খালেদা জিয়ার পরির্বতে রওশন
সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ খালেদা জিয়া আর বিরোধী দলের নেতা থাকছেন না। তার জায়গায় এখন থেকে বিরোধী দলের নেতার আসনে বসবেন জাতীয় পার্টির সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য রওশন এরশাদ।
তবে বিএনপির নেতাকর্মীরা মনে করেন, বেগম জিয়া বিরোধী দলের নেতা হিসেবে না থাকলেও কোনো সমস্যা নেই। কারণ তিনি দেশের একটি বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের চেয়ারপারসন। এটাই তার সবচেয়ে বড় পরিচয়। তাকে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য দলের নেতাকর্মীরা প্রস্তুত রয়েছেন।
দলের তৃণমুলের নেতাকর্মীরা এ প্রতিবেদককে বলেন, খালেদা জিয়া সরকারের এই পাতানো নির্বাচনে অংশ না নিয়ে ভালো করেছেন। তিনি দেশ ও দেশের মানুষকে বাঁচিয়েছেন। এই পাতানো নির্বাচনের অংশ না নিয়ে তাকে এবং তার দল বিএনপিকে গৃহপালিত বিরোধী দলের ভুমিকা পালন করতে হলো না। এখন থেকে সংসদে যে দায়িত্বটা পালন করবেন রওশন এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘এ্ সরকার জনগণের দাবি উপক্ষো করে যে একতরফা পাতানোর নির্বাচন করেছে দেশে-বিদেশে এর কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই। সরকার তো গায়ের জোরে এই নির্বাচন করেছে। প্রশাসনকে ব্যবহার করেছে। কারোর কোনো কথাকে মূল্যায়ন না করে গুরুত্ব না দিয়ে নীল নকশার একটা নির্বাচন করে সরকার গঠন করছে। কিন্তু এখানেই তো শেষ নয় জনদাবির মুখে সরকারকে আবারও নির্বাচন দিতেই হবে।’
তিনি বলেন, ‘এ নির্বাচনের মাধ্যমে যারা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন শপথ নিলে বেগম খালেদা জিয়া বিরোধী দলীয় নেতা থাকবেন না। তার সরকারি সুযোগ সুবিধাও হয়তো দেওয়া হবে না। কিন্তু তাতে কী? তাতে তো কেনো সমস্যা দেখছি না।’
মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া ৮০’র দশকে যখন স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন করেছেন তখন তো তিনি প্রধানমন্ত্রী কিংবা বিরোধী দলের নেতা ছিলেন না। তখন তো তিনি একটি দলের প্রধান হিসেবে দেশের মানুষের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তার নেতৃত্বে স্বৈরাচারের সেদিন পতন হয়েছে। দেশের জনগণ গণতন্ত্র ফিরে পেয়েছে। তখনও যেমন জনগণ খালেদা জিয়ার সঙ্গে ছিল, এখনও আছে। আগামীতেও এদেশের জনগণ তার সঙ্গেই থাকবে।’
তিনি বলেন, ‘অপেক্ষা করুন, খুব শিগগিরই আবারও নির্বাচন হবে এবং সেই নির্বাচনে খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হবেন।’
এদিকে, বিরোধী দলের নেতার আসন চলে যাওয়ার পর ১৯৯১ সাল থেকে কখনও প্রধানমন্ত্রী কখনওবা বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে যেসব সুযোগ-সুবিধা পেয়ে এসেছেন সেসব আর পাবেন না খালেদা জিয়া।
১৯৯১ সালের পর থেকে একাধারে দেশের র্শীষ দুটি পদে একাধিকবার দায়িত্ব পালন করার পর এবার তাকে আবার ফিরে যেতে হয়েছে ১৯৮২ সালের মত দলের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য।
সে সময় বিএনপির মত একটি রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব নেওয়ার পর তাকে নামতে হয়েছিল এক কঠিন সংগ্রামে। গৃহবধূ থেকে দলের প্রধান হিসেবে রাজনীতিতে যাত্রা শুরু। এরশাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ আট বছর জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন করেছেন।
এই আন্দোলনে তার দলের র্শীষ পর্যায়ের অনেক নেতা বেঈমানী করে এরশাদের জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন। তারপরও তিনি বিএনপিকে যোগ্য নেতৃত্ব দিয়ে ১৯৯১ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করেন।
১৯৮২ সালের মত এবারও তিনি প্রধানমন্ত্রী কিংবা বিরোধী দলের নেতা না হয়ে তিনি এখন বিএনপির চেয়ারপারসন হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। আর এই সময়ে বিগত দিনের মত বড় চ্যালেঞ্জ নিয়ে লড়তে হবে তাকে। আর সেটা হলো দেশের মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়া এবং গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রাখার আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া।
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, বেগম খালেদা রাজনীতিতে এখন অনেক বেশী পরিপক্ক। ১৯৮২ সালের মত অবস্থায় তিনি এখন নেই। তার দীর্ঘ রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে জাতিকে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি।
র্দীঘ এই পথ চলায় তার নেতৃত্বের সবচেয়ে বড় সাফল্য শত বাধা বিপত্তি, নির্যাতন, হামলা, মামলা, হুমকি ধামকির পরও সরকারের রক্ত চুক্ষুকে উপেক্ষা করে বিএনপির তৃণমুল থেকে দলের র্শীষ নেতাদের কেউ এই নির্বাচনে অংশ নেয়নি। এমকি দলের সিদ্ধান্তের বাহিরে কেউ সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীও হননি।