আত্মহত্যা করব তবু জেলে যাবো না

সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র  করে এরশাদকে নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে টানাহেঁচড়া  চলছে। টানাটানির কারণেই জাপা (এরশাদ) সর্বদলীয় সরকারে যোগ দেয় ।আবার সেখান থেকে বেরিয়ে আসার ঘোষণা দেয়।  এখন গ্রেফতার আতঙ্ক এরশাদকে তাড়া করছে। গ্রেফতার এড়াতে হুমকি দিচ্ছেন আত্মহত্যার। নিতে পারছেন না কোনো স্বাধীন সিদ্ধান্ত। এবিসি নিউজ বিডিকে জাপার একাধিক সূত্র এ তথ্য জানিয়েছেন।

সূত্র জানায়,আওয়ামী লীগ যে কোনো মূল্যে আগামী সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে চায়।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগকে একঘরে করতে জাতীয় পার্টিকে নির্বাচনের বাইরে রাখতে মরিয়া প্রধান বিরোধী দল বিএনপি।

উভয় দলের টানাটানিতে জাতীয় পার্টিতে দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। সর্বদলীয় সরকার থেকে দলীয় মন্ত্রীরা পদত্যাগে রাজি। রওশন রাজি হলেও প্রথমে বেঁকে বসেছিলেন ।

অতীতে এধরনের পরিস্থিতিতে বিদিশার সঙ্গে তালাক হয়। এখন এরশাদ-রওশন সম্পর্কে বরফ জমতে শুরু করেছে। সব মিলিয়ে দিশেহারা এরশাদ।

জাতীয় পার্টির নেতারা জানান, আগামী নির্বাচনে যে জোট এরশাদকে দলে ভেড়াতে পারবে; ক্ষমতারোহণের ক্ষেত্রে তাদের পাল্লাই ভারি হবে। কারণ ‘৯১-পরবর্তী সব নির্বাচনে এরশাদের জাতীয় পার্টি বরাবরই ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহৃত  হয়েছে।  এবারও এরশাদ তুরুপের তাস।

জাতীয় পার্টি সূত্র জানায়, ১৮ দলীয় জোট নির্বাচন বর্জন করায় জাপার বেশিরভাগ নেতাকর্মী নির্বাচনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। এ অবস্থায় নির্বাচনে অংশ নিলে জাতীয় পার্টি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ কারণে অতীতের কয়েকটি প্রেসিডিয়াম সভায় সব দলের অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত হয়।  প্রেসিডিয়ামের সিদ্ধান্ত অমান্য করে এরশাদের নির্দেশে জাপা নির্বাচনের জন্য সর্বদলীয় সরকারের মন্ত্রিসভায় যোগ দেয়। এতে কাজী জাফরের নেতৃত্বে দল আবারও বিভক্ত হয়। আবার ১৮ দলীয় জোটের তোপের মুখে পড়ে জাতীয় পার্টিসহ সব দলের প্রার্থীরা। বিরোধীদের আন্দোলনে অচল হয়ে পড়ছে দেশ।  এ অবস্থায় এরশাদ মঙ্গলবার জাপা প্রার্থীদের  মনোনয়য়নপত্র প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন। নির্দেশ দেন  বৃহস্পতিবারের মধ্যে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগেরও।

মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে এরশাদ বলেন, সব দল নির্বাচনে অংশ না নিলে জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশ নেবে না। সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নেই তাই আমরা নির্বাচনে যাব না। আমি প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে বলব।

তিনি বলেন, ‘অনেকে বলেন-আমি সকালে এক কথা বলি, বিকেলে এক কথা বলি। কিন্তু কেন বলি আপনাদের সেটা বুঝতে হবে। আমাকে চারদিক থেকে ঘিরে রাখা হয়েছে। আমি একজন শৃঙ্খলিত রাজনীতিবিদ। কখনও মুক্ত রাজনীতি করতে পারিনি। আমার বিরুদ্ধে ৭৪ টি মামলা। আওয়ামী লীগ বিএনপি বার বার ক্ষমতায় এসেছে। কেউ মামলাগুলোর সুরাহা করেনি । ’

এদিকে এরশাদের শেষ দেখার অপেক্ষায় রয়েছে আওয়ামী লীগ। ঘটা করে এরশাদ  নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেওয়ায়  আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের নেতাদের কপালে ভাঁজ পড়েছে।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন এবিসি নিউজ বিডিকে বলেন, রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। এরশাদ সাহেব নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। তবে নির্বাচনের এখনও মাসখানেক সময় রয়েছে। তিনি বলেন, কেবল প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য ওবায়দুল কাদের সচিবালয়ে মঙ্গলবার এক প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে এরশাদের শেষ কথা শুনতে আরো অপেক্ষা করতে হবে।  সাত দিনের মধ্যে অর্থাৎ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আগেই একটি স্থিতিশীল পর্যায়ে ফিরে আসবে।

তিনি বলেন, লেটেস্ট এর পরও লেটেস্ট থাকতে পারে। অপেক্ষা করতে হবে।

এক প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর আরেক সদস্য সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত বলেছেন, ‘উনি (এরশাদ) তো প্রতিদিন কত ক্রিয়াই করছেন। এটি নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। উনার এ ক্রিয়া (নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত) কতক্ষণ থাকে সেটাই দেখা দরকার। তারপর প্রতিক্রিয়া দেওয়া যাবে।’

সুরঞ্জিত বলেন, ‘তিনি (এরশাদ) হয়তো সাময়িকভাবে ক্ষুব্ধ হতে পারেন। পরে যখন তিনি স্বাভাবিক হবেন তখন এটা পুর্নবিবেচনা করবেন বলে আমার বিশ্বাস। তিনি (এরশাদ) স্বেচ্ছায় সর্বদলীয় সরকারে যোগদান করেন।

এরশাদ নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণায় অটল ও দলের নেতাদের মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগের নির্দেশ দেন বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টায়। এর পরপরই এরশাদের বাসার সামনে আইনশ্ঙ্খৃলা বাহিনীর উপস্থিতি বাড়তে থাকে।এছাড়া সাদা পোশাকে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও সেখানে রয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে-নির্বাচন থেকে সরে আসার ঘোষণায় অটল থাকার কারণে তাকে ভয়ভীতি দেখানোর জন্য অথবা নিরাপত্তার জন্যও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সেখানে যেতে পারে।

জানতে চাইলে র‌্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল ও মিডিয়া উইং পরিচালক উইং কমান্ডার হাবিবুর রহমান এবিসি নিউজ বিডিকে জানান, স্বাভাবিক কারণেই সেখানে নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা হয়েছে। তিনি বলেন, বারিধারা এলাকায় সব সময়ই বাড়তি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়ে থাকে।

এ পরিস্থিতিতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ আত্মহত্যার হুমকি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তাকে গ্রেপ্তার করার চেষ্টা করা হলে তিনি নিজেই আত্মহত্যা করবেন। এজন্য তিনি শিয়রের কাছে চারটি বুলেট প্রস্তুত রেখেছেন। বুধবার রাত ১১টা ১০ মিনিটে রাজধানীর বারিধারায় নিজ বাসভবনের নিচে নেমে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি এ কথা বলেন।

রাতের পোশাক পরিধান করে এরশাদ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। অনেকটা দৃঢ় চিত্তে সাবেক এ সেনা প্রধান বলেন, আমি কোনো কিছুকে ভয় করি না। আমাকে গ্রেফতার করার চেষ্টা করা হলে আমি নিজেই সুইসাইড করব।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ