নির্বাচনের সময় ৯০ থেকে ৬০ দিন হচ্ছে
সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ একমাস গোপন রাখার পর রোববার প্রকাশ হচ্ছে নির্বাচনী আচরণবিধির খসড়া। এতে নির্বাচনের সময় ৯০ দিন থেকে কমিয়ে ৫৫-৬০ দিন করা হয়েছে। মন্ত্রী-এমপিদের বিশেষ সরকারি সুবিধা বাতিল করে উভয়ের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা রাখা হয়েছে। এদিকে মন্ত্রী-এমপিদের কর্তৃত্ব থেকে নির্বাচনকে প্রভাবমুক্ত রাখতে কোনো আইন রাখা হয়নি। কমিশন সচিবালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সচিবালয় সূত্রে আরো জানা যায়, রোববার অথবা চলতি সপ্তাহের যে কোনোদিন এ খসড়া আচরণবিধি ইসির ওয়েবসাইটে আপলোড এবং নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে মতামতের জন্য অবমুক্ত করা হবে। নির্বাচনের সময় কমিয়ে আনার বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব ফরহাদ হোসেন এবিসি নিউজ বিডিকে বলেন- নির্বাচনের সময় সংসদ বহাল থাকায় নতুন আচরণবিধির খসড়ায় নির্বাচনপূর্ব সময়ের সংজ্ঞা পরিবর্তন করে মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের স্থলে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার দিন থেকে ভোট নেওয়ার পর গেজেট জারির সময়কে নির্বাচনকালীন সময় ধরে আচরণবিধিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। এই হিসেবে নির্বাচনের সময় ৫৫-৬০ দিন করা হয়েছে। কাজের সুবিধার্থেই সময় কমিয়ে আনা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ এবিসি নিউজ বিডিকে বলেন- নতুন চূড়ান্ত খসড়া আচরণবিধিতে নির্বাচনকালীন সময় প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, দলীয় প্রধান এবং মন্ত্রী-এমপিদের জন্য সমান সুযোগ রাখা হয়েছে। নির্বাচনী প্রচারে সরকারি সুযোগ সুবিধা কমানো হয়েছে। যাতে নির্বাচনকালে লেভেল পেলেয়িং ফিল্ড তৈরি হয়।
তিনি বলেন, নির্বাচনকালে সরকারে দায়িত্ব পালনকারী কোনো মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী এবং উপমন্ত্রী নির্বাচন কাজে সরকারি গাড়ি, স্থাপনা, জনবল, প্রটোকল, এছাড়াও রাষ্ট্রীয় কোনো সুযোগ-সুবিধা ব্যবহার করতে পারবেন না। এটি শুধু নির্বাচনী এলাকায় নয়, সরকারের রুটিন কাজ করতে দেশের যে প্রান্তেই যান না কেন সমগ্র বাংলাদেশে এই নির্দেশ কার্যকর থাকবে।
কমিশনার শাহনেওয়াজ আরো বলেন, সরকার প্রধান নির্বাচনে অংশ নিলে নির্বাচনকালে কোনো প্রকল্প অনুমোদন, অনুদান বরাদ্দ এবং কোনো কিছুই উদ্বোধন করতে পারবেন না। এমনকি আগে পাশ হওয়া বিষয়েও বর্তমান বিধিনিষেধ প্রয়োগ হবে। যারা ক্ষমতায় আছেন এবং বাইরে রয়েছেন তাদের জন্য বর্তমান চূড়ান্ত খসড়া আচরণবিধিতে সমান সুযোগ রাখা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনার আবুল মোবাররক বলেন- দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রার্থীকে দেশের যে কোনো সংসদীয় আসনের কোনো স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও প্রশাসনের আইনশৃঙ্খলারও কোনো কমিটির সদস্য থাকতে পারবে না। এমনকি বৈঠকেও অংশ নিতে পারবে না।
মোবাররক বলেন, গুরুত্ব অনুসারে দলীয় প্রধানরা রাষ্ট্রীয় প্রটোকল পাবেন। এমনকি রাষ্ট্রীয় অতিথিশালা, সার্কিট হাইজ ও ডাক বাংলো ব্যবহার করতে পারবেন। তবে সফরে এসব ব্যবস্থাপনায় অবস্থানকালে তারা কোনোভাবেই রাজনৈতিক কার্যক্রম ও নির্বাচনী কাজে অংশ নিতে পারবে না। নতুন আচরণবিধিতে নির্বাচনকালে সব দলের জন্য সমান সুযোগ থাকলেও তাদের কর্তৃত্ব থেকে নির্বাচন প্রভাবমুক্ত রাখতে কোনো আইন থাকছে না। তাই নির্বাচনকালে নির্বাচন প্রভাবমুক্ত রাখতে মন্ত্রী-এমপিদের নীতি-নৈতিকতার ওপর ভরসা করতে হবে কমিশনকে।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে শনিবার নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজ এবিসি নিউজ বিডিকে বলেন- বাংলাদেশের নির্বাচন আচরণবিধি তৈরি হয়েছে গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ ১৯৭২ (আরপিও) এর ওপর নির্ভর করে। সরকার বা মন্ত্রীদের নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি আরপিওতে স্পষ্টভাবে না থাকায় এ বিষয়টি নতুন খসড়া চূড়ান্ত আচরণবিধিতে আনা সম্ভব হয়নি। তাই নির্বাচন প্রভাবমুক্ত রাখতে কমিশনকে সরকার বা মন্ত্রীদের সদাচরণ বা রাজনৈতিক শিষ্টাচারের ওপর নির্ভর করতে হবে। কমিশন আশা করে, মন্ত্রী-সাংসদেরা নির্বাচনকে প্রভাবিত করার মতো সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে বিরত থাকবেন।
কমিশনার হাফিজের এমন আশবাদী বক্তব্যের জবাবে কমিশনের কর্মকর্তারা বলেন- বর্তমান রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে সব মন্ত্রী-সাংসদদের কাছে নীতি-নৈতিকতা বেমানান। বরং তাদের কর্তৃত্ব বহাল রাখার ফলে তা নির্বাচনকে প্রভাবিত করবে। এমনকি মাঠপর্যায়ে প্রার্থীদের সুযোগ-সুবিধার সৃষ্টি বৈষম্য হবে। সর্বশেষ আরপিও সংশোধনের প্রস্তাব তৈরির সময় সরকার, মন্ত্রীদের কর্তৃত্ব ও কর্মপরিধিতে আরোপের সুযোগ থাকলেও কমিশন তা গ্রহণ করেনি। কমিশন কর্মকর্তারা মনে করছেন- এটা করা হয়েছে বিশেষ কোনো দলকে সুবিধা দেয়ার জন্য ।