সরকারি প্রযোজনায় কাদের মোল্লা নাটক!
সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ কাদের মোল্লার ফাঁসি স্থগিত হওয়া ও তা কার্যকরের দাবিতে শাহবাগ আন্দোলনকে সরকার প্রযোজিত নাটক বলে মন্তব্য করেছেন দেশের বিশিষ্টজনরা। তারা অভিযোগ করেছেন, নির্দলীয় সরকারের আন্দোলন থেকে জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে ফেরাতেই সরকার তড়িঘড়ি কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকরের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু জামায়াতের আন্দোলনের কাছে আত্মসমর্পণ করেই মৃত্যুদণ্ডাদেশ স্থগিত করা হয়েছে।
আবার বিচারের প্রতি জনসমর্থন প্রমাণ করতে সরকারের বিরুদ্ধে শাহবাগ আন্দোলনেও পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগ রয়েছে।
কাদের মোল্লার ফাঁসি স্থগিত এবং তা কার্যকরের দাবিতে শাহবাগের গণজাগরণকে সরকারের ‘সাজানো নাটক’ বলে অভিহিত করেছেন বিএনপির ধর্মষয়ক সম্পাদক মাসুদ তালুকদার।
তিনি বলেন, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মাধ্যমে টাকা ও লজিস্টিক সাপোর্ট দিয়ে শাহবাগের আন্দোলনকে দলীয়করণ করা হয়েছে- এই অভিযোগ থেকে সরকার মুক্তি পাবে কিভাবে? গণজাগরণ সরকার উৎপাদিত আন্দোলন। অথচ বলা হচ্ছে, শাহবাগে জনগণ স্বতস্ফূর্ত।
তিনি আরও বলেন শাহবাগের ৫০ গজ দূরে পুলিশ নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। আর ১০০ গজ দূরে গোলাম আজম। দুই পক্ষই এই নাটক শুনছেন ও দেখছেন। জনগণের কাছে আজ সরকারের এই নাটক ধরা পড়ে গেছে।
ফাঁসির রায় কার্যকর না হওয়ায় অবিশ্বাস ও অসন্তোষে পুড়ছে আওয়ামী লীগের শরিক দলগুলো। রায়কে ঘিরে জোট শরিকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। জোটের শরিক দলের সঙ্গে রাজনৈতিক ঐক্যের প্রধান শর্ত ছিল যুদ্ধাপরাধের বিচার। রায় কার্যকর না হওয়ায় তারা সন্দেহের চোখে দেখছেন আওয়ামী লীগকে।
রাজনৈতিক কারণে জামায়াতের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সমঝোতা বা ওই দলটির কাছ থেকে অন্য কোনো সুবিধা নেওয়ার বিষয়ে বাইরে যে আলোচনা হচ্ছে, তা উড়িয়ে দিচ্ছেন না তারা। বরং জনমনে ওঠা প্রশ্নের সত্যতা যাচাইয়ের চেষ্টা করছেন। প্রশ্ন তুলছেন, কোনো ধরনের সমঝোতা না হলে রায় কার্যকর হলো না কেন? এদিকে রায় নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতারা ক্ষুব্ধ। তারা জবাব দিতে পারছেন না কর্মী শুভাকাঙ্ক্ষীদের।
১৪ দলের শরিক ন্যাপের সহ-সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন বলেন, রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত সব সময় কার্যকর হয় না। কখনো কখনো বিলম্ব হয়। এই মুহূর্তে ফাঁসির রায় কার্যকর না হলেও আওয়ামী লীগই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করেছে।
শাহবাগ আন্দোলনকে সরকারের সাজানো নাটক বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মহাসচিব গোলাম মসি। তিনি বলেন, আমরা সব সময় শাহবাগ আন্দোলনের বিপক্ষে । সরকার এ ধরনের নাটক না করলেও পারতো। সরকার অত্যন্ত কাঁচা হাতে এ নাটক পরিচালনা করছে। রায়ের আগে সরকারের মন্ত্রীরা লম্ফ ঝম্ফ করেছেন। রায় নিয়ে বড় বড় কথা বলেছেন। তবে আমরা আশাবাদী কাদের মোল্লা ন্যায় বিচার পাবেন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল রোববার মৃত্যু পরোয়ানা কারাগারে পাঠানোর পর কাদের মোল্লার আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, রায় পর্যালোচনার (রিভিউ) আবেদনের সুযোগ পাওয়া কাদের মোল্লার সাংবিধানিক অধিকার।
তবে তার দাবি অস্বীকার করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
তিনি বলেন, সরকার নির্দেশ দিলেই মৃত্যুদণ্ডের রায় কার্যকর করা যাবে। কোনো রিভিউ চলবে না। যেহেতু বিশেষ আইনে বিচার হয়েছে, সেজন্য কারাবিধি প্রযোজ্য হবে না।
কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর করার শেষ মুহূর্তে এসে তা স্থগিত করাকে প্রাসাদ ষড়যন্ত্র বলে মন্তব্য করেছেন গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম সংগঠক মারুফ রসুল।
তিনি বলেন, পুরো জাতি ফাঁসি কার্যকরের মাধ্যমে শহীদদের রক্তের ঋণ কিছুটা পরিশোধের চেষ্টায় উদগ্রীব। অথচ শেষ মুহূর্তে এসে কেন স্থগিত হলো, এটা জাতির প্রশ্ন। কারণ সংবিধানের ১০৫ ও ৪৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কাদের মোল্লার রায় রিভিউ করার কোনো সুযোগ নেই।