ইসি কর্মকর্তাদের আন্দোলনের মুখে ডিসিদের অধীনেই নির্বাচন
সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ আসন্ন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও রির্টানিং অফিসারের দায়িত্বে থাকবেন সরকারের খাস আমলা জেলা প্রশাসকেরা। সরকারের এমন ইচ্ছা বাস্ততবায়নে ইসির অ্যাকশন পরিকল্পনা এগিয়ে চলছে। এনিয়ে নির্বাচন কমিশনারদের সাথে কর্মকর্তাদের চলছে তুমুল দ্বন্দ্ব। এ দ্বন্দের ফলে আসন্ন সংসদ নির্বাচন হুমকির মুখে পড়তে পারে। তবুও নির্বাচন কালীন সময়ে ডিসিদের দায়িত্বেই নির্বাচন পরিচালনার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছেন কমিশনাররা।
নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের তথ্য মতে ডিসিদের অধীনে নির্বাচন করতে চায় সরকার। এ ইচ্ছা বাস্তবায়নের জন্য নির্বাচনকালীন ৬ লাখ ৪০ হাজার ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগের জন্য জেলা নির্বাচন অফিসারদের বাদ দিয়ে ডিসিদের নির্দেশ দিয়ে তাদের নামের তালিকা চলতি মাসের ২৫ নভেম্বরের মধ্যে পাঠাতে বলা হয়েছে। যা ইতোমধ্যেই কমিশনের নির্দেশ মোতাবেক আসা শুরু করেছে। এ অবস্থার মধ্যেই আগামী ২৫ নভেম্বর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে পারে ইসি।
ইসি সচিবালয়ের এ সিদ্ধান্তকে চরম অপমানজনক মনে করছেন নির্বাচন কর্মকর্তারা। তারা বলছেন নির্বাচন পরিচালনা করার যোগ্যতা থাকার পরও তাদেরকে দীর্ঘদিন ধরে এ দায়িত্ব থেকে সরিয়ে রাখা হয়েছে। ইসির এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন সারা দেশের জেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা।
তাদের দাবি এবার আসন্ন সংসদ নির্বাচনে ১০০ ভাগ রির্টানিং অফিসারের দায়িত্বে না রাখতে চাইলেও ৫০ ভাগ দায়িত্ব তাদেরকে দিতে হবে। ২৬ নভেম্বরের মধ্যে এ দাবি না মানলে ০১ ডিসেম্বর থেকে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সার্ভিশেষ অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন। তাদের এ দাবির সাথে একমত পোষণ করে আসছেন দেশের বিশিষ্ট নাগরিক, সুশীল সমাজ, দুর্নীতি বিরোধী সংগঠন টিআইবি ও সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন। তারা এও বলছেন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের রির্টানিং অফিসারের দায়িত্ব দিলে নির্বাচনে দলীয় প্রভাব কমে আসবে।
সম্প্রতি এবিসি নিউজ বিডির সাথে একই কথা জানিয়ে ইলেকশন কমিশন সার্ভিসেস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও নির্বাচন কমিশনের যুগ্ম সচিব জেসমিন টুলি বলেন, নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তাদের রির্টানিং অফিসার করা যৌক্তিক।
তিনি আরও বলেন, সারা বছর জীবন বাজি রেখে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেন নির্বাচন কর্মকর্তারা। আর নির্বাচনের সময় রির্টানিং অফিসাসের দায়িত্ব পালন করেন সরকারের অনুগত খাস আমলারা। এর ফলে অনেক সময় নির্বাচনে বড় ধরনের কারচুপি ও অনিয়ম করার সুযোগ পান ডিসিরা। এ নিয়ে চরম ভাবমূর্তি সঙ্কটে পড়েন ইসির কর্মকর্তারা। তাই সারাদেশ থেকে ইসির নিজস্ব নির্বাচন কর্মকর্তাদের রির্টানিং অফিসারের দায়িত্বে নিয়োগ দেয়া হোক। তা না হলে ০১ ডিসেম্বর হতে টানা আন্দোলনে যাবেন ইসির কর্মকর্তারা।
জেসমিন টুলি এবিসি নিউজ বিডিকে আরও জানান, ইসি সচিবালয় তাদের সিদ্ধান্ত না পাল্টালে ১ ডিসেম্বর হতে টানা আন্দোলনের ফলে আসন্ন সংসদ নির্বাচন হুমকির মুখে পড়বে।
অপরদিকে, ডিসিদের রির্টানিং অফিসারের দায়িত্ব দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ বলেন, আগের রীতি অনুসারেই তাদেরকে এ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এতো বড় একটি নির্বাচনে ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের রির্টানিংয়ের দায়িত্বে দেওয়া অযৌক্তিক। ডিসিরাই তাদের অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে এ দায়িত্ব পালনে সঠিক কর্মকর্তা। তাছাড়া নির্বাচন চলাকীন কোনো ধরণের হট্টগোল হলে তারাই আইনগতভাবে যথাসময়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারবেন। কেননা তারা সংশ্লিষ্ট জেলার ডিসির দায়িত্বেও নিয়োজিত রয়েছেন। কিন্তু জেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা সরাসরি কোনো ব্যবস্থা নিতে পারবেন না।
নির্বাচনের বিষয়ে জানতে চাইলে কমিশন কর্মকর্তারা বলেন, বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী সংসদের মেয়াদপূর্তি হবে আগামী ২৫ জানুয়ারি। এ সময়ের পূর্ববর্তী ৩ মাসের মধ্যে নির্বাচনের আয়োজনে বাধ্য থাকায় আগামী বছরের ২৪ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। কারণ বর্তমান সংসদ সদস্যরা ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত বহাল থাকবেন। তাই এর আগে নব নির্বাচিত এমপিদের শপথ করানোর কোনো সুযোগ নেই। মূলত এ কারণে নির্বাচন কমিশন ডিসেম্বরের নির্বাচন দিতে নারাজ। তাই জানুয়ারির প্রথম অথবা দ্বিতীয় সপ্তাহে নির্বাচন দিয়ে ২৫ জানুয়ারির পর নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথ করানোর চিন্তা করছে কমিশন । কারণ একই সময় দুটি সংসদ বহাল থাকা সাংঘর্ষিক হয়ে দাঁড়াবে। তাই বিকল্প পথ হিসেবে দেরি করে ফলাফলের গেজেট প্রকাশের পথে এগুচ্ছে কমিশন।
নির্বাচন কমিশনার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) জাবেদ আলী বলেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনে নির্বাচন কমিশনের ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় রয়েছে। আমরাও মেয়াদপূর্তির ৯০ দিন আগেই নির্বাচন দিতে প্রস্তুত। যা ইতোমধ্যেই রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করা হয়েছে। তিনি (রাষ্ট্রপতি) আমাদেরকে কমিশনের সংবিধান অনুযায়ী তফসিল ঘোষণা করে ভোট গ্রহণের তারিখ দেশবাসিকে জানাতে বলেছেন। আমরা সেই পথেই এগুচ্ছি।
আগামী দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন সরকারের নির্দেশ অনুসারে অ্যাকশন পরিকল্পনায় এগিয়ে যাচ্ছে কিনা জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) জাবেদ আলী বলেন, কারো পরিকল্পনা মোতাবেক নয়, ইসি তার নিজস্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী এগুচ্ছে।
আসন্ন সংসদ নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব হিসেবে কারা থাকবে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজ বলেন, আগের নিয়ম অনুসারেই রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্বে থাকবেন জেলা প্রশাসকরা।
নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব ফরহাদ হোসেন বলেন, আগের নীতি অনুসারেই জেলা অফিসারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সারাদেশ থেকে ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের নামের তালিকা পাঠাতে। সেই অনুসারে নামের তালিকা কমিশনে আসছে। ডিসিরাই রির্টানিং অফিসারের দায়িত্বে থাকবেন।
তিনি জানান, চলতি সপ্তাহের সোমবার (২৫ তারিখ) তফসিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই ভোট গ্রহণের সম্ভাবনা রয়েছে।