মুখ থুবড়ে পড়ছে সর্বদলীয় সরকারের ধারণা

সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি  নিউজ বিডি, ঢাকাঃ সময় দ্রুত গড়িয়ে যাচ্ছে। সমঝোতার কোনো লক্ষণ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। সরকার ও বিরোধী দল উভয়ই অনড় অবস্থানে রয়েছে। অথচ সংবিধান অনুযায়ী ২৭ অক্টোবর থেকে শুরু করে আগামী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। ইতোমধ্যে ১২ দিন পার হয়ে গেছে, হাতে আছে আর মাত্র ৭৮ দিন। সর্বনিম্ন ৪৫ দিনের মাথায় নির্বাচন করতেই হবে।

যদিও বাংলাদেশে সফররত মার্কিন কংগ্রেসম্যান স্টিভ চ্যাবট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে আলোচনার পর সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে সংলাপের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। কিন্তু মাঠের বাস্তবতা হচ্ছে-আলোচনা-সমঝোতা সুদূর পরাহত। বরং বিরোধী দল একের পর এক আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করছে। আর এ বাস্তবতার আলোকে সরকার ছোট ছোট দল নিয়ে ’৯৬ সালের বেগম জিয়ার মত সাজানো এক তরফা নির্বাচনের জন্য আলাপ-আলোচনা শুরু করেছে। ইতোমধ্যে যে সব দলের সঙ্গে আলোচনার সূত্রপাত করেছে সরকার সে সব দলের মধ্যে রয়েছে, গণফোরাম, বিকল্প ধারা, নাগরিক ঐক্য ইত্যাদি আরো কিছু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দল। অথচ এ সব দল আগে থেকেই বলে আসছে,তারা সব দলের অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে না। বিকল্প ধারা তো আগাগোড়া নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক  সরকারের দাবি জানিয়ে আসছে। গণফোরামও বলে আসছে সব দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে নির্বাচন অনুষ্ঠানের। এছাড়া বাম জোটের নেতারাও একই সুরে বারবার সব দলের অংশগ্রহণের কথা বলে আসছেন। ফলে সরকারের উদ্যোগ কতটা সফল হবে তা নিয়ে ইতোমধ্যে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। আর কোনো রকম সেটা করলেও শেষ পযর্ন্ত তা গ্রহণযোগ্য না তামাশার নির্বাচনে পরিণত হবে সেটা দেখার জন্য  আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা মনে করছেন।

শেষতক সরকার চেষ্টা করতে পারে, মহাজোটের শরীক জাতীয় পার্টিসহ কয়েকটি দলকে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে ঠেলে দিয়ে একটা নির্বাচন অনুষ্ঠানের। কিন্তু সমস্যা দেখা দিতে পারে জাতীয় পার্টিতে। কারণ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ যদি দিল্লীর আনুগত্য প্রদর্শন করে সরকারের পরিকল্পিত নীল নকশার নির্বাচনে অংশ নেন; তাহলে দলটি আবার ভাঙ্গনের মুখে পড়বে। সেটা সামাল দেওয়া এরশাদের পক্ষে কঠিন হবে। কারণ এরশাদের দলের বেশিরভাগ নেতা-কর্মী তত্ত্বাবধাযক সরকারের অধীনে নির্বাচনের পক্ষে।

এদিকে বর্তমান বিরাজমান পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সর্বদলীয় সরকারের ধারণাও মুখ থুবড়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে। কারণ তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুতে বিরোধী দলগুলো যে অবস্থান নিয়েছে। এছাড়া এক তরফা নির্বাচনের ব্যাপারে অন্যান্য দলের যে অবস্থান পরিলক্ষিত হচ্ছে তাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সর্বদলীয় সরকারের ধারণা শেষ পর্যন্ত দলীয় কিংবা মহজোটের কযেকটি দলের সরকারে পরিণত হবে। কারণ পার্লামেন্টে সদস্য আছে এমন দলগুলো নিয়ে সর্বদলীয় সরকারের ধারণা যদি প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকে ; তাহলে সেটা হতে পারে বড়জোর মহাজোটের চারটি দলের সমন্বয়ে একটি সরকার। আর সে চারটি দল হচ্ছে- আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, ওর্য়াকার্স পার্টি ও জাসদ ইনু। এ পরিস্থিতিতে দশ সদস্যের একটি ক্যাবিনেট গঠন করতে শেখ হাসিনাকে দলীয় এমপিদেরই দ্বারস্ত হতে হবে। আর সেটা শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক তামাশায় পরিণত হবে বলে পর্যবেক্ষকেরা মনে করছেন।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ