সহিংস অবরোধে নিহত ৭ জন

এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ ১৮ দলের ডাকা অবরোধের চতুর্থ দিন মঙ্গলবার সারা দেশে সহিংসতায় সাতজন নিহত হয়েছে। এরমধ্যে পাঁচজন মারা গেছে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে।  অন্যজন পুলিশের ধাওয়া খেয়ে পুকুরে পড়ে মারা গেছেন। এছাড়া  গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন অন্তত অর্ধশতাধিক। এর মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে। বিস্তারিত আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদে-

চাঁদপুর  জেলার সদর উপজেলার জোড়পুকুরপাড় এলাকায় ১৮ দলের নেতাকর্মীর সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় পুলিশের গুলিতে ছাত্রদলকর্মী রতন (২৫) ও স্কুলছাত্র সিয়াম (১৬)  নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরও অন্তত ২০ জন।

নিহত রতন চাঁদপুর সরকারি কলেজের মাস্টার্সের ছাত্র। তিনি শহরের গুনরাজদী এলাকার বাসিন্দা। সিয়াম আলামিন একাডেমির এসএসসি পরীক্ষার্থী। সে ট্রাক রোডের মজিবুর রহমানের ছেলে।

জানা গেছে, সকালে ১৮ দলের নেতাকর্মীরা দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে একটি মিছিল বের করে। মিছিলটি জোড়পুকুর পাড় এলাকায় আসলে পুলিশ বাধা দিলে সংঘর্ষ বাধে। এ সময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গুলি ছোড়ে। এতে ঘটনাস্থলে ছাত্রদলকর্মী রতন ও সদর হাসপাতালে নেওয়া পর স্কুলছাত্র সিয়াম মারা যায়। আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুব মোরশেদ জানান, বিএনপি ও জামায়াত-শিবির কর্মীরা পুলিশের ওপর ককটেল নিক্ষেপ করে। তাই পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে ও আত্মরক্ষার্থে গুলি ছুড়েছে।

সাতক্ষীরা জেলার দেবহাটা উপজেলার সখীপুর বাজারে জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশ ও বিজিবি সদস্যদের সংঘর্ষ  হয়েছে। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে দুই শিবিরকর্মী নিহত হয়েছেন। এছাড়া পাঁচজন গুলিবিদ্ধসহ ২০ জন আহত হয়েছেন। সকাল সাড়ে ৬টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত শিবিরকর্মী হোসেন আলী ও আরিজুল ইসলাম দেবহাটা সখীপুর এলাকার বাসিন্দা বলে জানিয়েছে।

সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ সুপার মোল্লা জাহাঙ্গীর জানান, ভোর থেকে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা নাশকতা সৃষ্টির লক্ষ্যে গাছ কেটে সাতক্ষীরা-কালীগঞ্জ সড়ক অবরোধের চেষ্টা করে। এসময় পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা তাদের ছত্রভঙ্গ করতে ধাওয়া করে। এ সময় অস্ত্রে সজ্জিত অবরোধকারীরা পুলিশ ও বিজিবি সদস্যদের পাল্টা ধাওয়া করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে তারা টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা ফাঁকা গুলি করলে গুলিবিদ্ধ হয়ে দুই শিবিরকর্মী ঘটনাস্থলে নিহত হন।

চট্টগ্রামের  সীতাকুণ্ডের বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নের শুকলালহাট এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পিকেটারদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে গুলিতে এক বিএনপি কর্মী নিহত হয়েছেন। সোমবার রাত ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।নিহতের নাম রাসেল (২৬) ।

তিনি পেশায় একজন কাঠমিস্ত্রি, তার বাড়ি উপজেলার মুরাদপুর ইউনিয়নের হাসনাবাদ গ্রামে।

স্থানীয়রা জানান,  রাসেল সোমবার রাতে কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে পুলিশের সঙ্গে পিকেটারদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মাঝখানে পড়ে পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত হন। তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান।

এ ঘটনার দায় অস্বীকার করে সীতাকুণ্ড থানার ওসি (তদন্ত) আমিনুল ইসলাম জানান, বাড়বকুণ্ড এলাকায় পিকেটাররা সড়ক অবরোধ করে গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের চেষ্টা করে। এসময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বেধে যায়। পিকেটাররা পুলিশকে লক্ষ্য করে হাতবোমা ও গুলি ছুঁড়লে পুলিশও পাল্টা প্রতিরোধ করে। এসময় একজন মারা গেছে বলে শুনেছি।’

চট্টগ্রাম নগরীতে সহিংস হরতালে প্রাণ গেল এক লরি চালকের। ইপিজেড থানার সল্টগোলা ক্রসিং এলাকায় পিকেটারদের ছোড়া ককটেলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে মাহমুদ (২৫) নামে ওই লরি চালক নিহত হন। এ ঘটনায় ২ হেলপার আহত হন। মঙ্গলবার যুবদল ও ছাত্রদলের ডাকা আধাবেলা হরতালের শুরুতেই এ ঘটনা ঘটে।

ইপিজেড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল মনসুর জানান, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে মালবাহী কনটেইনার লরিটি মঙ্গলবার ভোরে একটি বেসরকারি আইসিডিতে যাচ্ছিল। সল্টগোলা ক্রসিং এলাকায় আসলে পিকেটাররা লরিটিকে লক্ষ্য করে  কয়েকটি ককটেল নিক্ষেপ করে। এসময় লরিটি দ্রুত চালাতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে ধাক্কা খেলে চালক মাহমুদ মারা যান। এঘটনায় তার ২ সহযোগী আহত হন। লাশ উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। আহতদের ওই হাসপাতালেই চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

নোয়াখালী  দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সদরের পৌরসভা দত্তেরহাট বাজারে পুলিশের ধাওয়া খেয়ে পুকুরে পড়ে বিএনপিকর্মী আবদুস সালাম নিহত হয়েছেন। এতে গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন ২০ জন। আহতদের নোয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও স্বাস্থ কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। নিহত বিএনপিকর্মী আব্দুস সালাম (৬০) উপজেলার গোপাই এলাকার হানির মিয়ার ছেলে।

সদর পৌরসভা দক্ষিণসংলগ্ন তিনকোনা পুকুর পাড়ে এ ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ৫০ রাউন্ড শটগানের গুলি, ২শ রাউন্ড রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ১৮ দলের হরতালে চতুর্থ দিন দুপুর ১২টার দিকে অবরোধের সমর্থনে নেতাকর্মীরা মিছিল পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় অবরোধকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। এতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ শটগানের গুলি, রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করেছে। এসময় আবদুস সালাম গুলিবিদ্ধ হন এবং পুলিশের ধাওয়ায় সদর পৌরসভা দক্ষিণসংলগ্ন তিনকোনা পুকুরে পড়ে যান। এতে তিনি ঘটনাস্থলেই নিহত হন। এ ঘটনায় আরও ২০জন গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন বলে জানান তারা।

নোয়াখালী সুধারাম মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশারোফ হোসেন তরফদার জানান, নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নোয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এনিয়ে জেলা শহর মাইজদিতে উত্তেজনা বিরাজ করছে বলে জানান ওসি।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ