ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে তৎপর সরকার
সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ আগামীকাল রোববার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এরই মধ্যে কোনো ধরনের উৎসাহ উদ্দীপনা ছাড়াই শেষ হয়েছে বিরোধী দলের বর্জনকৃত এ নির্বাচনটির প্রচার প্রচারণা। পাশাপাশি ভোটগ্রহনের যাবতীয় প্রস্তুতি পর্বও সম্পন্ন হওয়ার পথে। তবে সহিংসতার মধ্যে একতরফা নির্বাচনে সাধারণ ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে যাবে কিনা, এ নিয়ে সরকার তথা নির্বাচন কমিশনের (ইসি) শঙ্কা কাটছে না। এ কারণে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে সরকারের তরফ থেকে বিশেষ তৎপরতা চালানো হচ্ছে।
বিরোধী দলবিহীন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইতোমধ্যে ১৫৩ প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন, যা দেশে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করছে। বিগত নয়টি সংসদ নির্বাচনে এমন নজির নেই। এছাড়া নির্বাচন হবে মাত্র ১৪৬ আসনে। এতে প্রার্থী রয়েছেন মাত্র ৩৯০ জন। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১৫৪ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় এ নির্বাচনে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন চার কোটি ৮৩ লাখেরও অধিক ভোটার।
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, এবারের বিরোধী দলবিহীন নির্বাচনে ৫৯ জেলার প্রায় ১৮ হাজার ২০৮টি ভোটকেন্দ্র রয়েছে। এসব ভোটকেন্দ্রের প্রায় ৭৫ ভাগই ঝুঁকিপূর্ণ।
কমিশনের কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন, এবারের নির্বাচনে বহুল আলোচিত ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের চেয়েও ভোটার উপস্থিতি কম হতে পারে। ওই নির্বাচনে ২৬ শতাংশ ভোট পড়েছিল।
এই আশঙ্কা থেকে রোববারের দশম সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে সব ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে নির্বাচন কমিমনসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থা। নির্বাচনে ভোটের হার বাড়াতে ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে উদ্বুদ্ধ করতে তথ্য মন্ত্রণালয়ও কর্মসূচি নিয়েছে। অংশগ্রহণকারী দলগুলোও কেন্দ্রে যেতে আহ্বান জানাচ্ছে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুক্রবার ভোটকেন্দ্রে যেতে ভোটারদের আহ্বান জানিয়েছেন। এর আগে বৃহস্পতিবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদও ভোটারদের স্বতঃর্স্ফূভাবে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
তথ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো ভোটে অংশ নিতে গ্রাহকদের এসএমএস দিচ্ছে। এসব এসএমএসের মাধ্যমে বিভিন্ন উদ্দীপনামূলক বার্তা যেমন- ‘ভোট গণতান্ত্রিক অধিকার, নির্বাচনে ভোট দিয়ে আপনার অধিকার প্রতিষ্ঠা করুন’, ‘শান্তিপূর্ণ নির্বাচনী পরিবেশ বজায় রাখুন’, ‘নির্বাচনে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে, নির্ভয়ে, নির্বিঘ্নে ভোট দিতে কেন্দ্রে যাবেন’ এ ধরনের আহ্বান জানানো হচ্ছে।
ভোটারদের কেন্দ্রে আনতে ব্যবহার করা হচ্ছে বিভিন্ন গণমাধ্যমকেও। টেলিভিশন, পত্র-পত্রিকা বা রেডিওতেও জনগণকে উদ্ভুদ্ধ করতে বিভিন্ন ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে।
কিন্তু এরপরও সহিংস রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন নির্বাচন কর্মকর্তারা। গত ২০ ডিসেম্বর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকে ভোটারদের ব্যাপক সচেতনতা বাড়াতে ‘ভোটার এডুকেশন’ ক্যাম্পেইনের প্রস্তাব দেন তারা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইসির একজন কর্মকর্তা এবিসি নিউজ বিডিকে বলেন, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারিতে ভোটার উপস্থিতি ছিল মাত্র ২৬ শতাংশ। এবার তার বেশি হবে বলে মনে হচ্ছে না। বিরোধী দলবিহীন এ নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করতেও নানা ভয়ভীতি কাজ করছে। তারপরও আমরা ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে নানা কৌশল অবলম্বন করে চলেছি।
এদিকে ভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার আগেই দেশের বিভিন্ন স্থানে ভোটকেন্দ্রগুলোতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। শনিবার দুপুর বেলা ১টা পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের প্রায় ১০০ ভোটকেন্দ্রে এ ধরনের নাশকতা করা হয়েছে বলে বিভিন্ন মাধ্যমে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে রাজনীতিক বিশ্লেষক ও কলামিস্ট কাজী সিরাজ এবিসি নিউজ বিডিকে জানান, কোনো অবস্থাতেই মানুষের মন থেকে নির্বাচনে সহিংসতার ভীতি কাটানো যাবে না। এই নির্বাচনে ২০ শতাংশের বেশি ভোটার উপস্থিত থাকবে না বলে তিনি মনে করেন।
তিনি বলেন, ‘বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতরা ইতোমধ্যে ৫২ শতাংশ মানুষের ভোটাধিকার হরণ করেছেন। বাকি ৪৮ শতাংশের মধ্যে ১০-১২ শতাংশ ভোট আওয়ামী লীগ বা মহাজোটের রয়েছে। এদের মধ্যেও সবাই কেন্দ্রে আসবে কিনা সন্দেহ রয়েছে।’ এতো বিতর্ক আর ভয়ের মধ্যে সাধারণ মানুষ খুব বেশি ভোট দিতে যাবে না বলেও মনে করেন তিনি।