নির্বাচিতদের দায় নেবেন না এরশাদ

সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ নির্বাচন না করার সিদ্ধান্তে এখনো অনড় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। যারা বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত এবং যারা এ নির্বাচনে যাচ্ছেন তাদের দায়ও তিনি নেবেন না। তাদের শপথ না নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। নির্দেশ অমান্যকারী অনেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছেন। বাকিদের ব্যপারেও ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন বলে জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির নেতারা।

জাতীয় পার্টির নেতারা জানান, সিএমএইচে ‘আটক’ এরশাদ আসন্ন নির্বাচন প্রশ্নে নেতাদের মত পরিবর্তন ও ডিগবাজির কারণে রীতিমত ক্ষুব্ধ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রওশনপন্থী নেতাদের ক্ষমতা খর্ব করে তাদের দলীয় পদ-পদবি থেকে সরিয়ে দিচ্ছেন। ইতিমধ্যে রওশনপন্থী নেতা হিসেবে পরিচিত রংপুরের মশিউর রহমান রাঙা, চট্টগ্রামের সোলায়মান আলম শেঠকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। এর ফলে প্রকাশ্যে নির্বাচনে যাওয়ার কথা বললেও বহিষ্কার আতঙ্কে ভুগছেন বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত জাতীয় পার্টির অনেক নেতা। জনরোষের কারণে কেউ কেউ নির্বাচনী এলাকায় যেতে পারছেন না। কয়েকজনকে ইতোমধ্যে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। দু’একজনকে গণধোলাইয়ের মুখে পড়তে হয়েছে।

সূত্র জানায়, দলের কিছু নেতা সমঝোতার মাধ্যমে নির্বাচিত হয়েছেন। মুখে জাতীয় পার্টি তথা এরশাদের নির্দেশে ও  রওশনের নেতৃত্বে নির্বাচনে যাচ্ছেন বলে প্রচার করলেও তারা কার্যত সরকারের আদেশ-নির্দেশ পালন করছেন। নেতাকর্মীদের হাতে লাঞ্চিত হওয়ার ভয়ে তারা এরশাদের নির্দেশে ও রওশনের নেতৃত্বে নির্বাচনে অংশগ্রহণের কথা বলে বিভ্রান্তির আশ্রয় নিচ্ছেন। দলের নেতাকর্মীরা আগে ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও জিয়াউদ্দিন বাবলুসহ কয়েকজনকে সরকারপন্থী হিসেবে জানতো। এখন সেই তালিকায় যুক্ত হয়েছেন কাজী ফিরোজ রশিদ।  গত বৃহস্পতিবার এরশাদের সম্মতিতে রওশনের নেতৃত্বে নির্বাচনে সক্রিয় রয়েছেন বলে গণমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারের কারণে নেতাকর্মীরা তার ওপর  চরম  ক্ষুব্ধ।

দলের একাধিক নেতা বলেন, কাজী ফিরোজ রশীদ বার বার দল বদল করেছেন। এরশাদের হাতে-পায়ে ধরে আবার জাতীয় পার্টিতে এসেছেন। যদি তিনি অপপ্রচার বন্ধ না করেন তাহলে তাকে অপমানিত হতে হবে।

এদিকে জাতীয় পার্টি নিয়ে নেতাকর্মী ও দেশবাসীর মধ্যে বিভ্রান্তি দূর করতে শুক্রবার এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন এরশাদের ভাই ও দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য জিএম কাদের। তিনি নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়ে কাজী ফিরোজ রশীদের বক্তব্যকে ভিত্তিহীন এবং বিভ্রান্তিমূলক বলে অবিহিত করেন। তবে সরকারের দলননীতি গ্রহণ এবং এরশাদকে ‘আটক’ রাখায় সব কথা বলার জন্য আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে বলেও সাংবাদিকদের জানান তিনি।

জি এম কাদের সাংবাদিকদের বলেন, চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে আমি এবং মহাসচিব ছাড়া অন্য কেউ কথা বললে তা গ্রহণযোগ্য হবে না।

তিনি বলেন, দল থেকে যখন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের নির্দেশ দেওয়া হয়, তখনই আমি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আবেদন করি। কিন্তু সেই আবেদন গ্রহণ করা হয়নি। গ্রহণ করুক বা না করুক, তাতে কিছু আসে যায় না। আমি বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতার কোনো নির্বাচনে অংশ নিতে রাজী নই। যারা নির্বাচিত এবং যারা নির্বাচনে যাচ্ছেন তাদের দায় জাতীয় পার্টি নেবেনা।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণের কমিটি থেকে কাজী ফিরোজ রশীদকে সরিয়ে এরশাদপন্থী হিসেবে পরিচিত ঢাকা-৫ আসন থেকে এরশাদের নির্দেশে মনোনয়ন প্র্যাহারকারী দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আবদুর সবুর আসুদ ও নবনিযুক্ত প্রেসডিয়াম সদস্য সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলনকে দায়িত্ব দেয়ার কথা শোনা যাচ্ছে। এছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে দেখা যেতে পারে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন খান ও আহসান হাবিব লিঙ্কনকে।

এরশাদের সিদ্ধান্তে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেয়া জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আহসান হাবিব লিংকন বলেন, ‘কাজী ফিরোজ রশীদ সব সময় একতরফা নির্বাচনের বিরুদ্ধে ছিলেন। পার্টি চেয়ারম্যান ‘আটকের’ সঙ্গে সঙ্গে তিনি বোল পাল্টালেন। তবে যারাই পাতানো নির্বাচনে যাবেন তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবেন স্যার (এরশাদ)।

পার্টির আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন এবিসি নিউজ বিডিকে বলেন, কেউ কেউ রওশন এরশাদের নেতৃত্বে নির্বাচনে অংশগ্রহণের কথা বলছেন। কিন্তু রওশনতো কোনো কথা বলছেন না। হয়তো রওশনের মাথায় বন্দুক রাখা হয়েছে অথবা যারা তার নামে বিবৃতি দিচ্ছেন তাদের মাথায় বন্দুক রেখে বিবৃতি আদায় করা হচ্ছে। তবে যারা নির্বাচনে যেতে অতি উৎসাহী তাদের ব্যাপারে পার্টি কঠোর।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ