হরতালে পুলিশের জমজমাট বাণিজ্য

সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ হরতাল বা বিরোধীদলের কর্মসূচি হলেই পুলিশের আটক বাণিজ্য বেড়ে যায় কয়েকগুণ। পিকেটার, নাশকতার সঙ্গে জড়িতসহ নানা অজুহাতে অথবা সন্দেহভাজন হিসেবে নিরীহ মানুষ আটক করে একটা সময় থানায় আটক রাখে। পরে উৎকোচ নিয়ে ছেড়ে দেয়ার ঘটনা ঘটছে অহরহ। ভুক্তভোগীরা জানান, বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের গত সপ্তাহের টানা ৬০ ঘণ্টা হরতালের সময় থেকে বেপরোয়া হয়ে ওঠে পুলিশের কিছু সদস্য। এর আগে জামায়াত-বিএনপির অবরোধেও পুলিশের হাতে হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হয় নিরপরাধ পথচারীরা। হোটেল রেস্তোরাঁ থেকে অনেককে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সরকারবিরোধী কর্মসূচি হলেই বিশেষ করে অবরোধ বা হরতালের আগে পুলিশের আটক বাণিজ্য বেড়ে যায় কয়েকগুণ। রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক আছে এমন অভিযোগ এনে অনেক নিরপরাধ ও নিরীহ মানুষকে আটক করে কতিপয় অসাধু পুলিশ সদস্য উৎকোচ আদায় করে আবার ছেড়ে দেয়। যারা টাকা-পয়সা দিতে অস্বীকার করেন তাদের পরিণতি হয় ভয়াবহ।

সাংবাদিকদের সঙ্গে পুলিশের রুঢ় আচরণ : সংবাদ সংগ্রহের জন্য বিএনপির অফিসে ঢুকতে চাইলে সাংবাদিকদের আটকে দেয়া হচ্ছে। এমনকি থানায় আটকের বিষয়টি জানতে চাইলেও তারা সঠিক তথ্য দিতে চাচ্ছে না। তাছাড়া সাংবাদিকদের সঙ্গে ধমকের সহিত কথা বলছে কতিপয় অসাধু পুলিশ। তবে বেশিরভাগ গোপালগঞ্জের নাম ভাঙায়।

আমাদের অর্থনীতির এক সাংবাদিক বলেন, ভাই দেশে কি কোনো আইনকানুন নাই? পুলিশ সাংবাদিকদের সঙ্গে এমন রুঢ় আচরণ কেন করছেন? একটি ইংরেজি দৈনিকের এক সাংবাদিক পল্টন এলাকা দিয়ে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির দিকে যাচ্ছিলেন। পুলিশ তার মোটরসাইকেল থামিয়ে পরিচয় জানতে চায়। পরিচয় দেয়ার পরও এক পুলিশ সদস্য ওই সাংবাদিকের পকেটে হাত ঢুকিয়ে দেয়। এ নিয়ে মঙ্গলবার দুপুরে পল্টন থানার ডিউটি অফিসার আবু জাফরের সঙ্গে ওই সাংবাদিকের বেশ কিছুক্ষণ বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে তিনি  ‘সরি’ বললে সাংবাদিকরা বিষয়টি মেনে নেন।

ডিএমপির পল্টন, শাহবাগ, যাত্রাবাড়ী, রমনা, বংশাল, সবুজবাগ, মুগদা কোতোয়ালিসহ বিভিন্ন থানা ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র। ওইসব থানা পুলিশের হাতে নিরিহ প্রায় শতাধিক লোক আটক রয়েছে। যারা কোনো ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত নন।

পল্টন থানা : কাকরাইল থেকে পল্টনে যাচ্ছিলেন পথচারি আশিক। তাকে পল্টন থানার সিভিল টিম ধরে নিয়ে আসে। তিনি বিরক্তি ও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমি বিএনপি অফিসের সামনে দিয়ে যাইতে ছিলাম। আমাকে জোর করে গাড়িতে উঠানো হয়। এখন আবার ডিউটি অফিসারের পিছনে খালি জায়গায় বসিয়ে রাখা হয়েছে। এদিকে মঙ্গলবার সকালে পল্টন আওয়ামী লীগ নেতা খোরশেদ আলম বাবুলের পরিচিত তিনজনকে অটক করেছে পুলিশ। তার সঙ্গে দফারফা করে একপর্যায়ে এনায়েত ও লালন নামের দুই যুবককে পুলিশ ছেড়ে দেয়।

বংশাল থানা : মঙ্গলবার সকালে বংশাল থানায় গিয়ে দেখা গেছে, ডিউটি অফিসারের পাশে চার পাঁচজন যুবক বসা। ডিউটি অফিসার বলেন, এদের সন্দেহজনকভাবে এসআই মান্নান আটক করেছেন। আটককৃতদের খোঁজখবর নিয়ে ছেড়ে দেয়া হবে তাদের আপনজন কারো জিম্মায়। নাছির নামের একজন বলেন, আমি হাঁটতে হাঁটতে গুলিস্তানের দিকে আমার কর্মস্থলে যাইতে ছিলাম। হঠাৎ পিছন থেকে স্যার আমাকে ডাক দিলে আমি দাঁড়াই। আমাকে তাদের গাড়িতে উঠতে বলে। এক পর্যায়ে থানায় এনে এখানে বসিয়ে রাখে এবং বলে আমার আপনজন কেউ আসলে ছেড়ে দিবে।

সবুজবাগ থানাঃ বেলা ১২ টার দিকে আকস্মিকভাবে পুলিশ ধড়-পাকড় অভিজান চালায়। রাস্তায় এবং হোটেল-রেস্তোরা থেকে ১৫-২০ জন যুবককে আটক করে পুলিশ। এবিসি নিউজ বিডির একজন রিপোর্টার সেখানে উপস্থিত ছিলেন। কিছুক্ষন পরই আটককৃত একজনের স্ত্রীকে দেখা যায় ছোটাছুটি করছেন। পরে তার থেকে খোঁজ নিয়ে জানা যায় বিএনপির ডাকা গত তিন দিনের হরতালের সময় তার দেবরকেও আটক করেছিলো সবুজবাগ থানার পুলিশ। পরে ২৫ হাজার টাকার বিনিময়ে তাকে মুক্তি দেয় পুলিশ। তিনি বলেন “আমরা গরিব মানুষ বার বার এত টাকা কোথায় পাব? এবার কত টাকা চায় আল্লাহ্‌ই জানে।”

প্রত্যক্ষদর্শী এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রতিবেদককে জানান, মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর পল্টন থানা হাজতে অন্তত অর্ধশত লোককে দেখা গেছে। তাদের অধিকাংশই আটক হয়েছেন বিএনপি অফিসের আশপাশের এলাকা থেকে। তাদের বেশিরভাগই নিরপরাধ পথচারী বলে জানা গেছে। তবে সে রাতেই তাদের অনেকে ছাড়া পেয়ে যান টাকার বিনিময়ে।

এবিষয়ে ডিএমপির কমিশনার বেনজির আহমেদ বলেন, হরতালে বা অবরোধে পুলিশ সাধারণ মানুষকে হয়রানি করে কথাটি সঠিক নয়। অহেতুক নিরাপরাধ ব্যক্তিকে যদি কোনো পুলিশ আটক করে বা টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেয় এ ধরনের কোনো সত্যতা পাওয়া গেলে অবশ্যই ওই পুলিশের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ