বাংলাদেশে নির্বিচারে গ্রেফতার চরম অগণতান্ত্রিক

সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ বাংলাদেশে নির্বাচনোত্তর নির্বিচার গ্রেপ্তারের তীব্র সমালোচনা করেছে নিউইয়র্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। একইসঙ্গে সরকারের সমালোচকদের ওপর চলমান এই কঠোর অবস্থানকে ‘অগণতান্ত্রিক’বলেও আখ্যা দিয়েছে সংস্থাটি।

বুধবার এক বিবৃতিতে সংস্থাটি দ্রুত বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষকে বিরোধী দলীয় সদস্য ও অন্যান্যদের অযৌক্তিক গ্রেপ্তার বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, গত ৫ জানুয়ারির প্রতিদ্বন্দিতাহীন নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও শরিক জোটের বিজয়ের পরও এই গ্রেপ্তার অব্যাহত আছে। এতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন পর্যবেক্ষক পাঠাতে অস্বীকৃতি জানায়।

নির্বাচনের আগে শতাধিক বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীকে আটক করা হয়। বিএনপি নেতা এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকেও কার্যত গৃহবন্দী করা হয়। এছাড়া পুলিশ দিয়ে খালেদা জিয়ার বাসা ঘিরে রাখা ও কাউকে ভেতরে ঢুকতে ও বাইরে যেতে দেয়া হয়নি। এছাড়া অসংখ্য বিরোধী নেতা-কর্মী এরইমধ্যে আত্মগোপনে রয়েছেন বলেও উল্লেখ করা হয়।

এ বিষয়ে সংস্থাটির এশিয়া বিষয়ক প্রধান ব্রাড অ্যাডামস বলেন, ‘এই নির্বিচার গ্রেপ্তার সমালোচকদের দুর্বল, সীমিত মত প্রকাশ এবং ক্ষমতাসীন দলের শক্তি পাকাপোক্ত করার পরিকল্পনার অংশ। যদিও কিছু ক্ষেত্রে সরকার যৌক্তিকভাবেই বিরোধীদের সহিংসতা বন্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে।

আওয়ামী লীগ দাবি করে তারা বাংলাদেশের শীর্ষ গণতান্ত্রিক দলগুলোর একটি। কিন্তু সমালোচকদের ওপর এমন কঠোর আচরণ তাদের গণতান্ত্রিকতার পরিচয় দেয় না।

বিবৃতিতে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দেশে রাজনৈতিক সহিংসতায় কমপক্ষে ১৫০ জন প্রাণ হারিয়েছে যার অধিকাংশর জন্যই দায়ি বিরোধীরা। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, অগ্নিসংযোগসহ সহিংসতার জন্য এরইমধ্যে ৫০০টির কাছাকাছি ভোট কেন্দ্র স্থগিত করা হয়েছে। এছাড়া বিরোধী সমর্থকদের ওপরও আওয়ামী লীগ সমর্থকদের হামলার ঘটনা ঘটেছে।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত দেশে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর বিএনপি এবং জামায়াত সমর্থকদের ওপর হামলা, নির্বাচনের দিন সহিংসতা ও পলিশের গুলিতে ১৮ জনের নিহত হওয়ার ঘটনা এবং নির্বাচনের পর বিএনপির বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতাকে গ্রেপ্তারের বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়।

গত ২৯ ডিসেম্বর বিএনপি ঘোষিত ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ প্রোগ্রামকে কেন্দ্র করে দলটির বহু নেতা-কর্মীকে পুলিশের গ্রেপ্তারের বিষয়টিও উঠে আসে। একজন বিএনপি সংসদ সদস্যের সহযোগির বরাত দিয়ে জানানো হয় তিনি ওই প্রোগ্রামের জন্য ২০০ সমর্থকসহ পরিবহণের ব্যবস্থা করেছিলেন। কিন্তু তাদের সবাইকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। পরে ঘুষ দেয়ার পর বিকেলে পুলিশ তাদের ছেড়ে দেয়।

অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামীর নেতারা গ্রেপ্তারের ভয়ে আছেন বলে জানানো হয়। এরইমধ্যে তাদের অসংখ্য কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং বাকিরা আত্মগোপনে রয়েছে। এরআগে গঠনতন্ত্রের সঙ্গে বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানের মিল না থাকায় জামায়াতকে নির্বাচনে অংশগ্রহণে অযোগ্য ঘোষণা করে সুপ্রিম কোর্ট ও নির্বাচন কমিশন।

সহিংসতা বন্দে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বকে কার্যকর সংলাপের উদ্যোগ নেয়ারও আহ্বান জানিয়েছে। কিছুদিন আগে জাতিসংঘ মহাসচিবও রাজনৈতিক দলগুলোকে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত ও নির্বাচনের জন্য সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়েছিলেন। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জার্মানিসহ বেশ কয়েকটি দেশ চলমান সমস্যা সমাধানে বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন করারও আহ্বান জানিয়েছিল।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানিয়েছে, তারা যেনো শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করতে পারে তাই এমন নির্বিচার গ্রেপ্তার এবং মত প্রকাশের পূর্ণ স্বাধীনতা, সভা, সমাবেশের জন্য বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষকে চাপ প্রয়োগ করে। এ বিষয়ে অ্যাডামস বলেন, ‘বর্তমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা সমাধানে সহিংসতা রোধে সব রাজনৈতিক দলকেই প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। তাই বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের জন্য জরুরি রাজনৈতিক মতবিরোধ সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেই কর্তৃপক্ষকে চাপ প্রয়োগ করতে হবে।’

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ