লক্ষ্মীপুরে র্যাবের গুলিতে নিহত ৫
হাবিব উল্ল্যা জহির, এবিসি নিউজ বিডি, লক্ষ্মীপুরঃ অবরোধকারীদের সঙ্গে র্যাব-বিজিবি ও পুলিশের দফায়-দফায় সংঘর্ষে জেলা শহরে নিহতের সংখ্যা পাঁচ এ দাঁড়িয়েছে। নিহতরা হলেন জেলা যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইকবাল মাহমুদ জুয়েল, লাহারকান্দি ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মাহবুব, শিবির কর্মী মাহমুদ শিহাব, জামায়াতের কর্মী বেলাল ও অজ্ঞাত যুবক।
এ ঘটনায় জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাহাব উদ্দিন সাবু ও জামায়াত নেতাকর্মীসহ ৬০ জনেরও বেশি গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে দলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলেও দাবি করেছে দলটি।
এদিকে ১৮ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের সঙ্গে এখনো জকসিন ও পুলিশ লাইনের সামনে দফায় দফায় সংঘর্ষ চলছে। র্যাব সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে একটি হেলিকপ্টার জেলা পুলিশ লাইনে এসেছে। র্যাব সদস্যরা এ পর্যন্ত পাঁচ জনকে আটক করছে বলে জানা গেছে।
এ ঘটনার প্রতিবাদে ১৮ দল শনিবার সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দিয়েছে। অবরোধকারীরা শহরে ৩টি প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসে আগুন ধরিয়ে দেয়। এছাড়াও তারা সোনালী ব্যাংকসহ ৫টি ব্যাবসায় প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর চালায়।
নিহত যুবদল নেতা জুয়েল শহরের সমসেরাবাদ এলাকার হাসপাতাল সড়কের নূরুল ইসলামের ছেলে। বাকিদের ঠিকানা জানা যায়নি। নিহত যুবদল নেতা ইকবাল মাহমুদ জুয়েলের মৃতদেহ পাওয়া যায়নি। পরিবারের সদস্যদের দাবি, র্যাব সদস্যরা মৃতদেহ গুম করে রেখেছে।
গুলিবিদ্ধরা হলেন- জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাহাবুদ্দিন সাবু, যুবদলকর্মী মাসুম (২৮), ফিরোজ (৩০), মুরাদ (২৬), রুবেল (২৫), ছাত্রদলকর্মী নেছার আহম্মদ, মো. পরান, শিবিরকর্মী মো. টিপু, আমির হোসেন, রাশেদ আলম, পথচারী ফারুক (৩০), রাকিব হোসেন (২০), শিমুল (২৫), মামুন হোসেন (২৫), মানিক (২৬), আরিফসহ (২৫) ৩০ জন। আহতদের লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতাল মানারাত, আধুনিক ও উপশম হাসপাতালসহ বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে।
সকাল ৭টার দিকে র্যাবের একটি দল জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাহাবুদ্দিন সাবুর বাসায় অভিযান চালায়। সাবুকে আটক করার চেষ্টা চালালে পরিবারের সদস্যরা বাধা দেন। র্যাব তার বাসায় তল্লাশির নামে ভাঙচুর, তিনটি প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসে আগুন ধরিয়ে দেয়। এরপর র্যাব সদস্যরা শহরের চকবাজারের দিকে যাওয়ার সময় অবরোধের সমর্থনে বিএনপির একটি মিছিল দেখেই গুলি চালায়। এতে জেলা যুবদল নেতা ইকবাল মাহমুদ জুয়েল ও কলেজ ছাত্রদল নেতা নেছার উদ্দিনসহ চারজন গুলিবিদ্ধ হন। ঘটনার পর র্যাব গুলিবিদ্ধ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাহাবুদ্দিন সাবুসহ চারজনকে আটক করে।
এ ঘটনার খবর শহরে ছড়িয়ে পড়লে বিএনপি ও জামায়াতসহ অবরোধকারীরা ক্ষুব্ধ হয়ে শহরে সোনালী ব্যাংকসহ ৫টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর চালায়। এ সময় র্যাব সদস্যরা তাদের ধাওয়া দিলে শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও গুলিবিনিময়। এক পর্যায়ে অবরোধকারীরা বাগবাড়ী, ঝুমুর ও এলজিইডি এলাকায় র্যাব সদস্যদের অবরুদ্ধ করে ফেললে র্যাব এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। এতে বিএনপি-জামায়াতের ৩০ জন গুলিবিদ্ধ হন। এদের মধ্যে ৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
জেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ রশিদুল হাসান লিংকন দাবি করেন, র্যাব ও পুলিশের গুলিতে জেলা যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইকবাল মাহমুদ জুয়েল ও শিবিরকর্মী মাহমুদ নিহত হয়েছেন।
সদর থানার ওসি ইকবাল হোসেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকসহ চারজন আটক হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত বলেন, পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে। শহরজুড়ে আইশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
এদিকে, ১৮দলের পাঁচ জনেরও বেশি নেতাকর্মী নিহত হয়েছে বলে সংগঠনের একাধিক নেতাকর্মী দাবি করেছেন। এছাড়া, এ ঘটনার পর থেকে জেলা যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইকবাল মাহমুদ জুয়েল নিখোঁজ রয়েছেন।