রাজশাহীতে হরতালে সংঘর্ষ ও আগুন

Rajshahi 18 Party Protest রাজসাহি ১৮ দলের হরতালসিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, রাজশাহীঃ রাজশাহী মহানগরীতে ১৮ দলের টানা ৬০ ঘণ্টা হরতালে বর্ণালীর মোড়ে একটি মোটর সাইকেলে আগুণ দিয়েছে হরতাল সমর্থকরা। এছাড়াও সকাল ৮টার দিকে নগরীতে পুলিশের সাথে পিকেটারদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল পৌনে ৯টার দিকে হরতালের সমর্থনে নগরীর বর্ণালীর মোড়ে মিছিল বের করে হরতাল সমর্থকরা। এসময় তারা ইনসেপ্টা কোম্পানীর এক বিক্রয় প্রতিনিধির মোটর সাইকেলে আগুন দেয় । পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে পিকেটাররা পালিয়ে যায়। এসময় সেখান থেকে দুই জনকে আটক করে পুলিশ।

সকাল ৮টার দিকে নগরীর হেতমখাঁ বিদ্যুৎ ভবনের সামনে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে হরতাল সমর্থকরা। খবর পেয়ে বোয়ালিয়া থানা পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে তারা। পাল্টা পুলিশ কয়েক রাউন্ড টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছুঁড়ে পিকেটারদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরে এ ঘটনায় জড়িতদের আটকে ওই এলাকায় অভিযানে নমে পুলিশ। তবে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এতে জড়িত কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি বলে বোয়ালিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান জিয়া জানান। এছাড়া এ ঘটনায় কেউ আহত হননি বলে জানান ওসি।

এর আগে সাড়ে ৬টার দিকে নগরীর উপশহর নিউ মার্কেট এলাকা থেকে হরতালের সমর্থনে একটি মিছিল বের করে নগর ১৮ দল। মিছিলটি নগরীর কাদিরগঞ্জ, মালোপাড়া, সাহেব বাজারসহ নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।

এতে নেতৃত্ব দেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও নগর ১৮ দলের আহবায়ক মিজানুর রহমান মিনু। এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মাসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও নগর ১৮ দলের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন, নগর জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারী এমাজ উদ্দিন মণ্ডল প্রমুখ।

মিছিল শেষে জোটের শীর্ষ নেতারা নগরীর মালোপাড়া কাবিল ম্যানসনে অবস্থিত বিএনপি কার্যালয়ে অবস্থান নেন। এছাড়া থানা ও ওয়ার্ড নেতারা কর্মীদের নিয়ে  ইউনিট কার্যালয়ে অবস্থান নিয়েছেন। বর্তমানে শান্তিপূর্ণ ভাবে তারা সেখানে অবস্থান করছেন। সকাল সাড়ে ৭টার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন কাজলা এলাকায় রাস্তার উপর টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে পিকেটিং করেন হরতাল সমর্থকরা। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হবার আগেই তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। এর পর থেকে নগরীতে বড় ধরনের কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।

এদিকে, হরতাল শুরুর আগেই ভোর সাড়ে ৫টার দিকে নগরীর কেন্দ্রস্থলে কঠোর অবস্থান নেয় পুলিশ। হরতালে নাশকতা এড়াতে নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে আর্মড পুলিশ ও র‌্যাব মোতায়েন করা হয়। এছাড়া নগরীতে বিজিবি সদস্যরা টহল দিচ্ছে।

সকাল থেকেই নগরীর সাহেব বাজার জিরো পয়েন্ট, মণিচত্বর, সোনাদীঘির মোড়, আলুপট্টি, কুমার পাড়া, লক্ষীপুর, গৌরহাঙ্গা রেলগেট, বিনোদপুর, তালাইমারী, ভদ্রা, কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বাস টার্মিনাল, কোর্ট, শালবাগান, নওদাপাড়াসহ বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানগুলোতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। বৃদ্ধি করা হয় তল্লাশি অভিযান ও গোয়েন্দা তৎপরতা।

অন্যদিকে, হরতালে নাশকতার আশংকায় নগরীর দোকান-পাট, ব্যাংক-বীমাসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রয়েছে। রাজশাহী কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে ছেড়ে যায়নি দূরপাল্লা ও আন্তঃজেলা রুটের কোন বাস। তবে সীমিত সংখ্যক রিকশা, অটো রিকশা, হিউম্যান হলারসহ হাল্কা যানবাহন চলছে। এছাড়া রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন থেকে আন্তঃনগর, মেইল  ও লোকাল ট্রেন ছেড়ে গেছে যথাসময়ে।এ ব্যাপারে রাজশাহী মহানগর পুলিশ (আরএমপি) কমিশনার ব্যারিস্টার মাহবুবুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, হরতালে নাশকতা এড়াতে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইন-শৃংখলা বাহিনী। নগরবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নগর জুড়ে নেওয়া হয়েছে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। জননিরাপত্তা বিঘিœত হয় এমন কর্মকাণ্ড কোন ভাবেই বরদাস্ত করা হবেনা বলে জানান তিনি।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ