সংবিধান অনুযায়ী আগামী নির্বাচন হবে

pm sheikh shekh hasina শেখ হাসিনাসিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ টেলিফোন ধরতেই যার ৭-৮ ঘণ্টা সময় লাগে তিনি(খালেদা জিয়া) দেশ চালাবেন কিভাবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আগামী নির্বাচন সংবিধান অনুসারেই হবে। এ নির্বাচন হবে সম্পূর্ণ  অবাধ, সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ। নির্বাচন কমিশন ওই নির্বাচন সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করবে। জনগণ ভোটের মালিক আমরা সে অধিকার নিশ্চিত করেছি। জনগণ স্বাধীনভাবে ভোট দেবে।বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর যতগুলি নির্বাচন হয়েছে সে সব নির্বাচন নিয়ে কোনো প্রশ্ন উঠেনি।কাজেই আগামী নির্বাচন নিয়েও কোনো প্রশ্ন উঠবে না।

তিনি বলেন, খালেদা জিয়া মুখে বলেন একটা আর করেন আরেকটা। তিনি শান্তির বাণী শুনান অথচ তার সরকারের আমলে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছিল। আমরা ক্ষমতায় এসে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দমন করেছি।বাংলাদেশকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছি।বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উন্নয়নের রোড ম্যাপ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।

বৃহস্পতিবার বিকালে গাজীপুরে চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ মাঠে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি বিরোধী দলীয় নেত্রীকে আলোচনার জন্য আহবান জানিয়েছিলাম। তিনি তার সহকারীর মাধ্যমে জবাব দিলেন রাত নয়টার আগে ফোন ধরতে পারবেন না। যার তৈরি হতে রাত নয়টা বাজে তিনি দেশ চালাবেন কিভাবে? তিনি আবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। আমি মোবাইলে তাকে আলোচনার অনুরোধ জানিয়ে হরতাল প্রত্যাহারের অনুরোধ জানালাম কিন্তু তিনি আমার অনুরোধ রাখলেন না। তিনি হরতাল প্রত্যাহার করলেন না। তিনি কথার বরখেলাপ করলেন। তিনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাধাগ্রস্ত করার জন্য এ হরতাল দিলেন। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেছিলেন। পরবর্তীতে জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসে সে বিচার বন্ধ করে দিয়েছিলেন। তিনি দেশের উন্নয়ন চান না। তিনি হাসিনা মুক্ত বাংলাদেশ চান। এ জন্যই তিনি ২০০৪ সালের ২১আগস্ট তার ছেলে ও মন্ত্রীকে দিয়ে গ্রেনেড হামলা চালালেন। আমাকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন। এ হামলায় আইভি রহমানসহ ২৪জন নেতাকর্মী প্রাণ হারিয়েছিল।

শেখ হাসিনা বলেন, বিরোধী দলীয় নেতা হরতালের নামে যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর জন্যে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে চান। হরতাল দিয়ে তিনি মানুষ খুন করছেন। গত হরতালে ২০টি প্রাণ ঝড়ে গেল। হরতাল না দিলে এতগুলো প্রাণ ঝড়ে যেত না। হরতালে দেশের শিল্প কলকারখানার উৎপাদন ব্যহত হয়ে অর্থনীতি পঙ্গু হয়ে যাচ্ছে। তিনি যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা করা জন্য যুদ্ধ ঘোষণা দিয়েছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় এলে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ মাথাচারা দিয়ে উঠে। তারা সন্ত্রাস, দুর্নীতি ছাড়া কিছুই দিতে পারে না। তারা লাশ উপহার দেয়, মানুষের হাত ও পায়ের রগ কাটে। অন্যের জমি জোরপূর্বক দখল করে মানুষের জীবনকে অতিষ্ট করে তুলে। পক্ষান্তরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশের উন্নতি হয়। মানুষ শান্তি পায়। আমরা খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করি। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করি। আমরা শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন করেছি।

তিনি আরো বলেন, আগামী ৪ নভেম্বর থেকে জেএসসি পরীক্ষা শুরু হবে। আমরা শুনতে পাচ্ছি বিএনপি নাকি ৪ তারিখ থেকে আবারো হরতাল ডাকবে। এ ভাবেই তিনি শিক্ষা ব্যবস্থাকে বাধাগ্রস্ত করতে চান। আমি অনুরোধ করছি পরীক্ষার সময় হরতাল দিবেন না। জানি না তিনি আমার কথা রাখবেন কিনা। তিনি ‘না’ ছাড়া কিছুই বলেন না। ছেলে মেয়েরা লেখা পড়া শিখে সু নাগরিক হোক এটা তিনি চান না। কারণ তিনি মেট্রিক পরীক্ষায় বাংলা, অংক ও উর্দু ছাড়া আর কোনো বিষয়ে পাশ করতে পারেননি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেলা তিনটার দিকে হেলিকপ্টার যোগে গাজীপুরে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের হেলিপ্যাডে এসে অবতরণ করেন। সেখান থেকে তিনি সড়ক পথে ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজ মাঠে জনসভায় যোগ দেন। প্রধানমন্ত্রী বেলা সোয়া তিনটার দিকে জনসভা মঞ্চে এসে পৌঁছেন। এসময় সমবেত হাজার হাজার নেতাকর্মী ও সমর্থকরা নানা স্লোগান দিয়ে তাকে শুভেচ্ছা জানান। প্রধানমন্ত্রীও হাতনেড়ে জনতাকে অভিনন্দন জানান।

মঞ্চের উঠার আগে প্রধানমন্ত্রী জনসভাস্থলের পাশে সুইচ টিপে ৩৭ হাজার ৪৮৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০টি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন, ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ফলক উন্মোচন করেন।

জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট আকম মোজাম্মেল হক এমপি’র সভাপতিত্বে জনসভায় আরো বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি, মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, অ্যাডভোকেট রহমত আলী এমপি, আখতারউজ্জামান, সিমিন হোসেন রিমি এমপি, জাহিদ আহসান রাসেল এমপি, জাহানারা বেগম এমপি, আহমদ হোসেন, এনামুল হক শামীম, ওমর ফারুক চৌধুরী, পংকজ দেবনাথ, নাজমা আক্তার এমপি, অধ্যাপিকা অপু উকিল এমপি, অ্যাডভোকেট সফিকুল ইসলাম বাবুল, আমানত হোসেন খান, প্রমুখ। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও টঙ্গী পৌরসভার সাবেক মেয়র অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খান সভা পরিচালনা করেন।

জনসভা শুরুর আগে থেকেই কালিয়াকৈর, শ্রীপুর, কালীগঞ্জ, কাপাসিয়া, টঙ্গীসহ আশপাশের এলাকা থেকে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা মিছিল ও বাদ্যযন্ত্র সহকারে সভাস্থলে এসে উপস্থিত হন। দুপুর দুইটার আগেই জনসভাস্থল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ