আবারো হোয়াইটওয়াশ হল নিউজিল্যান্ড

রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ বাংলাদেশের জন্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে জয় আর ‘হ্যালির ধূমকেতু’ না। প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড হলে সেটি বরং সন্ধ্যাতারা, নিত্য দেখা মেলে যার। কিউইদের বিপক্ষে সর্বশেষ ছয় ওয়ানডেতেই যে জিতেছে বাংলাদেশ! টানা সপ্তম ম্যাচ জিতে টানা দুই সিরিজে বাংলাওয়াশের প্রত্যাশা তাই বাড়াবাড়ি নয় মোটেও। শেষ পর্যন্ত সেই বাংলাওয়াশই হল কিউইরা। নিউজিল্যান্ডের ৩০৭ রানের চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশ পেরিয়ে যায় ৪ বল হাতে রেখেই। ৪ উইকেটের জয়ে তাই বাংলাওয়াশ হল কিউইরা।

৩০০ বা এর বেশি রান তাড়া করে বাংলাদেশের ওয়ানডে ইতিহাসে জয় ছিল একটাই। ২০০৯ সালে বুলাওয়েতে জিম্বাবুয়ের ৩১২ তাড়া করে জিতেছিল বাংলাদেশ। এটা ৩শ’র বেশি তাড়া করে দ্বিতীয় জয়। শামসুর, নাঈমদের দৃঢ়তায় ৩০৭ পাহাড় মনে হয়নি বাংলাদেশের জন্য।

জয়ের জন্য শেষ ১৫ ওভারে দরকার ছিল ১০০ রান হাতে ৬ উইকেট। শেষ ৬০ বলে লক্ষ্যটা কমে দাঁড়ায় ৬৮ রানে হাতে ৬ উইকেট। আর শেষ ৩০ বলে দরকার পড়ে ৩৫, ২৪ বলে ২৫, ১৮ বলে ১৯ তখনও হাতে ৫ উইকেট। ৪৮তম ওভারে ১৬ করে মাহমুদুল্লাহ ফিরলেও শেষ ১২ বলে দরকার পড়ে ১২ আর শেষ ৬ বলে ৩।

এই টোয়েন্টি টোয়েন্টির যুগে ফতুল্লার মত ব্যাটিং উইকেটে খুবই সম্ভব ছিল সমীকরণটা। সেই সমীকরণটাই মিলিয়ে ইতিহাস গড়ল মুশফিকের দল।

ম্যাচ মাঠে গড়ানোর আগে চাওয়া ছিল একটাই, তিন বছর আগের মতো এবারও নিউজিল্যান্ডকে ‘বাংলাওয়াশ’ করা নয় কেন! প্রেরণার এই ফুলকি উড়ে বেড়াচ্ছিল বাংলাদেশ ক্যাম্পে। স্মৃতির পুঁথি থেকে নেওয়া পুরনো সেই উজ্জীবনীর মন্ত্রে নতুন করে দীক্ষিত মুশফিকুর রহিমের দল। কিউইরা বাংলাওয়াশ হল তাতেই।

হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর মিশনে রোববার ফতুল্লায় অনুষ্ঠিত তৃতীয় ওয়ানডেতে নিউজিল্যান্ড করেছিল ৫ উইকেটে ৩০৭ রান। জবাবে দূর্দান্তই শুরু করেছিল বাংলাদেশ। তামিমের না থাকাটা বুঝতেই দেননি দুই ওপেনার শামসুর রহমান ও জিয়াউর রহমান। ৭.৩ ওভারেই দুজন যোগ করেন ৬১। ২০ বলে ২ বাউন্ডারি ২ ছক্কায় ২২ করা জিয়াকে মিলনের ক্যাচ বানিয়ে জুটিটা ভাঙ্গেন ম্যাকক্লেনঘান। দ্বিতীয় উইকেটে মমিনুল ও শামসুরের ৬৫ রানের জুটি দৃঢ় ভিত এনে দেয় বাংলাদেশকে। সেই ভিতে আঘাত লাগে পরপর দুওভারে মমিনুল ও অধিনায়ক মুশফিকুর ফেরায়। ৩৩ বলে ৪ বাউন্ডারিতে ৩২ করে মমিনুল আয়েশী শট নিতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন বোলার ডেভচিচকে। মুশফিকুর ২ করে স্কয়ার লেগে টেলরকে ক্যাচ দেন নাথান ম্যাককালামের বলে।

ওপেনার শামসুর রহমানের দূঢ়তায় ২৫ ওভার শেষে ৩ উইকেটে বাংলাদেশের রান ছিল ১৫০।

চতুর্থ উইকেটে নাঈমের সাথে ৭৫ রানের জুটি গড়ে শামসুর ম্যাচেই রেখেছিলেন বাংলাদেশকে। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে ৫টি আর লিস্ট-এ ম্যাচে ১ সেঞ্চুরি আছে শামসুরের। ২৫ বছর বয়সী কুমিল্লার এই তরুণ ওয়ানডে অভিষেকে করেছিলেন ২৫ রান। তবে দ্বিতীয় ম্যাচে সেঞ্চুরির সুবাস পেয়েও ফিরলেন ৪ রান দূরে থাকতে। অ্যান্ডারসনের অফস্টাম্পের বাইরের বল তাড়া করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে রঞ্চির গ্লাভসবন্দী হন তিনি। তাতে শেষ হয় ১০৭ বলে ৭ বাউন্ডারি ৪ ছক্কায় ৯৬ রানের ইনিংসটি।

শামসুর ফেরার পর নাঈম ও নাসির পঞ্চম উইকেটে গড়েছিলেন ৫০ রানের জুটি। তাতে ম্যাচে ভালোভাবেই ছিল বাংলাদেশ। জুটিটা ভাঙ্গে ৪৩তম ওভারে নাঈম দ্বিতীয় রান নিতে গিয়ে রান আউট হলে। ৭৪ বলে ৫ বাউন্ডারিতে ৬৩ করেছিলেন নাঈম। মাহমুদুল্লাহ ১৬ করে ফিরলেও নাসির ৪৪ রানে অপরাজিত থেকে দূর্দান্ত জয় এনে দেন বাংলাদেশকে।

টস জিতে নিউজিল্যান্ডকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়ে শুরুতে কিছুটা চাপে ছিল বাংলাদেশ। দ্রুত ৩ উইকেট ফিরিয়ে সেই চাপটা কাটলেও চতুর্থ উইকেটে টেলর ও মুনরোর ১২০ রানের জুটিতে বড় স্কোরের ভিত পায় কিউইরা। সেই ভিতে দাঁড়িয়ে হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর মিশনে তারা করেছে ৫ উইকেটে ৩০৭ রান। এ নিয়ে চতুর্থবার ওয়ানডেতে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৩০০ বা এর বেশি রানের স্কোর গড়ল কিউইরা।

৪৫ ওভার শেষে নিউজিল্যান্ডের সংগ্রহ ছিল ৫ উইকেটে ২৩৪।

শেষ পাঁচ ওভারের রুদ্রমূর্তিতে স্কোরটা পৌঁছে ৩০৭-এ। এই তান্ডবের নেতৃত্বে ছিলেন টেলর। ক্যারিয়ারের অষ্টম ওয়ানডে সেঞ্চুরি পূরণ করে তিনি অপরাজিত ছিলেন ১০৭ রানে। ৯৩ বলে ৯ বাউন্ডারি ৩ ছক্কায় ইনিংসটি সাজিয়েছিলেন তিনি।

৩৮ বলে ৪৬ করা ডেভচিচকে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে স্বস্তি এনে দেন মাহমুদুল্লাহ। লেগ স্টাম্পের বল সুইপ করতে গিয়ে শর্ট লেগে রাজ্জাকের হাতে ধরা পড়েন এই ওপেনার। ওয়ান ডাউনে নামা এলিয়ট রাজ্জাকের বলে স্লড় শট নিতে গিয়ে মিড অনে ক্যাচ দেন সোহাগ গাজীকে। ৭৩ বলে ৪৩ করা অন্য ওপেনার লাথাম উইকেটের পেছনে মুশফিকের ক্যাচে পরিণত হন রুবেলের বলে। চতুর্থ উইকেটে ১২০ রানের জুটি গড়ে ক্রমেই ভয়ংকর হয়ে উঠছিলেন টেলর ও মুনরো। ৭৭ বলে ৭ বাউন্ডারি ২ ছক্কায় ৮৫ করা মুনরোকে ফিরিয়ে জুটিটা ভাঙ্গেন মাহমুদুল্লাহ। এরপর দ্রুত অ্যান্ডারসনকেও ফেরান সোহগ গাজী। ১ রান করে অ্যান্ডারসন ক্যাচ দেন জিয়াউরকে। ৩ উইকেটে ২৩১ থেকে ৫ উইকেটে ২৩২ রানে পরিণত হয় নিউজিল্যান্ড।

সোহাগ গাজীর ৪৭তম ওভারে ১৯ রান নিয়ে চাপটা কাটান টেলর। ওভারটিতে টানা তিন ছক্কার পাশাপাশি একটা সিঙ্গেলস নিয়েছিলেন তিনি। এরপর পূরণ করেন ৮ম ওয়ানডে সেঞ্চুরি। টেলরের সাথে ১৩ রানে অপরাজিত ছিলেন রঞ্চি। মাশরাফি ৮ ওভারে ৭৩ রান দিয়ে ছিলেন উইকেটশূণ্য। বাংলাদেশের সফল বোলার মাহমুদুল্লাহ ৩৬ রানে নেন ২ উইকেট। সোহাগ গাজী ৬৭ রানে নিয়েছেন ১ উইকেট। নাসির উইকেট না পেলেও ১০ ওভারে দিয়েছেন মাত্র ৩৩ রান।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ