একমাত্র কেমোথেরাপিই হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ
এম সাইফুর রহমান, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আইনজীবী ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলামকে গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে তার মুক্তি দাবি করেছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। বুধবার রাত সাড়ে ৭টায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ এ দাবি জানান।
রিজভী বলেন, আমরা মনে করি ফখরুলকে গ্রেফতার করা সরকারের নগ্ন প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ। শুধু রাজনৈতিক প্রতিপক্ষই নয়, প্রতিপক্ষের আইনজীবীকে গ্রেফতার করে সরকার তার অশুভ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে সব বাধাকে নির্মূল করতে চাচ্ছে। এর আগেও ফখরুলকে গ্রেফতারের উদ্যোগ নিয়েছিল অভিযোগ করে তিনি বলেন, তার অফিসের কম্পিউটারসহ গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র পুলিশ সে সময় জব্দ করে। আমি সরকারের হিংসাশ্রয়ী আচরণের শিকার ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলামের অবিলম্বে মুক্তির জোর দাবি জানাচ্ছি।
ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশিদ হাবিবকে গ্রেফতার করার পর দ্বিতীয় দফায় তাকে চার দিনের রিমান্ডে নেয়ার নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, ধারাবাহিক নির্যাতনের এটি একটি অমানবিক দৃষ্টান্ত। এটি সরকারের প্রতিহিংসা। তরুণদের শিহরিত করার জন্য, ভয় পাইয়ে দেওয়ার জন্য পুলিশ এই নির্যাতনের কৌশল বেছে নিয়েছে। হাবিবকে গ্রেফতার ও রিমান্ড মঞ্জুরের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে তার রিমান্ড বাতিল করে নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন তিনি।
রিজভী আহমেদ বলেন, আাওয়ামী সরকারের বর্তমান শাসনামল পৃথিবীর যেকোনো স্বৈরাচারীর নিষ্ঠুরতার ইতিহাসকেও হার মানায়। কেবলমাত্র বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের ও গ্রেফতার নয়, সরকারের পুলিশ বাহিনী রিমান্ডে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতনের পর তাদের হত্যা করছে। ঢাকা মহানগর ৬২ নং ওয়ার্ড বিএনপির সহ-সভাপতি শাহাবুদ্দিনকে গ্রেফতার এবং তার ওপর নির্দয়ভাবে নির্যাতন চালানো, পরে জেলহাজতে তার মৃত্যু সবই বিরোধী দল বিনাশের ধারাবাহিক ঘটনা। সরকারি বাহিনী কর্তৃক শাহাবুদ্দিনকে হত্যার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান তিনি।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, সরকারের ইচ্ছা পূরণে সর্বত্র আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দুর্বৃত্তপনার মাত্রা এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে, দেশটি ভদ্রলোকদের জন্য অবাসযোগ্য হয়ে উঠেছে। এই সরকারের দুর্বৃত্তপনার কারণেই আইন-প্রশাসনিক-বিচারিক ব্যবস্থা ভয়াবহ রকম ভেঙে পড়েছে।
সর্বদলীয় সরকারের উছিলায় আবারো বাকশাল চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, শেখ হাসিনা জনগণের ক্ষমতাকে গুম করে প্রভুদের ক্ষমতায় নিজের অধীনে নির্বাচন করে দীর্ঘ সময়ব্যাপী ক্ষমতায় থাকার আনন্দে যা ইচ্ছে তাই করছে। বিদ্যমান সংকটকে নিরসন না করে তিনি ধমকের জোরে বিরোধী কণ্ঠকে দমাতে চাচ্ছেন। প্রতিদিন সরকারি সুযোগ-সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন জনসভায় বিরোধী দল এবং বিরোধীদলীয় নেতার বিরুদ্ধে লাগামহীন কুৎসা, মিথ্যাচার ও শাস্তি দেয়ার হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন। আর এসব দাম্ভিকতা তিনি দেখাচ্ছেন এ কারণে যে বাংলার মসনদ তার পৈত্রিক সম্পত্তি।’
তিনি বলেন, বাংলার মসনদে স্বৈরাচারীরা কখনোই টিকতে পারেনি। দেশের বর্তমান সংকট কুইনাইন দিয়ে সারবে না। একমাত্র কেমোথেরাপিই হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ। ইতিহাসে নিজের নাম কিছুটা টিকিয়ে রাখতে হলে এখনই নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে পুনঃসংযোজন করে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, বিশ্বাসযোগ্য ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে সহযোগিতা করুন। সরকারের নিপীড়ন-নির্যাতনের বিরুদ্ধে দেশবাসীকে চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সামিল হয়ে বর্তমান দুঃশাসনের বিরুদ্ধে কঠিন প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।