রুবেলের হ্যাটট্রিকে বাংলাদেশের দুর্দান্ত জয়

rubel 2 রুবেল বাংলাদেশস্পোর্টস ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ চট্রগ্রাম টেস্টে সেঞ্চুরির পর হ্যাটট্রিক করেছিলেন সোহাগ গাজী। এতবড় কীর্তি না হলেও মিরপুরে প্রথম ওয়ানডেতে হ্যাটট্রিক করলেন পেসার রুবেল হোসেন। ২৪তম ওভারে পরপর তিন বলে তিনি ফেরান অ্যান্ডারসন, ম্যাককালাম ও নিশামকে। শাহাদাত হোসেন ও আব্দুর রাজ্জাকের পর তৃতীয় বাংলাদেশি হিসেবে ওয়ানডেতে হ্যাটট্রিক করলেন তিনি। এই হ্যাটট্রিকের পর ক্যারিয়ারে প্রথম ছয় উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে ডাকওয়ার্থ লুইস মেথডে ৪৩ রানের জয় এনে দেন পেসার রুবেলই। বাংলাদেশের ২৬৫ রানের জবাবে নিউজিল্যান্ড অলআউট হয় ২৯.৫ ওভারে ১৬২ রানে। বৃষ্টি আইনে ৩৩ ওভারে ২০৬ করতে হত তাদের। তিন বছর আগে ৪-০ ব্যবধানে নিউজিল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করার পর এবারের অভিযানটাও শুরু হল দুরন্ত জয়ে। ৫.৫ ওভারে ২৬ রানে ৬ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের জয়ের নায়ক রুবেল।

টোয়েন্টি টোয়েন্টিতে পরিণত হয়েছিল বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ডের প্রথম ওয়ানডে। বৃষ্টিতে একঘণ্টার বেশি ম্যাচ বন্ধ থাকায় নতুন লক্ষ্য দাঁড়ায় নিউজিল্যান্ডের সামনে। ১৩ ওভারে তাদের করতে হত ১২৪।

খেলা শুরুর পর ৩ ওভারে তান্ডবই চালান ফুলটন ও অ্যান্ডারসন। ৩ ওভারে দুজন তুলেন ৩৮ রান। নাসিরের এক ওভারে ৬-এর পর, মাহমুদুল্লাহর ওভারে ১৫ আর সোহাগ গাজীর করা ২৩তম ওভারে আসে ১৭ রান। শেষ ১০ ওভারে তাই দরকার ছিল ৮৬ রান। অর্থাৎ সহজ হয়ে যায় কঠিন টার্গেটটা। তবে পরের ওভারে অ্যান্ডারসনকে বোল্ড করে সেই ঝড় থামান রুবেল। ৩১ বলে ৩ বাউন্ডারি ৪ ছক্কায় অ্যান্ডারসন করেছিরেন ৪৬।

অ্যান্ডারসনকে ফেরানোর পরের বলে রুবেল ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে শামসুর রহমানের ক্যাচ বানিয়ে আউট করেন অধিনায়ক ব্রেন্ডন ম্যাককালামকেও। অর্থাৎ পরপর দুই বলে দুই উইকেট! তাই আবারও ম্যাচে ফিরে বাংলাদেশ। পরের বলে নিশামকেও মুশফিকের ক্যাচ বানিয়ে ফিরিয়ে হ্যাটট্রিকই করে বসেন রুবেল। ওয়ানডেতে এ নিয়ে ৫৩তম উইকেট নিলেন বাগেরহাটের এই পেসার।

রুবেলের হ্যাটট্রিকের পরও গ্রান্ট এলিয়ট ও নাথান ম্যাককালামের দৃঢ়তায় শেষ ৬ ওভারে নিউজিল্যান্ডের দরকার ছিল ৬৮ রান, হাতে ৪ উইকেট। ৪৬তম ওয়ানডেতে এলিয়ট পূরণ করেছেন ষষ্ঠ ফিফটি। এলিয়টের সঙ্গে নাথান ম্যাককালামের ২২ রানের জুটিটাও ভাঙ্গেন রুবেল। ১০ রান করে ম্যাককালাম ক্যাচ দেন মাশরাফিকে। এরপর শেষ ৩০ বলে দরকার ছিল ৬২ রান। ২৯তম ওভারে কোন রান না করা সাউদিকে ফেরান রাজ্জাক। তারপরও এলিয়টের দৃঢ়তায় শেষ ৪ ওভারে নিউজিল্যান্ডের দরকার ছিল ৪৬ রান, হাতে ২ উইকেট। তবে ভয়ংকর হয়ে ওঠা এলিয়টকে ফিরিয়ে গলার কাঁটাটা সরান সেই রুবেলই। ৭৭ বলে ৬ বাউন্ডারি ১ ছক্কায় ৭১ করে মাশরাফির দূর্দান্ত ক্যাচে পরিণত হন তিনি। এরপর উইলিয়ামসন আবসেন্ট হার্ট হওয়ায় অলআউট হয়ে যায় কিউইরা। বাংলাদেশের সেরা অস্ত্র স্পিনাররা কাজে আসছিলেন না মোটেও। শিশির আর বৃষ্টিতে বল গ্রিপ করতেও সমস্যা হচ্ছিল তাদের। তাই রাজ্জাক ৭ ওভারে দিয়ে বসেন ৪৫।

মাহমুদুল্লাহ ৪ ওভারে দেন ২৭।

 

ওয়েদারডটকমে মঙ্গলবারের আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে ০ শতাংশ। তারপরও ভারি বর্ষণ হয়েছে মিরপুরে। এই বৃষ্টিতে নিউজিল্যান্ডের ইনিংসের ব্যাপ্তি কমে দাঁড়িয়েছে ৩৩ ওভারে। ৩৩ ওভারে তাদের নতুন লক্ষ্য ২০৬ রান। ২০ ওভার শেষে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৩ উইকেটে ৮১।

একই সময়ে নিউজিল্যান্ডের সংগ্রহ ৩ উইকেটে ৮২। তারা ১ রানে এগিয়ে থাকলেও ডাকওয়ার্থ লুইস মেথডের হিসেবটা অন্যরকম। সেই হিসেবে জয়ের জন্য ২০ ওভার শেষে নিউজিল্যান্ডের দরকার ছিল ১০৭ রান (জনপ্রিয় ক্রিকেট ওয়েবসাইট ক্রিকইনফো প্রথমে হিসেব কষে জানিয়েছিল ১০৬)।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত ঘণ্টাখানেক অপেক্ষার পর আবারও নতুন টার্গেটে শুরু হয় খেলা।

২৬৫ রানের পুঁজি নিয়ে লড়াইয়ের শুরুটা ভালোই হয়েছিল বাংলাদেশের। দুই ওপেনানের পর সাবেক কিউই অধিনায়ক রস টেলরকেও ফিরিয়েছে তারা।  ২০ ওভারে ৩ উইকেটে ৮২ করার পর বৃষ্টির বাঁধায় বন্ধ হয় ম্যাচ।

ওপেনার রাদারফোর্ড ১ রান করেই বোল্ড হন সোহাগ গাজীর বলে। অন্য ওপেনার ডেভচিচ ২২ করে বোল্ড হন মাহমুদুল্লাহর বলে। ৪৩ রানে দু’ওপেনার ফেরার পর রস টেলর ও এলিয়টের জুটিটা থামে ১৭ রানেই। ৮ রান করা টেলরকে মুশফিকুর রহিমের ক্যাচ বানিয়ে ফেরান রুবেল হোসেন। ওয়ানডেতে এটা ৫০তম উইকেট রুবেলের। ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে মিরপুরে ওয়ানডে ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল রুবেলের। সেই মিরপুরেই তিনি পেলেন ৫০তম উইকেট।

এর আগে মুশফিকুর রহিমের ৯০ ও নাঈম ইসলামের ৮৪-তে শুরুর বিপর্যয় কাটিয়ে ২৬৫ করে বাংলাদেশ। ২৫ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর দক্ষ নাবিকের মতেই শক্ত হাতে দলের হাল ধরেন মুশফিক। নাঈমের সাথে চতুর্থ উইকেটে গড়েন ১৫৪ রানের জুটি। সেটাই বড় রানের ভিত গড়ে দেয় বাংলাদেশকে। তবে সেঞ্চুরি মিসের জ্বালায় ভুগেছেন দুজনই। মুশফিক ৯০ আর নাঈম ফিরেন ৮৪ করে।  দুজনের সেঞ্চুরি হলে স্কোরটা ২৯০-৩০০’ও হতে পারত বাংলাদেশের। শেষ দিকে রাজ্জাক ৮ বলে ১২ আর মাহমুদুল্লাহ ৩০ বলে করেন ২৯। জেমস নিশাম ৪২ রানে ৪টি আর টিম সাউদি নেন ৩৪ রানে ৩ উইকেট।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ