রাজনৈতিক কর্মসূচি মোকাবেলায় ব্যস্ত র্যাব
সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ এলিট ফোর্স হিসেবে প্রতিষ্ঠিত র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন ‘র্যাব’র বর্তমান ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে। দেশের সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে র্যাবের ভূমিকায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তারা বলেছেন, যে উদ্দেশে র্যাব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল, প্রথম দিকে তা সফল হলেও এখন সম্পূর্ণ রাজনৈতিক দমন-নীপিড়নে ব্যবহৃত হচ্ছে।
প্রতিষ্ঠার পর সন্ত্রাস দমনে সব মহলে র্যাবের সফলতা প্রসংসিত হয়েছিল । দেশ ছেড়েছিল ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসীরা। অনেকাংশে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, খুন ও চাঁদাবাজি কমেছিল । সাধারণ মানুষের মনে আস্থা অর্জিত হয়েছিল। অথচ ক্ষমতাসীন মহাজোট সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই সেই চির চেনা ‘র্যাব’র যেন খোলস বদলে দেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য চাপা দিয়ে বিরোধী দলের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রতিহত করতে নামিয়ে দেওয়া হয়। এ কারণে এলিট ফোর্স হিসেবে দেশে-বিদেশে প্রশংসিত র্যাবের জনপ্রিয়তা নেমে আসে তলানিতে।
মহাজোট সরকারের প্রথম থেকেই অপহরণ ও গুমের তালিকা দীর্ঘ হতে থাকে। গুম হওয়া মানুষ উদ্ধারে র্যাবের কোনো সফলতা নেই। কোথাও কোথাও র্যাবের বিরুদ্ধেই গুমের অভিযোগ ওঠে। মাদক ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারেও বিশেষ কোনো সফলতা নেই র্যাবের। দাগি আসামি বা কুখ্যাত সন্ত্রাসীদের পাকড়াওয়ের পরিবর্তে র্যাব এখন রাজনৈতিক কর্মসূচি মোকাবেলায় ব্যস্ত।
বৃহস্পতিবার সারা দেশে অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে লক্ষ্মীপুর জেলা শহরে ১৮ দলের কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয় র্যাবের। এতে বিএনপি-জামায়াতের ছয়জন নিহত হন। গুলিবিদ্ধ হন অন্তত ৫০ জন। ছয়জন নিহত হওয়ার খবর শহরে ছড়িয়ে পরার পর এক পর্যায়ে পুলিশ লাইনের সামনে র্যাবকে অবরুদ্ধ করে রাখেন হাজারো মানুষ। পরে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টার পাঠিয়ে উদ্ধার করে আনা হয় ওইসব র্যাব সদস্য।
লক্ষ্মীপুরে এর চেয়েও বড় ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার রাতে। র্যাব- ১১’র একটি দল জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. মো. ফয়েজ আহমেদকে ধরতে তার উত্তর তেমুহনী’র বাসায় অভিযান চালায়। এসময় ৬০ বছর বয়সী ফয়েজ আহমেদকে আটকের পর তিনতলা বাড়ির ছাদে নিয়ে গুলি করে নিচে ফেলে দেওয়া হয়। পরে পুলিশ এসে তার লাশ লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। নিহতের পরিববারের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমের কাছে এ অভিযোগ করা হয়।
বিষয়টি নিয়ে র্যাবের পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করা হয়।
বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলামিস্ট মাহফুজ উল্লাহ এবিসি নিউজ বিডিকে বলেন, সশস্ত্র বাহিনী ও পুলিশের সমন্বয়ে গঠিত র্যাবকে দিয়ে দেশের মানুষ অনেক উপকার পেয়েছে। অনেক ভালো কাজও এক সময় করেছে তারা। এখন সরকার যেভাবে ইচ্ছে ব্যবহার করছে।
তিনি বলেন, বর্তমান ‘মহাজোট সরকার র্যাবকে ‘আঠারো দলীয় জোটের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। প্রতিদ্বন্ধী বানিয়েছে। এতে করে ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত র্যাব পুরনো গৌরব হারাতে বসেছে।
র্যাব প্রসঙ্গে অধ্যাপক পিয়াস করিম এবিসি নিউজ বিডিকে বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে র্যাবের সাফল্য অনেকের কাছে ইর্ষনীয় ছিল। এলিট ফোর্স নামে এ বাহিনীকে রাজনীতির উর্ধ্বে রাখার প্রয়োজন ছিল। র্যাবকে রাজনৈতিক নেতাদের মুখোমুখি দাঁড় করানো হলে ইমেজ সঙ্কটে পড়বে র্যাব। র্যাবের ওপর থেকে অপরাধীদের ভয় কমে যাবে।
র্যাবের মুখপাত্র, লিগ্যাল ও মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক উইং কমান্ডার হাবিবুর রহমানের কাছে রাজনৈতিক দমন-পিড়নে র্যাবের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ কি-না জানতে চাওয়া হলে এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি। তবে লক্ষ্মীপুরের বিষয়টি নিয়ে বলেন, আপনারা সাংবাদিকেরা নিরপেক্ষভাবে জানার চেষ্টা করেন আসল ঘটনা জানতে পারবেন।