নির্বাচনের নাটক মঞ্চস্থ হতে যাচ্ছে
সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দেশের অধিকাংশ মানুষের দাবি উপেক্ষা করে গণবিরোধী সরকার বশংবদ নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে ভোটার ও প্রার্থীবিহীন প্রহসনের নির্বাচন করতে চলেছে। ১৫৩ জন সরকারি জোটের প্রার্থী ইতোমধ্যেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত বলে ধরে নেওয়া হয়েছে। বাকি আসনগুলোতে যৌথবাহিনীর সহযোগিতায় নির্বাচনের একটা নাটক মঞ্চস্থ করা হচ্ছে রোববার।
শনিবার সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ইতোমধ্যে এই তথাকথিত প্রহসনমূলক একতরফা নির্বাচন স্থগিত করার জন্য দেশের প্রায় সব রাজনৈতিক দল, সংগঠন, পেশাজীবী সংগঠন, বিশিষ্ট নাগরিকবৃন্দ, পত্রিকার স্বনামধন্য সম্পাদকবৃন্দ তাদের মতামত ব্যক্ত করেছেন। জাতিসংঘ, কমনওয়েলথ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান, চীন সহ আন্তর্জাতিক সংস্থা, দেশি-বিদেশি গণমাধ্যম এই প্রহসনের নির্বাচন স্থগিত করার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে।
জনগণ নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য নিরন্তর গণআন্দোলন গড়ে তুলেছে। অসংখ্য মানুষ সরকারের নির্যাতনে প্রাণ দিয়েছেন, গ্রেফতার হয়েছেন। এই নির্বাচন এখন একটা সত্যিকার অর্থেই হাস্য-কৌতুকের প্রহসনে পরিণত হয়েছে। আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়েছে বলেই এই ধরণের একটি জনসম্পৃক্ততা বিহীন নির্বাচনের পথ বেছে নিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চাইছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সামাজিকভাবে, নৈতিকভাবে ও রাজনৈতিকভাবে সম্পূর্ণ পরাজিত হয়েছে বলেই আজ বলপ্রয়োগের মাধ্যমে গণতন্ত্রের সকল নিয়ম-নীতিকে ধ্বংস করে স্বৈরতান্ত্রিক একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চলেছে।
চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেত্রী সাবেক প্রধানমন্ত্রী, ১৮ দলীয় জোটের নেতা, বিএনপি চেয়ারপারসন, বিরোধী দলের নেতা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে গৃহবন্দী করে রেখে, তার রাজনৈতিক কার্যালয় এবং বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় অবরুদ্ধ রেখে, বিরোধী দলের শীর্ষ নেতাদের কারান্তরীণ করে, মিথ্যা মামলা দিয়ে, দেখামাত্র গুলির নির্দেশ দিয়ে, সারাদেশের বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের হত্যা, গুলি, নির্যাতন, গ্রেফতার, তাদের বাড়িঘর ভাংচুর, অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে নজীরবিহীন রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মধ্য দিয়ে এই নির্বাচন সত্যিকার অর্থেই একটি প্রহসনের নির্বাচনের অপপ্রয়াস।
সরকার সুপরিকল্পিতভাবে জাতিকে বিভক্ত করতে চাইছে। অন্যদিকে চিরস্থায়ীভাবে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকার হীন উদ্দেশ্যে বিরোধী মতকে নির্মূল করে ভিন্ন আঙ্গিকে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা বাকশাল পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার অপচেষ্টা করছে।
জন্মলগ্ন থেকেই বিএনপি জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সামরিক ও বেসামরিকসহ সব ধরণের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে আপসহীন লড়াই চালিয়ে গেছে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আপসহীনভাবে নিরন্তর এই সংগ্রাম করছেন। দেশনেত্রী জীবন সায়াহ্নে গণতন্ত্রকে সুমহান আদর্শ ও মূল্যবোধে প্রতিষ্ঠিত করতে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এই সংগ্রামকে বিজয়ের পথে নিয়ে যাওয়ার জন্য অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। আমরা বিশ্বাস করি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী বাংলাদেশের মানুষ কখনোই আওয়ামী সরকারের এই নীলনকশার নির্বাচন মেনে নেবে না। ইতিমধ্যেই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তারা তা প্রত্যাখান করেছেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা, জাতীয় মর্যাদা, গণতান্ত্রিক অধিকার সমুন্নত রাখার স্বার্থে দেশের কৃষক, শ্রমিক, মধ্যবিত্ত, পেশাজীবী, নাগরিক সমাজ, ব্যবসায়ী, উন্নয়ন কর্মী, সকল ধর্মাবলম্বী ব্যক্তি এবং সকল জাতিগোষ্ঠীর সদস্যদের প্রতি ৫ জানুয়ারির প্রহসনের এই নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে বর্জনে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আহবানের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করার আহবান জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে সবার প্রতি আহবান জানাচ্ছি ভোটকেন্দ্রে না গিয়ে গণতন্ত্র ধ্বংসকারী মৌলিক অধিকার হরণের এই নির্বাচন বর্জনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিরোধী, গণতন্ত্র বিরোধী ফ্যাসিবাদী চক্রান্তকে পরাজিত করার জন্য।
আমরা শান্তিপূর্ণভাবে এই ফ্যাসিবাদী নৈরাজ্যের জবাব দিতে চাই। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, জনগণের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন কখনও ব্যর্থ হয় না, ব্যর্থ হয় না জনগণের আত্মত্যাগ। অত্যাচারী শাসকরাই ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়। জনগণের সম্মিলিত সংগ্রাম কখনও পরাজিত হয় না। বাংলাদেশের জনগণের বিজয় অনিবার্য। আল্লাহ্ আমাদের সহায় হউন।