সোমবার সারাদেশে জামায়াতের হরতাল
সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ সোমবার দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান রোববার রাতে এক বিবৃতিতে এই ঘোষণা দেন।
বিবৃতিতে ডা. শফিক বলেন, সরকার বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লাকে হত্যার উদ্দেশ্যে তথাকথিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মিথ্যা মামলা দায়ের করে। সরকারের দলীয় লোকদের দ্বারা গঠিত তদন্ত কমিশন, প্রসিকিউশন সেল পরিকল্পিতভাবে মিথ্যা কল্প-কাহিনী রচনা করে ট্রাইবুনালে কাল্পনিক মিথ্যা সাক্ষী হাজির করে। তারা অপরিচিত মহিলাকে ভূয়া মোমেনা বেগম সাজিয়ে আদালতে হাজির করে মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান করে। প্রকৃত মোমেনা বেগমের ছবি জল্লাদখানায় সংরক্ষিত আছে। ওই মোমেনা বেগমের সঙ্গে আদালতে উপস্থিত করা মোমেনা বেগমের চেহারার কোনো মিল নেই।
বিবৃতিতে বলা হয়, ওই কাল্পনিক ও মিথ্যা সাক্ষ্য বিবেচনায় নিয়ে ট্রাইব্যুনাল আব্দুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেয়। কিন্তু সরকার আব্দুল কাদের মোল্লাকে হত্যার উদ্দেশ্যে রায়ের ১৩ দিন পর আইন সংশোধন করে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে। মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ সাজানো মোমেনা বেগমের মিথ্যা সাক্ষ্য বিবেচনায় নিয়ে ও শোনা সাক্ষীর ওপর ভিত্তি করে আব্দুল কাদের মোল্লাকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করে। আপিল বিভাগের এই রায় নজিরবিহীন।
সরকারের এই বিচার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। দেশী-বিদেশী আইনবিদ, মানবাধিকার সংস্থা, জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন ও আন্তর্জাতিক মহল থেকে এই আইনকে একটি কালো আইন ও ট্রাইব্যুনালকে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড সম্পন্ন নয় বলে অভিমত দিয়েছেন। তারা আইন সংশোধনের সুনির্দিষ্ট সুপারিশমালাও সরকারের কাছে পেশ করেছেন। সরকার সেই সব বিবেচনায় না নিয়ে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য বিচারের নামে প্রহসন চালায়। গোটা বিচার প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত হয়ে আছে নানা কেলেঙ্কারি। স্কাইপ কেলেঙ্কারি, ভুয়া সাক্ষী আদালতে উপস্থাপন, প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে সরকারের হস্তক্ষেপ এই বিচারকে দেশে-বিদেশে প্রশ্নবিদ্ধ ও বিতর্কিত করেছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বিচার করছেন আদালত আর মামলার রায়ের দিন তারিখ সময় নির্ধারণ করছে সরকার। দেশবাসী অবগত আছেন, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মিশরে গিয়ে ফেব্রুয়ারির ১৫ দিনের মধ্যে দুটি মামলার রায় হবে বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। আব্দুল কাদের মোল্লার রায় ৫ ফেব্রুয়ারি ও মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলার রায় ২৮ ফেব্রুয়ারি ঘোষিত হয়। তাছাড়া, ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর বিচারপতিদের সঙ্গে আইনমন্ত্রীর বৈঠক, সরকার দলীয় নেতাদের জামায়াত নেতৃবৃন্দকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড প্রদানের ঘোষণা ইত্যাদির মাধ্যমে সরকার বিচার প্রক্রিয়াকে সরাসরি প্রভাবিত করেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা সরকারের পরিকল্পিত রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে ৯ ডিসেম্বর সোমবার দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা সর্বাত্মক হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করছি। দেশের বুদ্ধিজীবি, সাংবাদিক, শিক্ষাবীদ, আইনজীবী, সব শ্রেণিপেশার সম্প্রদায়, ব্যবসায়ী, খেটে খাওয়া মানুষ ও সর্বস্তরের জনগণকে এই অন্যায় ও রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ঘোষিত হরতাল কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে পালনের আহবান জানাচ্ছি।