এখন ভোট হলে বিএনপি ৫৫%, আওয়ামী লীগ পাবে ২৮%
রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ এই মুহুর্তে বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন হলে বিএনপি পাবে ৫৫ শতাংশ ভোট আর আওয়ামী লীগ পাবে ২৮ শতাংশ ভোট। এছাড়া ৭৭ ভাগ মানুষই মনে করেন আগামী নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই হওয়া উচিত।
ডেইলি স্টার-এশিয়া ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত সর্বশেষ জনমত জরিপে জনগণের এমন মনোভাবই ফুটে উঠেছে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসের দ্বিতীয় এবং তৃতীয় সপ্তাহজুড়ে দেশের ১৪টি জেলার ১৪০০ মানুষের মতামতের ওপর ভিত্তি করে এ জরিপটি চালানো হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার কৃষি, বিদ্যুৎ সরবরাহ, সরকারি সেবা প্রদান এবং আইন-শৃংখলা পরিস্থিতিসহ অনেক ইস্যুতেই ভোটারদের কাছ থেকে সাধুবাদ পেয়েছে। তবে নির্বাচনে ভোটের প্রশ্নে ৫৫ ভাগ মানুষ বলেছেন, তারা বিএনপিকে ভোট দেবেন। আর মাত্র ২৮ ভাগ মানুষ বলেছেন, তারা আওয়ামী লীগকে ভোট দেবেন। বেশ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ অবশ্য মনে করেন দেশ সঠিক পথেই এগোচ্ছে। জরিপের ফলাফল গভীরভাবে পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ প্রকৃতপক্ষে সরকার পরিচালনা এবং দুর্নীতির মতো বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে মানুষের আস্থা হারিয়েছে। আর এ কারণেই জনগণ তাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বিএনপির প্রতি ঝুঁকে পড়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা থেকে সরে আসাই আওয়ামী লীগ সরকারের জন্য বড় নেতিবাচক প্রভাব বলে জরিপে উঠে এসেছে।
জরিপের ৭৭ ভাগ উত্তরদাতা মনে করছেন, আগামী নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত। এ ইস্যুটিই আওয়ামী লীগের ভোটার কমিয়ে দিতে সবচেয়ে বড় উপাদান হিসেবে কাজ করেছে। দেশে বিরূপ রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি হওয়া সত্ত্বেও ৬২ শতাংশ জনগণ মনে করেন আগামী নির্বাচন সব দলের অংশগ্রহণে শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হবে। তবে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, ৩৫ শতাংশ মানুষ বড় দু’টি দলের পক্ষ থেকে বেড়িয়ে এসেছেন বলে জরিপের ফলাফলে মনে হয়েছে। তারা তৃতীয় একটি রাজনৈতিক দলকে শক্তিশালী হিসেবে দেখতে চান।
জরিপে অংশ গ্রহণকারী ৫৫ শতাংশ জনগণ বলেছেন, সরকারের প্রতি তাদের আস্থা রয়েছে। মেয়াদ পূর্ণ করা একটি সরকারের জন্য এটি একটি উল্লেখযোগ্য দিক। তবে ৪৫ শতাংশ মানুষ বলেছেন, সরকারের প্রতি তাদের আস্থা কম। দেশ কোনদিকে যাচ্ছে জরিপের এমন প্রশ্নের জবাবে ৪৭ ভাগ উত্তরদাতা বলেছেন, দেশ সঠিক পথেই এগোচ্ছে বলে তারা মনে করেন। আর ৪৪ শতাংশ উত্তর দাতা বলেছেন, তারা সেটা মনে করেন না। এ প্রশ্নে গত বছর ডিসেম্বর পরিচালিত জরিপের ফলাফলও একই ছিল। মুদ্রাস্ফীতিকে দেশের জন্য একটি চলমান সমস্যা হিসেবে সবাই বিবেচনা করছেন। জরিপে অংশ নেওয়া ৮০ ভাগ মানুষই এ ব্যাপারে অভিযোগ করেছেন। তবে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নতিতে জনগণ সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। ৬২ শতাংশ মানুষ বলেছেন, দেশে বিদ্যুৎ পরিস্থিতির অগ্রগতি হয়েছে। ৮০ ভাগ উত্তর দাতা বলেছেন, ডিজেল এবং সারের মতো কৃষিকাজের সহায়ক সামগ্রী সহজলভ্য হয়েছে। ফলে ৪৪ ভাগ মানুষই বলেছেন, দেশের কৃষি কার্যক্রমের অগ্রগতি হয়েছে। পক্ষান্তরে ১৬ ভাগ এর বিপক্ষে মত দিয়েছেন। মানবাধিকার প্রশ্নে ৫০ ভাগ উত্তরদাতাই বলেছেন যে, সরকারের শাসনকালে বিচারবর্হিভুত হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। অবশ্য ৩৭ ভাগ উত্তরদাতা এতে দ্বিমত প্রকাশ করেছেন। জরিপের ফলাফলে মানবাধিকার পরিস্থিতির অগ্রগতি হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়েছে। তবে ৪৩ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন বিরোধীদলীয় সদস্য, রাজনৈতিক কর্মী, শ্রমঅধিকার কর্মী এবং সাংবাদিকদের গুম বা ভয়ভীতি প্রদর্শনের ঘটনা বেড়েছে। আর ৩৪ শতাংশ মনে করেন এ ধরণের ঘটনা হ্রাস পেয়েছে। অতএব, জনগণের উপলব্ধি হচ্ছে মানবাধিকার লংঘন করে বাংলাদেশে রাজনৈতিক হয়রানি অব্যাহত রয়েছে। দেশের আইন শৃংখলা পরিস্থিতির প্রশ্নেও সরকারের সফলতা বেশ উল্লেখযোগ্য। জরিপে অংশগ্রহণকারী ৬২ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, অপরাধ তৎপরতা এখন কম (৪৭%) বা প্রায় একই রকম (১৫%) রয়েছে। তবে দুর্নীতির প্রশ্নে সরকারের সমর্থন বেশ নেমে গেছে। উত্তরদাতাদের মধ্যে ৫০ ভাগই বলেছেন, পূর্ববর্তী নির্বাচিত সরকারের তুলনায় বর্তমান সরকারের সময়ে জাতীয় পর্যায়ে দুর্নীতি বেড়েছে।