ভোটার উপস্থিতি নিয়ে দুশ্চিন্তায় সরকার

সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ বিরোধীদলের ক্রমবর্ধমান হামলার মুখে আগামীকালের নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে সরকার। নির্বাচন প্রতিরোধে টানা হরতাল অবরোধে এমনিতেই সরকারের নাভিশ্বাস। তার ওপর নির্বাচনের পূর্বমুহূর্তে আবারো খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নির্বাচন প্রতিহত করার আহ্বান আরো বেকায়দায় ফেলেছে সরকারকে। তবুও ভোটকেন্দ্রে নূন্যতম ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সর্বদলীয় সরকার সাধ্যমত চেষ্টা চালিয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।

রোববার অনুষ্ঠেয় দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করতে দেশবাসীর প্রতি আহবান  জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।

তিনি বলেছেন, আমি দেশবাসীকে নির্বাচনের নামে ৫ জানুয়ারির এ কলঙ্কময় প্রহসন পুরোপুরি বর্জনের আহবান জানাচ্ছি। এ প্রহসনকে দেশে-বিদেশে কোথাও কেউ নির্বাচন হিসেবে বৈধতা দেবে না। শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এ আহ্বান জানান।

সূত্রমতে আগামী ৫ জানুয়ারি নির্বাচন প্রতিহত করতে বদ্ধপরিকর বিরোধীদল। নির্বাচন প্রতিহত করার জন্য গঠিত সংগ্রাম কমিটির সদস্যদের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে নির্বাচনী ব্যবস্থাপনা শক্তি সংগঠনকে আঘাত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে দেশের ২৬ টি জেলায় নির্বাচন কমিশন অফিসে আগুন দেওয়া হয়েছে। প্রার্থীদের গাড়ি-বাড়ি-ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ হয়েছে। প্রার্থীকে না পেয়ে হামলা হয়েছে তার সন্তানের ওপর। কোথাও প্রার্থীর স্ত্রী অপহরণের ঘটনাও ঘটেছে। বিভিন্ন জায়গায় বিরোধীদলের পাশাপাশি সরকারিদলের নেতাকর্মী হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।

নির্বাচন প্রতিহত করতে দলের নেতাকর্মী ও দেশবাসীর প্রতি আহবান জানিয়ে শনিবার ভিডিও বার্তা পাঠিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ভিডিও বার্তায় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে  তিনি বলেন, আপনারা সর্বাত্মক আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়ুন। যে কোনো মূল্যে নির্বাচন প্রতিহত করতে হবে।

আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা যায়, দলীয় প্রার্থীদের প্রতি কেন্দ্রীয় নির্দেশ হলো- সাধারণ ভোটাররা না পারলেও যে কোনো মূল্যে  দলীয় ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে নিতে হবে। কেন্দ্রের নির্দেশে তারা বেশি চিন্তিত। তারা জানালেন, রাত পোহালে নির্বাচন। নির্বাচনী আমেজের পরিবর্তে শঙ্কা  ও আতঙ্ক চারিদিকে। সর্বত্রই সহিংসতা। ১৮ দলীয় জোটের টানা  অবরোধ হরতাল চলছে। ৫ জানুয়ারি ভোট ঠেকাতে সর্বত্র আক্রমণ শুরু করেছে বিরোধী দল। এ পরিস্থিতির মধ্যে সাধারণ প্রার্থী তো দূরের কথা; হেভিওয়েট প্রার্থীরা পর্যন্ত তাদের নির্বাচনী কার্যক্রম চালাতে পারছেন না। যেখানে প্রার্থীরা অসহায় সেখানে নির্বাচনের দিন ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে যাবে কিভাবে?

জানা গেছে, এ বিষয়গুলো নিয়ে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক বৈঠক হলেও নেতারা কোনো সমাধানে পৌঁছতে পারেননি। দলের সর্বোচ্চ পর্যায়ে থেকে এই বলে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হলেও প্রার্থীদের নিজেদের উদ্যোগে অন্তত ৫০ শতাংশ ভোটার ভোট কেন্দ্রে নিতে হবে। ভোট কেন্দ্রের বাইরে পুলিশ, বিজিবি ও সেনা সদস্যরা নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবে। সুতরাং ভয় পাওয়ার কিছু নেই।

এ প্রসঙ্গে লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা জানান, কেন্দ্রীয় নির্দেশ মানা খুব কঠিন হবে। আওয়ামী লীগ অধ্যুষিত এলাকায় ঝুঁকি কিছুটা কম থাকলেও এই এলাকায় ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া সম্ভব বলে মনে হয় না। আওয়ামী সমর্থিত ভোটাররা সবচেয়ে বেশি আতঙ্কের মধ্যে আছে।

তিনি আরো বলেন, মহিলা ভোটার প্রায় অর্ধেক। সুতরাং মহিলা ভোটারদের কোনোভাবেই  কেন্দ্রে নেওয়া যাবে না।

এদিকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভোটকেন্দ্রে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দিন আহমেদ। তিনি দাবি করেছেন এসব ঘটনার পরও নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। শনিবার  সকালে নির্বাচন কমিশনে মিডিয়া সেন্টার উদ্বোধনকালে তিনি এ উদ্বেগের কথা জানান।

তিনি বলেন, যে সব কেন্দ্রে পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে তা নতুন করে তৈরির কাজ চলছে। সব কাজ সম্পন্ন করেই  রোববার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নাশকতার দায় কে নেবে-সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, কারা এসব করছে তা আপনারা দেখছেন, দেশবাসী দেখছে। আমরা কী করছি তাও দেশবাসী দেখছে। জনগণই বিচার করবে।

সাতক্ষীরা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহসহ বেশ কয়েকটি জেলার আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা জানান, ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে তৃণমূল নেতাকর্মীদের ওপর চাপ আছে। চাপকে উপেক্ষা করে অধিকাংশ নেতাকর্মী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে  রাস্তায় নামতে চাচ্ছে না। জামায়াত-বিএনপি অধ্যুষিত এলাকায় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ বা সহযোগী সংগঠনের কোনো নেতাকর্মীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির এক নেতা জানিয়েছেন, যেসব নেতা আমাদের কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দিচ্ছেন তারা নিজেরাই ভয়ে নির্বাচনী এলাকায় যাচ্ছেন না। নির্বাচনী প্রচার চালাতে অর্থকড়িও দেওয়া হচ্ছে। অথচ কেউ ভয়ে অর্থ নিতে পর্যন্ত রাজি হচ্ছে না। এটা সত্যি সত্যি অবাক হওয়ার মতো ঘটনা।

নেতাকর্মীদের প্রতি খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নির্বাচন প্রতিহতের আহ্বান ও চরম হামলার মুখে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতির সম্ভাবনা সম্পর্কে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন এবিসি নিউজ বিডিকে বলেন, বিরোধীদল বিচ্ছিন্নভাবে হামলা চালাচ্ছে। মনে হচ্ছে ভোটের দিনও তারা হামলা চালিয়ে জনগণকে ভীতসন্ত্রস্ত করবে। তবে ভোটারদের উৎসাহ ও আমাদের সাংগঠনিক প্রচেষ্টায় কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি সন্তোষজনক হবে বলে মনে করি।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ