১৪ মাসে ভাগ্য পরিবর্তন মহীউদ্দীন খানের
সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর মহাজোট সরকারের মন্ত্রী পরিষদে ঠাই পেয়ে মাত্র ১৪ মাসেই টাকার পাহাড় গড়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এই কম সময়ে তিনি পেয়েছেন ব্যাংক, বিশ্ববিদ্যালয় ও কনটেইনারবাহী জাহাজের লাইসেন্স। এরই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়িয়েছেন সম্পদও। নির্বাচন কমিশনে দেওয়া হলফনামা থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান এমন সম্পদ বৃদ্ধির তথ্যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
মহীউদ্দীন খান আলমগীরের নামে ২০০৮ সালে ১৩টি মামলা ছিল। মহাজোট সরকার গঠন করার পর সব মামলা থেকেই অব্যাহতি পেয়েছেন তিনি। ১৯৯৬ সালে জনতার মঞ্চে একজন সরকারি কর্মকর্তা হয়ে সে সময়ের আন্দোলনরত বিরোধী দল আওয়ামী লীগের পক্ষ নিয়ে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেন। এর পরই তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত হন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় অবৈধ সম্পদ অর্জনের দায়ে মহীউদ্দীন খান আলমগীরের ১৩ বছরের কারাদণ্ড হয়েছিল। সংসদ সদস্য পদও হারাতে বসেছিলেন। নির্বাচন কমিশন মহীউদ্দীন খান আলমগীরের চাঁদপুর-১ আসন শূন্য ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করেছিল। পরে এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে তিনি হাইকোর্টে রিট করলে শুনানি শেষে আদালত ওই গেজেট এখতিয়ারবহির্ভূত ও অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন। ফলে তিনি সাংসদ হিসেবে বহাল থাকেন।
দশম জাতয়ি সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামা অনুযায়ী, মহীউদ্দীন খান আলমগীরের মোট সম্পদের পরিমাণ ১৬ কোটি ৪১ লাখ টাকারও বেশি। গত এক বছরেই নিট সম্পদ বেড়েছে প্রায় এক কোটি ৮৭ লাখ টাকার। আর পাঁচ বছরে তার ও তার স্ত্রীর সম্পদ বেড়েছে বহু গুণ। পাঁচ বছর আগে যেখানে তার নিজের নগদ টাকা ছিল মাত্র পাঁচ লাখ, সেখানে এবার নিজের ও স্ত্রীর নগদ টাকাই আছে পাঁচ কোটিরও বেশি।
মহীউদ্দীন খান আলমগীরের বার্ষিক আয়ের মধ্যে কৃষি খাতে ৬০ হাজার টাকা, বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্ট, দোকান বা অন্যান্য ভাড়ায় নিজের আয় তিন লাখ ৮৫ হাজার ৫০০ টাকা, স্ত্রীর নামে আছে ১০ লাখ সাত হাজার ১০০ টাকা। নিজের ব্যবসায় আয় চার লাখ ৬৮ হাজার, বিভিন্ন শেয়ার, সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক সুদ এক লাখ ৩০ হাজার ২৯১ টাকা এবং স্থায়ী আমানত থেকে সুদ আয় হয় ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। নিজের চাকরি থেকে আয় আট লাখের কিছু বেশি।
মহীউদ্দীন খান আলমগীরের অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নিজের নগদ টাকা আছে তিন কোটি এক লাখ ৬০ হাজার ৬০৯ টাকা। স্ত্রীর নগদ আছে দুই কোটি দুই লাখ ৩২ হাজার ৬৪৩ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নিজের জমা ৫১ লাখ ১২ হাজার ২৫৯ টাকা। স্ত্রীর ৫১ লাখ ৪০ হাজার ৩৮ টাকা। ফার্মার ব্যাংকের লাইসেন্স পাওয়ায় এখানে নিজের নামে শেয়ার আছে আট কোটি ৫০ লাখ টাকার, অ্যাকটিভ ফাইন কেমিক্যাল লিমিটেডের শেয়ার আছে ২০ লাখ টাকার, বেক্সিমকো লিমিটেডের শেয়ার আছে ১০ লাখ টাকার, আইসিএবিতে ১০ লাখ টাকা, স্ত্রীকে ঋণ দিয়েছেন ৩৫ লাখ টাকা এবং শেয়ার ডিবেঞ্চারে বিনিয়োগ আছে আরও ২২ লাখ ছয় হাজার ৮৬ টাকা।
এছাড়া স্ত্রীর নামে আছে ফার্মার ব্যাংকে দেড় কোটি টাকার শেয়ার। নিজের নামে সঞ্চয়পত্র এক লাখ ৫০ হাজার টাকার। স্থায়ী আমানত এক কোটি তিন লাখ ২০ হাজার ৪০০ টাকা। স্ত্রীর নামে সঞ্চয়পত্র ১৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকার।
নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা তার হলফনামায় স্থাবর সম্পদসহ কয়েকটি খাতের লেখা অস্পষ্ট। তবে ওই হলফনামার সঙ্গে দেওয়া আয়কর বিবরণীতে তার মোট সম্পদের পরিমাণ দেওয়া হয়েছে ১৬ কোটি ৪১ লাখ ৪৫ হাজার ৮১৪ টাকা। এর মধ্যে দায় (ঋণ) আট কোটি ৯৫ লাখ টাকা বাদ দিলে নিট সম্পদ থাকে সাত কোটি ৪৬ লাখ ৪৫ হাজার ৮১৪ টাকা। বিগত অর্থবছরের শেষের তারিখে তার নিট সম্পদ ছিল পাঁচ কোটি ৫৯ লাখ ৭৪ হাজার টাকা।
দায় হিসাবে আট কোটি ৯৫ লাখ টাকা দেখালেও মহীউদ্দীন খান হলফনামায় বলেছেন, এটি তার জামানতবিহীন ঋণ। তবে কার কাছ থেকে এই ঋণ নিয়েছেন, তা হলফনামায় উল্লেখ করেননি।
অথচ পাঁচ বছর আগে, ২০০৮ সালে মহীউদ্দীন খানের বার্ষিক আয় ছিল কৃষি খাতে ৩১ হাজার, বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্ট, দোকান বা অন্যান্য ভাড়া হিসেবে আয় দুই লাখ ৩৫ হাজার ৪৪০ টাকা এবং ব্যবসায় আয় ছিল দুই লাখ ৪০ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে তখন নিজের নামে নগদ টাকা ছিল পাঁচ লাখ। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে স্ত্রীর নামে জমা ছিল ১১ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। দুই লাখ ছয় হাজার টাকার শেয়ার ছিল নিজের নামে এবং স্ত্রীর নামে সাত লাখ টাকার। বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্রে বা স্থায়ী আমানাতে স্ত্রীর নামে ছিল ৩১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। ছিল স্ত্রীর নামে একটি টয়োটা গাড়ি। স্বর্ণসহ অলংকারাদি নিজের দুই লাখ টাকা মূল্যের এবং স্ত্রীর ৩৫ হাজার টাকা মূল্যের।
স্থাবর সম্পদের মধ্যে ছিল নিজ নামে ১৩ দশমিক ১৮ একর কৃষি জমি, স্ত্রীর নামে ১ দশমিক ১৭ একর জমি। অকৃষি জমি নিজ নামে এক বিঘা। গ্রাম ও শহরে দালান ছিল ১৫ লাখ ৬৭ হাজার টাকা মূল্যের। স্ত্রীর নামে আছে তিনটি ফ্ল্যাট। গতবার তার কোনো দায়দেনা ছিল না।
এবিষয়ে জানতে চাইলে মহীউদ্দীন খান আলমগীর বলেন, সম্পদের হিসাব ঋণ বাদ দিয়ে ধরতে হবে। আর সম্পদের বিপরীতে তো আয়করও দেওয়া হয়েছে এবং তা গ্রহণও করা হয়েছে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সামগ্রিকভাবে মন্ত্রী-সাংসদদের সম্পদ বৃদ্ধির তথ্যগুলো উদ্বেগজনক। এখন তদন্ত করে দেখা উচিত। আসলে এসব সম্পদ কীভাবে হলো। এসব তথ্য প্রকাশ করার জন্য গণমাধ্যমকে ধন্যবাদ জানান তিনি।