হাসিনার হাতে গণতন্ত্র নিরাপদ নয়

সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ বিকল্প ধারার সভাপতি ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেছেন, ‘শেখ হাসিনার হাতে শুধু জনগণ নয় রাষ্ট্র, গণতন্ত্র ও ধর্ম কিছুই নিরাপদ নয়।’

বুধবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে ‘নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সকল দলের অংশগ্রহণে গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন, ঘোষিত তফসিল বাতিল এবং পেশাজীবী ও জাতীয় নেতৃবৃন্দসহ সকল নেতাকর্মীর নিঃশর্ত মুক্তির দাবী’ শীর্ষক এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ এই সমাবেশের আয়োজন করে।

বি. চৌধুরী বলেন, শেখ হাসিনার অঙ্গুলি হেলনে দেশে আগুন জ্বলছে। জনগণের দাবীর কোনো গুরুত্ব তিনি দেন না। প্রতিটি ধর্মের মানুষ এই সরকারের কাছে লাঞ্ছিত ও চরমভাবে নির্যাতিত হয়েছে।

চলমান আন্দোলনে ঢাকা থেকে সারাদেশ বিচ্ছিন্ন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘প্রবীণ সাংবাদিক এ বি এম মূসা হাসিনার সরকারকে ‘গণপ্রজাতন্ত্রী ঢাকার সরকার’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। কারণ রাজধানী ঢাকার বাইরে দেশের আর কোথাও সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণই নেই। আন্দোলনে দেশের মানুষের একাত্মতার কারণেই তা সম্ভব হয়েছে। আর শেখ হাসিনার প্রতি জনগণ এতটাই ক্ষুব্ধ যে প্রয়োজনে আরও রক্ত দিতে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

তিনি বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে নিজের একক ইচ্ছায় সংবিধান পরিবর্তন করেছেন শেখ হাসিনা। তিনি সংবিধান থেকে একচুলও নড়বেন না, সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেনকে তিনি ধমক দেন। স্বৈরাচারী মনোভাবের এ এক অভূতপূর্ব নিদর্শন। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ তার একদলীয় সরকার গঠনের ষড়যন্ত্রের কথা বেশ ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছে। আর বাংলার মাটি, দুর্জয় ঘাঁটি- একথা শেখ হাসিনা উপলব্ধি করতে পারেননি।

 

প্রধানমন্ত্রী সংবিধান পরিবর্তন না করলে এত আন্দোলন হতো না উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনগণ মাঠে নামলে তাদের ঠেকাবে এমন কোনো শক্তি নেই। আর প্রধানমন্ত্রী জনগণের সামনে নতি স্বীকার না করলে তারা অচিরেই মাঠে নামবে।

মাহমুদুর রহমানের গ্রেফতার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অত্যাচারের প্রতিবাদ করায় প্রধানমন্ত্রী পেশাজীবীদের নেতা মাহমুদুর রহমানের ওপর অকথ্য নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছেন বহুদিন ধরে। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে তার মুক্তি দাবি করছি।

এরশাদকে ‘রাজনীতির কলংকিত অধ্যায়’ হিসেবে আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, এরশাদ, ইনু, মেনন নৌকা প্রতীকের অধীনে নির্বাচন করছেন। নিঃসন্দেহে এটা একতরফা একদলীয় নির্বাচন। এখন এরশাদ যদি নির্বাচন প্রত্যাহার করে তাহলে কার্যত সব শেষ হাসিনার।

প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, জনগণের সামনে নতি স্বীকার করে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দিন, আমরা সব দল সানন্দে অংশগ্রহণ করব, জনগণও আনন্দের সাথে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিতে যাবে। কিন্তু তা না হলে জনগণের মাধ্যমে যে বিদ্রোহ শুরু হবে তা ঠেকানোর ক্ষমতা আপনার নেই। আপনি ভুলে যাবেন না, সবার আগে দেশ আর দেশের মানুষ, আপনি বা আপনার ক্ষমতার লোভ নয়।

প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন, আপনার সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমেই সকল সংঘাতের শুরু। ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিন। ইতিহাস অত্যন্ত নির্মম। ইতিহাস কোনো ভুল ক্ষমা করে না।

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে)-এর একাংশের সভাপতি রুহুল আমীন গাজীর সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব:) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিন, বিএফইউজে’র মহাসচিব শওকত মাহমুদ, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি কবি আবদুল হাই শিকদার ও সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, প্রেসক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক কাদের গণি চৌধুরী, পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব ও ডক্টরস্‌ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)-এর মহাসচিব অধ্যাপক ডা: এ জেড এম জাহিদ হোসেন ও যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক ডা: রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, জাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. খন্দকার মুস্তাহিদুর রহমান, ঢাকা বার আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট সানা উল্লাহ মিয়া প্রমুখ।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ