর্মুলা দেন’, এখন আমরা প্রস্তাব দিয়েছি, এখন তারা ধানাই-পানাই করছে। বল এখন সরকারের কোর্টে।”
খালেদা জিয়া ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টাদের মধ্যে থেকে ১০ জনকে নিয়ে নির্বাচনকালীন সরকারের প্রস্তাব দিয়েছেন। এর প্রধান উপদেষ্টা হবেন দুই প্রধান দলের মতৈক্যের ভিত্তিতে।
সংবিধানের মধ্যে থেকে এই প্রস্তাব মেনে নেয়ার সুযোগ নেই বলে আওয়ামী লীগ নেতারা বলে আসছেন।
খালেদা বলেন, “সাংবিধানিক পন্থায়ও এই প্রস্তাব বিবেচনা করা সম্ভব। দেশে এখনো প্রচুর শিক্ষিত, যোগ্য ও নিরপেক্ষ মানুষ আছেন, যারা অন্তর্বর্তী সরকারে কাজ করতে পারেন।”
বিএনপি বাদ দিয়ে নির্বাচনের যে কোনো চেষ্টার বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, “একক নির্বাচনের চিন্তা ছেড়ে দেন, এটা ভুলে যান। এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না, হতে দেয়াও হবে না।”
বিরোধী নেতা সরকারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “আপনারা জনপ্রিয়তার বড়াই করেন। তাহলে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন করে জনপ্রিয়তা যাচাই করুন। নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে ভয় কেন?
“চিরস্থায়ীভাবে ক্ষমতায় থাকার জন্য ১৯৭৩ সালে একদলীয় বাকশাল কায়েম করা হয়েছিল, কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। এবারও তারা এককভাবে নির্বাচন করে ক্ষমতায় চিরস্থায়ীভাবে থাকার পাঁয়তারা করছে।”
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ও জামায়াতে ইসলামীর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আন্দোলনের কথা তুলে ধরেন বিএনপি চেয়ারপারসন। ২০০৬ সালে লগি-বৈঠার মিছিল থেকে মানুষ হত্যাকাণ্ডের কথাও বলেন তিনি।
বর্তমান সরকারের পাঁচ বছরের শাসনের সমালোচনা করে খালেদা বলেন, “সরকার জনগণের মৌলিক অধিকার, সভা-সমাবেশের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। টক শো করতে দিচ্ছে না। বিরোধী নেতা-কর্মীদের বাড়িতে বাড়ি পুলিশ হানা দিয়ে গ্রেপ্তার করছে। বিভিন্ন টিভি চ্যানেল বন্ধ করছে। বন্ধ করছে সংবাদপত্র। এটা কি গণতন্ত্র?”
“এই সরকার আওয়ামী লীগের সরকার। তাদের শাসনামলে আওয়ামী লীগ ছাড়া কেউ কাজ পায় না। কারো চাকরি হয় না। তাদেরকে জনগণের সরকার বলা যায় না।”
পূঁজিবাজার, হল-মার্ক,ডেসনিটি, ব্যাংক,পদ্মা সেতু কেলেঙ্কারির কথা তুলে ধরে বিরোধী নেতা বলেন, “এখন কথায় কথায় তারা সমাবেশ বন্ধ ও ১৪৪ ধারা জারি করছে। নির্বাচনে হারার ভয়ে এসব করছে তারা।”
সমাবেশে বক্তব্যে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্য জোটের দাবিগুলো বাস্তবায়নের অঙ্গীকারও করেন তিনি।
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, “আমরা প্রতিহিংসার রাজনীতি করব না। সবাইকে আমরা ক্ষমা করে দিয়েছি। এই সরকার পাঁচ বছরে যে ক্ষতি করেছে, দুর্নীতি ও লুটপাট করেছে, তা ঠিক করতে আমাদের সময় পার হয়ে যাবে।”
বিকাল পৌনে ৫টার দিকে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সমাবেশস্থলে পৌঁছলে খালেদাকে স্লোগানে স্লোগানে স্বাগত জানায় শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের সদস্যরা।
চাকরি জাতীয়করণ, নন-এমপিভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা, চাকরিচ্যুত শিক্ষক-কর্মচারীদের পুনর্বহালসহ পেশাগত বিভিন্ন দাবি সমাবেশে তুলে ধরেন ঐক্য জোটের নেতারা।
সমাবেশে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিএনপি নেতাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, আমান উল্লাহ আমান, বরকত উল্লাহ বুলু, মাহবুবউদ্দিন খোকন, ফজলুল হক মিলন, আ ন ম এহছানুল মিলন, খায়রুল কবীর খোকন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সানাউল্লাহ মিয়া প্রমুখ।
ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, ডক্টরস অ্যসোসিয়েশনের যুগ্ম মহাসচিব রফিকুল ইসলাম, শিক্ষক নেতা রেজাউল করীম, শামসুল হক, মাহবুবুর রহমান মোল্লা, দেলোয়ার হোসেন, তোফাজ্জল হোসেন, আলমগীর হোসেন, জাকারিয়া শরীফ, মঞ্জুরুল ইসলাম,জাকির হোসেনও সমাবেশে বক্তব্য রাখেন।
২৫ অক্টোবরকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে মিছিল-সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও শর্ত সাপেক্ষে তা করার অনুমতি পায় অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া নেতৃত্বাধীন এই সংগঠন। সমাবেশের সময় প্রেসক্লাবের আশেপাশে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন ছিল।