আশরাফ-মুঈনুদ্দীনের মৃত্যুদণ্ড
সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের দায়ে আলবদর নেতা আশরাফুজ্জামান খান ও চৌধুরী মুঈনুদ্দীনের ফাঁসির রায় ঘোষণা করেন আদালত। মানবতাবিরোধী অপরাধের ১১টি অভিযোগের সবগুলোতেই দুই আসামির সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হওয়ায় আমৃত্যু ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকার করার নির্দেশ দেন বিচারক।
রোববার বেলা ১২টা ৫০ মিনিটে ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে গঠিত তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ রায় ঘোষণা করেন।
ট্রাইব্যুনাল-২ এর এজলাস কক্ষে জায়গা কম থাকায় মামলাটির রায় ঘোষণার জন্য বিচারপতিরা ট্রাইব্যুনাল-১ এর এজলাস কক্ষে বসে রায় পাঠ করেন।
অভিযুক্তরা বিদেশে অবস্থান করায় এজলাস কক্ষে আসামির কাঠগড়া খালি ছিল।
এর আগে সকাল ১১টার সময় চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারপতিরা এজলাস কক্ষে বসেন এবং পাঁচ মিনিট পর রায় পাঠ শুরু করেন।
রায় ঘোষণার আগে চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা এ মামলা শুনানির সময় খুব সতর্ক ছিলাম। প্রসিকিউশন ও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা মামলায় সাক্ষীগ্রহণ ও যুক্তিতর্ক শেষ করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের ট্রাইব্যুনালের ষষ্ঠ রায় এটি। মোট ১৫৪ পৃষ্ঠার ৫৫৩ প্যারায় এ রায়। তবে সংক্ষিপ্ত রায়ে মোট ৪১ পৃষ্ঠা পাঠ করা হয়েছে। এটি উভয় ট্রাইব্যুনালের নবম রায়।’
চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘এ রায়ের সার্টিফাইড কপির একটি প্রসিকিউশন ও একটি পদাধিকার বলে অ্যাটর্নি জেনারেল পাবেন। তবে আসামিরা আত্মসমর্পন করলে আবেদন সাপেক্ষে তারাও রায়ের কপি পাবেন।’
এরপর ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে প্রথম অংশ পাঠ করেন সদস্য বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম। তারপর সদস্য বিচারপতি মো. মুজিবুর রহমান মিয়া রায়ের দ্বিতীয় অংশ পড়েন। সবশেষ চেয়ারম্যান রায়ের শেষ অংশসহ দণ্ডাদেশ ঘোষণা করেন। পরে তারা এজলাস কক্ষ ত্যাগ করেন।
রায় পড়াকালে চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপুসহ ট্রাইব্যুনালের অন্যান্য প্রসিকিউটর এবং ভিকটিম পরিবারের সদস্যরা, প্রজন্ম একাত্তরের নেতৃবৃন্দ ও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সংগঠন এবং ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
অপরদিকে আসামিপক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আব্দুস শুক্কুর খান ও সালমা হাই টুনি উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে গত ৩১ সেপ্টেম্বর চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ মামলার রায় ঘোষণার জন্য রোববার দিন ধার্য করেন। এক মাস দুই দিন পর আজ রায় ঘোষণা করা হলো।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর মামলার সব কার্যক্রম শেষে যে কোনো দিন রায় ঘোষণা করা হবে বলে অপেক্ষমান (সিএভিতে) রাখেন ট্রাইব্যুনাল। ওই দিন আদালতে আশরাফুজ্জামান ও মুঈনুদ্দীনের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন শেষ করেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী সালমা হাই টুনি ও আব্দুস শুক্কুর খান।
এরপর রাষ্ট্রপক্ষে পাল্টা যুক্তি ও আইনি পয়েন্ট উপস্থাপন করেন প্রসিকিউটর সাহিদুর রহমান।
গত ২২ সেপ্টেম্বর এ মামলায় প্রসিকিউশনের সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। পলাতক এ দুই অভিযুক্তের পক্ষে কোনো সাক্ষী না থাকায় ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে এ মামলায় প্রসিকিউশন যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করে ২৫ সেপ্টেম্বর শেষ করে।
চৌধুরী মুঈনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামানের বিরুদ্ধে গত ২৪ জুন ১১টি অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল-২ এ অভিযোগ গঠন হয়।
গত ২ মে দুই জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিলেন ট্রাইব্যুনাল। দেশে না পাওয়ায় তাদের হাজির হতে দুইটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশও হয়েছিল।
বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরও হাজির না হওয়ায় তাদের অনুপস্থিতিতেই বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।