নিম্নতম মজুরি ৫৩০০ টাকা মেনে নিলেন মালিকেরা
সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি পাঁচ হাজার ৩০০ টাকা দিতে রাজি হয়েছে তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ।
বুধবার রাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গণভবনে এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত মেনে নেন পোশাকশিল্পের মালিকেরা।
প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন আশ্বাসের ভিত্তিতেই এ মজুরি প্রদানে বিজিএমইএ রাজি হয়েছে।
বুধবার রাতে বিজিএমইএ এর সাবেক সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী বিষয়টি প্রাইমনিউজকে নিশ্চিত করেছেন।
বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানানো হবে বলে জানান তিনি।
৫৩০০ টাকার প্রস্তাব মেনে নিতে পোশাকশ্রমিকেরা আন্দোলন করছেন।এর আগে নিম্নতম মজুরি বোর্ড পোশাকশ্রমিকদের জন্য নিম্নতম বেতন ৫৩০০ টাকা প্রস্তাব করেছিল। মালিকেরা তখন তা মানেননি। বুধবার রাতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর তারা তা মেনে নিলেন।
গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন শ্রমমন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু, শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ান, শ্রমসচিব মিকাইল শিফার, বিজিএমইএর সভাপতি আতিকুল ইসলাম, বিজিএমইএর পরিচালক আরশাদ জামাল, সহসভাপতি রিয়াজ-বিন-মাহমুদ, বিকেএমইএর সভাপতি সেলিম ওসমান ও ভাইস প্রেসিডেন্ট আসলাম সানি।
বিজিএমইএর পরিচালক আরশাদ জামাল বলেন, বাস্তবতার নিরিখে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান তারা মেনে নিয়েছেন।
সাধারণত ৫ বছর পর পর নিম্নতম মজুরি পুনর্নির্ধারণ করার নিয়ম থাকলেও বাংলাদেশে কখনোই তা ঠিকভাবে অনুসরণ করা হয়নি।
এর আগে সর্বশেষ ২০১০ সালের ২৭ জুলাই পোশাক শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি ৩ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়।
প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলারের এই শিল্পে ৩৬ লাখের বেশি শ্রমিক জড়িত, যাদের অধিকাংশই নারী।
বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হলেও আগের মজুরি কাঠামোই সব কারখানায় ঠিকমতো অনুসরণ করা হয় না বলেও অভিযোগ রয়েছে।
গত বছরের নভেম্বরে তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ড এবং গত এপ্রিলে সাভারে রানা প্লাজা ধসের পর বিশ্বব্যাপী গণমাধ্যমে বাংলাদেশের পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশ ও শ্রমিকদের স্বল্প মজুরির বিষয়টি নতুন করে সামনে চলে আসে।
বিদেশি বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে বাংলাদেশি পোশাক বর্জনেরও হুমকি দেয়ার প্রেক্ষাপটে গত জুনে পোশাক খাতের বেতন পুননির্ধারণের জন্য নতুন মজুরি বোর্ড ঘোষণা করে সরকার।
সাবেক জেলা জজ এ কে রায়ের নেতৃত্বে এই বোর্ডে মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধি ছাড়াও নিরপেক্ষ সদস্য হিসাবে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. কামাল উদ্দীন।
গত ৪ নভেম্বর মজুরি বোর্ডের বৈঠকে পোশাক শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি ৫ হাজার ৩শ টাকা নির্ধারিত হয়। শ্রমিক পক্ষের সদস্য সিরাজুল ইসলাম রনি ঘোষণা প্রস্তাবে স্বাক্ষর করেন। তবে মালিকপক্ষ এ ঘোষণার বিরোধিতা করে এবং মালিকপক্ষের আশরাফুজ্জামান দীপু এবং বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহীউদ্দিন স্বাক্ষর না করে বৈঠকস্থল ত্যাগ করেন।
বোর্ডের ঘোষণা অনুযায়ী, শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরির মধ্যে বেসিক বেতন হবে ৩ হাজার ২০০ টাকা, বাসাভাড়া ১ হাজার ২৮০ টাকা, চিকিৎসা খরচ ধরা হয়েছে ৩২০ টাকা, যাতায়াত ২০০ টাকা। অন্যান্য খরচ ধরা হয়েছে ৩০০ টাকা।
শ্রমিক সংগঠনগুলোও এ মজুরি প্রত্যাখ্যান করেছে। ন্যূনতম মজুরি ৮ হাজার টাকা করার দাবি জানিয়ে ওই দিন সকালে ১২ শ্রমিক সংগঠন সংবাদ সম্মেলন করে। দাবিতে নানা কর্মসূচিরও ঘোষণা দেয়।
এরপর মজুরিবোর্ডের সিদ্ধান্ত গ্যাজেট আকারে প্রকাশ করা হলে শ্রমিকরা তা বাস্তবায়নের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। এ আন্দোলন সহিংস রূপ নিয়ে বাধ্য হয়ে বিজিএমইএ বুধবার আশুলিয়া এলাকার সব কারখানা বন্ধ ঘোষণা করে।