নির্দলীয় সরকার ছাড়া নির্বাচন নয়
সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এদেশের ৯০ ভাগ মানুষের দাবি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে আগামী নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। কাজেই দলীয় সরকারের অধীনে কিছুতেই নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। হরতালে নেতাকর্মী হত্যার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১৮ দল আয়োজিত সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।
সমাবেশে ১৮ দলীয় নেতাকর্মীদের মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে আগামী শনিবার আবারো সারা দেশে উপজেলা পর্যায়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করে মির্জা ফখরুল। সংলাপ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আলোচনা করতে হলে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থা নিয়েই আলোচনা করতে হবে। সরকার মুখে সংলাপ-সমঝোতার কথা বলেছে, আসলে তারা সংলাপ-সমঝোতা চায় না। তারা সংলাপের নামে নাটক করছে। তারা সংলাপের নামে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করছে।
ফোনালাপের রেকর্ড জনসম্মুখে প্রকাশকে আইনবিরোধী এবং অপরাধমূলক মন্তব্য করে তিনি বলেন, এ ধরনের রেকর্ড জনসম্মুখে প্রকাশের আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা উভয়পক্ষের অনুমতি নেওয়া প্রয়োজন ছিল। কিন্তু সেটি না করে নীতি-নৈতিকতা বিরোধী কাজ করেছে সরকার। তবে রেকর্ড প্রকাশে বিরোধী দলের জনপ্রিয়তা আরো বেড়েছে বলেও তিনি দাবি করেন। তথ্যমন্ত্রীর কাছে মির্জা ফখরুল জানতে চান, রেকর্ড প্রকাশ করে কার জনপ্রিয়তা বাড়াতে চেয়েছেন।
তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুকে উদ্দেশ্যে করে তিনি বলেন, আপনি কয়দিন আগে বলেছিলেন আপনাদের কাছে তথ্য আছে, তা প্রকাশ করা হবে। ফোনালাপ প্রকাশ করে কার উপকার করেছেন সরকারের নাকি জনগণের? নির্বাচন কমিশনকে উদ্দেশ্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, আরপিও সংশোধন করে আচরণবিধি তৈরি করে জনগণকে বিভ্রান্তি করবেন না। আপাতত এটি বন্ধ করে পকেটে রাখুন। আর নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আচরণবিধি তৈরি করুন। খন্দকার মোশাররফ হোসেন ১৮ দলের ডাকা হরতালে নেতাকর্মীদের ওপর সরকার হত্যা-মামলা-নির্যাতন করেছে বলে অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, সারাদেশের মানুষ ক্ষমতাসীনদের প্রতি ক্ষুব্ধ। নির্যাতন করে আন্দোলন ঠেকিয়ে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করা সম্ভব হবে না। সেটি করতে দেওয়া হবে না। দেশের ৯০ ভাগ মানুষ বিএনপির সঙ্গে আছে বলেও দাবি করেন তিনি।
পঞ্চদশ সংশোধনী সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক মন্তব্য করে মওদুদ আহমদ বলেন, সরকার সর্বদলীয় সরকারের কথা বলছে। সর্বদলীয় নয়, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে। আন্দোলন জোরদার হলে সরকারের মন্ত্রীরাই বলবে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে। তারা এ কথা বলতে বাধ্য হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। জমিরউদ্দিন সরকার বলেন, কারো সাথে আলোচনা না করে জনমত উপেক্ষা করে একদলীয় নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগ সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনী এনেছে। কারণ তারা জানে অবৈধভাবে ক্ষমতায় না আসতে পারলে তাদের অস্তিত্ব থাকবে না। আওয়ামী লীগ অলিখিতভাবে বাকশাল কায়েম করতে চাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
এম কে আনোয়ার বলেন, সরকার ক্ষমতার প্রথম থেকেই দেশে সংকট সৃষ্টি করে আসছে। পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে মৌলিক অধিকার হরণ করেছে। এ সংবিধান কোনো সংবিধানই নয়। ঢাকা মহানগর বিএনপির আহবায়ক সাদেক হোসেন খোকার সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, এম কে আনোয়ার, ড. আব্দুল মঈন খান, জমিরউদ্দিন সরকার, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, বিএনপি চেয়াপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু, যুগ্ম-মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান, বরকতউল্লাহ বুলু, ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, যুবদলের সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল।
শরিকদের মধ্যে বক্তব্য দেন জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য আমিরুল ইসলাম, সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, এনডিপি মহাসচিব আলমগীর মজুমদার, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান প্রমুখ।