কাদের মোল্লা জানেনা তার মৃত্যুর পরোয়ানা

রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার মৃত্যু পরোয়ানা ঢাকা কেন্দ্রয়ী কারাগারে পৌঁছালেও জানেন না কাদের মোল্লা। লাল কাপড়ে মোড়ানো এ পরোয়ানা ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার কার্যালয় হয়ে পৌঁছানো হয়। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মাহবুবুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

কারাগারের একটি সূত্র জানায়, বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে কারাগারে কাদের মোল্লার মৃত্যু পরোয়ানা পৌঁছেছে। কারাবিধি মোতাবেক মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের দিন সন্ধ্যার দিকে কাদের মোল্লাকে বিষয়টি জানানো হবে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ডেপুটি রেজিস্ট্রার অরুণাভ চক্রবর্তী জানান, রোববার বিকেল ৪টায় কাদের মোল্লার মৃত্যু পরোয়ানা নিয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের দিকে রওনা হয়েছি । এর অনুলিপি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ঢাকা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছেও পৌঁছে দেওয়া হবে ।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেছেন। কাদের মোল্লাকে ফাঁসির আদেশ দিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চূড়ান্ত রায়ের ভিত্তিতে এ পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনালের তিন বিচারপতি চেয়ারম্যান ওবায়দুল হাসান, বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম।পরে বিচারপতিরা মৃত্যু পরোয়ানায় স্বাক্ষর করে ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রারের দফতরে পাঠিয়ে দেন। রেজিস্ট্রার  এ কে এম নাসির উদ্দিন মাহমুদ স্বাক্ষর করার পর সেটি নিয়ে রওনা হন ডেপুটি রেজিস্ট্রার অরুণাভ চক্রবর্তী।

সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার একেএম শামসুল ইসলাম জানান, রায়ের অনুলিপি ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার ছাড়াও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ঢাকা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, কারা মহাপরিদর্শক (আইজি-প্রিজন) ও অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। কনডেম প্রিজনারের পক্ষে রায়ের অনুলিপি গ্রহণ করেছেন আসামিপক্ষের অ্যাডভোকেট অন রেকর্ডস জয়নাল আবেদিন।

কাদের মোল্লাকে ফাঁসির দণ্ড দিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চূড়ান্ত এ পূর্ণাঙ্গ রায়টি প্রকাশিত হয়েছে গত বৃহস্পতিবার। ৭৯০ পৃষ্ঠার এ রায়ে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বাড়িয়ে ফাঁসির দণ্ড দেন সর্বোচ্চ আদালত।

এদিকে জেল কোড অনুযায়ী মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামির রায়ের সত্যায়িত কপি হাতে পাওয়ার পর সাজা কার্যকরের ক্ষেত্রে ২১ দিনের আগে নয়, আবার ২৮ দিনের পরে নয় সংক্রান্ত যে বিধান রয়েছে, তা কাদের মোল্লার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না বলে দাবি করছেন রাষ্ট্রপক্ষ। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের ২০ (৩) ধারায় বলা হয়েছে, ট্রাইব্যুনালের দেওয়া সাজা কার্যকর করবে সরকার। তাই এক্ষেত্রে সরকারের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম বলেন, রায়ের কপি ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার গ্রহণ করেছেন। রায় কার্যকর  করার জন্য মৃত্যুদণ্ড পরোয়ানায় বিচারপতিরা স্বাক্ষর করবেন। সেই কপি ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার পাঠাবেন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং ঢাকা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে। এরপর জেল কৃর্তৃপক্ষ জেলকোড ৯৯১ অনুযায়ী আসামীকে জিজ্ঞেস করবেন তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইবেন কি-না। রাষ্ট্রপতি অতি দ্রুত তার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেবেন। তবে এর আগে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার বিষয়ে কাদের মোল্লার বড় ছেলে হাসান জামিল বলেছেন, তারা রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইবেন না।

গত ১৭ সেপ্টেম্বর প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের ৫ বিচারপতির বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে (৪:১) আব্দুল কাদের মোল্লাকে ফাঁসির দণ্ড দেন। বেঞ্চের অপর বিচারপতিরা হলেন বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, বিচারপতি আব্দুল ওয়াহাব মিঞা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ