ফের সক্রিয় গণজাগরণ মঞ্চ, নেই জনসম্পৃক্ততা
সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকরের দাবিতে ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে গণজাগরণ মঞ্চ। তবে আগের সেই জনসম্পৃক্ততা নেই।
ট্রাইব্যুনালে কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন সাজা দিলে চলতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি শাহবাগ চত্বর ঘিরে গড়ে ওঠে এ আন্দোলন। পরে সেই আন্দোলনের নাম দেওয়া হয় গণজাগরণ মঞ্চ। বাংলাদেশের ইতিহাসে কোনো আন্দোলনে সাধারণ মানুষের এমন সম্পৃক্ততা খুব বেশি দেখা যায়নি।
ওই আন্দোলনের প্রথম দিকে শাহবাগ ঘিরে লাখো মানুষের সমবেত স্লোগানে মুখরিত ছিল পুরো এলাকা। ছয় বছরের শিশু থেকে ষাট বছরের বৃদ্ধ সবাই তখন জড়ো হয়েছিল শাহবাগে। সবার একটাই দাবি ছিল যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি।
কিন্তু গণজাগরণ মঞ্চের সেই দৃশ্য বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। আস্তিক-নাস্তিক বিতর্কে জড়িয়ে বিভক্ত হয়ে পড়ে এ আন্দোলন। পরের দিকে সরকারি পৃষ্টপোষকতার কারণে বিতর্ক সৃষ্টি হয়।ধীরে ধীরে কমতে থাকে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ।
গত দুই মাস গণজাগরণ মঞ্চের তেমন কোন কর্মসূচি চোখে না পড়লেও কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর নিয়ে তৈরি হওয়া অচলাবস্থায় ফের সক্রিয় হয়েছে মঞ্চের নেতাকর্মীরা। তারা ফের শাহবাগের মূল চত্বর দখল করে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। তবে নতুন করে সক্রিয়তার দুই দিন পেরিয়ে গেলেও এবার নেই জনসম্পৃক্ততা। মঞ্চের নেতৃবৃন্দ ছাড়া উল্লেখযোগ্য কোনো উপস্থিতি চোখে পড়েনি। বিশেষ করে বুধবার দুপুরে মঞ্চের একেবারে পাশে দুটি ককটেল বিস্ফোরণের পর উপস্থিতি আরো কমে গেছে।
প্রথম দিকে নিয়মিত মঞ্চের আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন এমন অনেকের সঙ্গে কথা বলে যানা গেছে তারা এখন এই আন্দোলনকে নিরপেক্ষ আন্দোলন মনে করেন না। বিশেষ করে সরকারের পৃষ্টপোষকতার কারণে এ আন্দোলনের সর্বজনীন রূপ হারিয়ে গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন গণমাধ্যমকর্মী এবিসি নিউজ বিডিকে বলেন, প্রথম দিকে এই আন্দোলন ছিল স্বতঃস্ফূর্ত। কিন্তু পরের দিকে সরকার এটিকে কব্জায় নিয়ে নেয়। যার ফলে এখন এই আন্দোলনের সঙ্গে তেমন কোনো জনসম্পৃক্ততা নেই। আমি নিজে প্রথম দিকে দিন-রাত শাহবাগে থেকেছি। কিন্তু এখন আর আমি সেখানে যাব না।
সাজ্জাদ নামে গণজাগরণ মঞ্চের এক উদ্যোক্তা এবিসি নিউজ বিডিকে বলেন, বর্তমানে দেশের যে পরিস্থিতি তাতে এমন একটি আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া কঠিন। চলমান পরিস্থিতিতে শাহবাগের মতো একটি ব্যস্ত রাস্তার চারদিক বন্ধ করে এমন কর্মসূচি চালালে জনগণের ভোগান্তি বাড়বে। আবার নিরাপত্তার বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। আগের মতো এখন আর শাহবাগ নিরাপদ নয়। তার প্রমাণ আজকের ককটেল বিস্ফোরণ। একেবারে মঞ্চের পাশে এমন ঘটনা আমাদের আতঙ্কিত করেছে। এতে প্রমাণ হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি একেবারে কম। ফলে সাধারণ মানুষ এখন আর এই আন্দোলনে আসতে চাচ্ছেন না।
এছাড়াও এই মঞ্চের অনেক নেতাকর্মী নানামুখী বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন। ফলে তাদের ওপর থেকে সাধারণ মানুষ আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন।