ব্যবসায়ীদের সংলাপ প্রস্তাবে খালেদার ইতিবাচক সাড়া
সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ দুই দলের মহাসচিব পর্যায়ের সংলাপের জন্য ব্যবসায়ী নেতারা যে প্রস্তাব দিয়েছেন বিরোধী দলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া তাকে স্বাগত জানিয়েছেন।
শনিবার রাত পৌনে নয়টায় বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠন এফবিসিসিআই’র সভাপতি কাজী আকরাম হোসেনের নেতৃত্বে ব্যবসায়ী নেতারা বিরোধী দলীয় নেতা ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠকে বসেন।
প্রায় আড়াই ঘন্টাব্যাপি এই বৈঠক শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে এফবিসিসিআই সভাপতি কাজী আকরাম হোসেন বলেন, “ব্যবসায়ীদের একত্রিত করা কঠিন ব্যাপার। আমরা চাই দেশে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকুক। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে জাতীয় নির্বাচন বিষয়ে লেভেল প্লেইং ফিল্ড চায় ব্যবসায়ীরা।”
তিনি বলেন, “বিরোধী দলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচনকালীণ সরকার বিষয়ে নির্দলীয় সরকারের একটি রূপরেখা দিয়েছেন।অন্য দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও একটি সর্বদলীয় সরকারের রূপরেখা দিয়েছেন।আমরা বলেছি শর্তবিহীন সংলাপের কথা। আমরা বলেছি নি:শর্তভাবে ঐক্যের জন্য সংকট নিরসনে সংলাপে বসতে পারবেন কি-না? তাতে বিরোধী দলীয় নেতা স্বাগত জানিয়েছেন।”
কাজী আকরাম বলেন, “ব্যবসায়ীরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও আলোচনায় বসবে।বিরাজমান সংকট নিরসনে নি:শর্ত সংলাপে বসতে দুই দল রাজি হলে দু’একদিনের মধ্যে সংলাপ শুরু হতে পারে।”
ব্যবসায়ীদের উদ্যোগের কারণে বিরোধী জোট আগামী ৬০ঘন্টার হরতাল প্রত্যাহার করবে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে কাজী আকরাম বলেন, “এ প্রসঙ্গে বিরোধী দলীয় নেতা আলোচনার উদ্যোগ চালিয়ে যেতে বলেছেন। আলোচনা হলে তো হরতাল প্রত্যাহারের বিষয় আসতেই পারে।”
দুই দলের মহাসচিব-সাধারণ সম্পাদক পর্যায়ে সংলাপের জন্য ব্যবসায়ীরা মধ্যস্থতা করছেন কিম্বা করবেন কি-না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “মধ্যস্থতা বলেন, ভ্রাতৃত্ব বলেন উদ্যোগ তো নিতেই হবে।”
এ সময় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ব্যবসায়ী নেতা আব্দুল আউয়াল মিন্টু বলেন, “দুই দলের মহাসচিব পর্যায়ে সংলাপের প্রস্তাবকে বিরোধী দলীয় নেতা স্বাগত জানিয়েছেন।”
বিএনপি চেয়ারপারসেরন উপদেষ্টা ও ব্যবসায়ী নেতা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “জাতীয় নির্বাচনকালীণ নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে ১৮দলীয় জোট অনড় অবস্থানে রয়েছে। দুই দলের মহাসচিব পর্যায়ের সংলাপের প্রস্তাবে বিরোধী দলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন।”
তিনি বলেন,“ দুই দল দেশের মালিক না, দেশের মালিক জনগণ। তাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী দেশে সুষ্ঠু রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি করা দরকার।”
আলোচনা আর হরতাল এক সঙ্গে চলবে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আলোচনার সঙ্গে হরতাল কর্মসূচির কোনো সম্পর্ক নেই।”
ব্রিফিং শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে একান্ত আলাপে ব্যবসায়ী নেতা ও এফবিসিসিআই এর সাবেক সভাপতি আনিসুল হক বলেন, বৈঠকে বেগম খালেদা জিয়া প্রায় ৪৬ মিনিট বক্তব্য দিয়েছেন। দুই দলের মহাসচিব পর্যায়ে আলোচনার প্রস্তাবকে তিনি স্বাগত জানিয়েছেন। নি:শর্ত সংলাপের প্রস্তাব দিয়েছেন কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “নি:শর্ত সংলাপের ব্যাপারে বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন,“সংলাপের উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে যান।”
আনিসুল হক আরো বলেন, “ব্যাবসায়ীরা বেগম খালেদা জিয়াকে হরতাল প্রত্যাহারের কথা বললে উল্টো তিনি ব্যবসায়ীদের কাছে বিকল্প কর্মসূচি চেয়েছেন। তবে ব্যবসায়ীরা বিরোধী দলীয় নেতাকে বিকল্প কোনো কর্মসূচির কথা বলতে পারেননি।
খালেদা জিয়া ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে বলেছে, আপনারা হরতাল কর্মসূচি না দেয়ার কথা বলেন, আমরাও চাই না হরতাল দিতে। অথচ আমরা জনগণের যে দাবি নিয়ে আন্দোলন করছি সে ব্যাপারে আপনাদের কোনো ভূমিকা নেই।
এর আগে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে ব্যবসায়ীদের ৫০ সদস্যর একটি প্রতিনিধি দল বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়ার সঙ্গে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রায় আড়াই ঘন্টা রুদ্ধদ্বার মতবিনিময় করেন।
এসময় এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন, এ.কে আজাদ, আনিসুল হক, এম এ কাশেম ও ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুন, এফবিসিসিআইয়ের সহ-সভাপতি মনোয়ারা হাকিম আলী, সহ-সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন, সাবেক সহ-সভাপতি আবুল কাশেম আহমেদ, মোহাম্মদ আলী, জসিম উদ্দিন, দেওয়ান সুলতান আহমেদ, কামাল উদ্দিন আহমেদ, এফবিসিসিআই’র পরিচালক আবদুল হক, আনোয়ার সাদাত সরকার, বজলুর রহমান, মীর নিজাম উদ্দিন আহমেদ, সাফকাত হায়দার, মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু, আনোয়ার হোসেন, আবু মোতালেব, কোহিনুর ইসলাম, প্রবীর কুমার সাহা, আবদুর রাজ্জাক, জালাল উদ্দিন, একে এম শাহিদ রেজা, শফিকুল ইসলাম ভরসা, এম এ মোমেন, আবদুল ওয়াহেদ, জালাল উদ্দিন আহমেদ ইয়ামীন, হারুণ উর রশিদ, কে এম আখতারুজ্জামান, তাবারাকুল তোসাদ্দেক হোসেন খান টিটু, শাহজালাল মজুমদার, ইঞ্জিনিয়ার মোহাব্বত উল্লাহ, আবদুল মোক্তাদির, কাজী শাহনেয়াজ, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি সবুর খান, বিজিএমইএ’র আতিকুল ইসলাম, বিটিএমএ’র সভাপতি জাহাঙ্গীর আলামিন উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির পক্ষে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য এমকে আনোয়ার, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ড. ওসমান ফারুক, আবদুল আউয়াল মিন্টু, যুগ্ম মহাসচিব বরকত উল্লাহ বুলু, উপ-অর্থ বিষয়ক সম্পাদক এস এম ফজলুল হক।