মোটিভ উদঘাটনে দিশেহারা র্যাব-পুলিশ
সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ রাজধানীর গোপীবাগে ছয়জনকে গলা কেটে হত্যার ঘটনার মোটিভ উদঘাটনে দিশেহারা র্যাব ও গোয়েন্দা পুলিশ। এ হত্যাকাণ্ডের ২০ ঘন্টা পরও পুলিশ ও র্যাব এখন পর্যন্ত কোনো মোটিভ উদ্ঘাটন করতে পারেনি।
ধর্মীয় মতাদর্শ এবং এ কারণে ধর্মীয় চরমপন্থী গোষ্ঠীর কোনো কিলার গ্রুপ পরিকল্পিতভাবে বাসায় ঢুকে এ হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তের বেরিয়ে এসেছে।তবে কারা এ লোহমর্ষক হত্যার সঙ্গে জড়িত তা নিয়ে তদন্তকারী সংস্থাগুলো রয়েছে ধোয়াশার মধ্যে।
এঘটনায় এখন পর্যন্ত সাতজনকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করা হয়েছে। তাদের ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তবে হত্যা সর্ম্পকে তারা কোনো তথ্য দিতে পারেনি বলে তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
রোববার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সরেজমিনে দেখা গেছে, গোপীবাগের আরকে মিশন রোডের ৬৪/৬ নম্বর ‘আয়না’বাড়িটিকে পুলিশ-র্যাবের সদস্যরা ঘিরে রেখেছে। বাইরে উৎসুক মানুষের ভিড়। পুরো ফ্ল্যাট ঘুরে পরিবারের সদস্যদের কান্নাকাটি করতে দেখা গেছে। মেঝেতে এখনও ছোপ ছোপ রক্ত রয়েছে। প্রতিটি রুমে পুলিশ সদস্যরা আলামত পাহারা দিচ্ছে।
পরিবারের একাধিক সদস্যদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, ঘটনার পর থেকে পুলিশ, র্যাব ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য ও সাংবাদিকদের সঙ্গে পুরো বিষয়ের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। এর আগেও উগ্র মৌলবাদী গোষ্টি তাদের হত্যা হুমকি দিয়েছে। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কথা বলাতে এতগুলো মানুষকে একসঙ্গে হত্যা করা হয়েছে।
জানা গেছে,নিহতের শিকার লুৎফর রহমান আগে থেকেই হত্যাকারীদের চিনতেন। তবে তিনি ছাড়া আর কেউ তাদের চিনতেন না বলে নিশ্চিত করেছেন তারা। পূর্বপরিচিত বলে এক সঙ্গে নামাজ পড়া, আসর করে বসে মুড়ি খাওয়া ও রাতের খাবারের আয়োজন করা হচ্ছিল।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মারুফ হাসান এবিসি নিউজ বিডিকে জানান, আমাদের চেয়ে আপনারা ভালো জানেন। আমরা মোটিভ উদঘাটনে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করি দ্রুত এ হত্যাকাণ্ডের মোটিভ বের করতে পারবো।
র্যাবের অতিরিক্তি মহাপরিচালক (অপরাশেন) কর্নেল জিয়াউল আহসান এবিসি নিউজ বিডিকে জানান, ধর্মীয় মতবিরোধকে সামনে রেখে আমরা তদন্ত করছি। মোটিভ উদ্ধারে আমাদের গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়িয়েছি।
পুলিশের ওয়ারী বিভাগের উপ-কমিশনার ইলিয়াস শরীফ এবিসি নিউজ বিডিকে জানান, এ ঘটনায় নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে বাদী হয়ে মামলা হয়েছে। মামলাটি আমরা ডিবি পুলিশকে দিতে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে বলেছি।
ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশের (পূর্ব) জাহাঙ্গীর হোসেন মাতুব্বর এবিসি নিউজ বিডিকে জানান, আমরা তিনটি বিষয় সামনে রেখে তদন্ত করছি। বিকৃতভাবে ইসলাম ধর্ম প্রচার নিয়ে শত্রুতা, সম্পত্তি নিয়ে পরিবারিক শত্রুতা ও উগ্র মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে কথা বলায় ওইসব গোষ্টির আক্রোশের শিকার হওয়া। তদন্ত কাজ চলছে দ্রত গতিতে। তবে এখনও মোটিভ উদ্ঘাটন করতে পারেননি বলে তিনি জানিয়েছেন।
র্যাবের গোয়েন্দা প্রধান লে: কর্নেল আজাদ এবিসি নিউজ বিডিকে জানান, আমরা সর্বাত্ক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। র্যাবের বেশ কয়েকটি টিম ইতিমধ্যে মাঠে কাজ করছে। তবে হ্যাঁ এখন পর্যন্ত মোটিভ সর্ম্পকে জানতে পারিনি।
পুলিশের ওয়ারী বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মেহেদী হাসান এবিসি নিউজ বিডিকে জানান, ওয়ারী থানা পুলিশের হাতে আটক ছয়জনকে ডিবিতে হস্তান্তর করা হয়েছে। মামলার তদন্ত করবে তারাই আমরা শুধু তাদের সহযোগিতা করবো।
তদন্তকারী সংস্থাগুলোর উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা এবিসি নিউজ বিডিকে জানিয়েছেন, ঘটনার সময় হত্যাকারীদের দ্বারা বন্দী নিহতদের পরিবারের নারী সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া আলামত ও হত্যার সিমটমগুলো বিভিন্নভাবে বিশ্লেষণ করে দেখা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত একটি বিষয়ে তদন্ত এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে, সেটি হচ্ছে ইমাম মাহাদীর মতাদর্শ প্রচার ও উগ্র জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কথা বলাসহ ধর্মীয় বিরোধ।
এছাড়া সিআইডির ক্রাইম সিনের সংগৃহিত আলামতের ল্যাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং মৃতদেহগুলোর ময়না তদন্তের প্রতিবেদনের জন্য দেরি করা। এসব প্রতিবেদন হাতে পেলে তদন্ত কাজ সামনে এগিয়ে নেওয়া যাবে।
রাজধানীর গোপীবাগে একটি বাড়ির ফ্ল্যাটে বাবা-ছেলেসহ ৬ জনকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। শনিবার সন্ধ্যায় আর.কে মিশন রোডের ৬৪/৬ নম্বরের ‘আয়না’ বাড়ির দোতলার ফ্ল্যাটে এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন লুৎফর রহমান ফারুক (৬০), তার ছেলে মনির হোসেন (৩০), খাদেম মঞ্জু (৩০) এবং তিন অনুসারী মজিবর রহমান (৩০), শাহীন (২৫) ও রাসেল (২৫)।
এঘটনায় রোববার ভোরে ওয়ারী থানায় লুৎফর রহমান ফারুকের ছেলে বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের আসামি করে একটি মামলা করেছেন।