হাসিনা আঁকড়ে থাকতে চান ক্ষমতা

ডেস্ক নিউজ, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ বাংলাদেশে গত ৫ জানুয়ারির সাধারণ নির্বাচন ছিল প্রহসনমূলক। প্রহসনের নির্বাচনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে চান। আওয়ামী লীগের এক উপদেষ্টার আশা নতুন নির্বাচনের আগে ১ বছর বা তার বেশি সময় হাসিনা ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবেন।

‘দ্য ইকনোমিস্ট’- এ ‘শেখ হাসিনা প্ল্যানস টু হ্যাং অন টু অফিস আফটার অ্যান ইলেক্টোরাল ফার্স’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে।

ওই প্রতিবেদনের শুরুতে বলা হয়, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নৈরাশ্যজনকভাবে একজন সু-অভিনেত্রী নাকি রাজনৈতিক বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন তা বুঝে ওঠা কঠিন হয়ে পড়ছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজধানী ঢাকায় সাংবাদিকদের সামনে স্মিত হেসে বিরোধী দলগুলো নির্বাচন বর্জন করায় তিনি তাদের এ ভুলের জন্য তিরস্কার করেন। নির্বাচনে তার জয়ের বৈধতার বিষয়ে যে সংশয় ও সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে, তা পাশ কাটিয়ে যান। যে কোনোভাবেই তার দেশের গণতন্ত্র অতিশয় খারাপ অবস্থায় রয়েছে। ওই প্রতিবেদনের এক পর্যায়ে বলা হয়, শেখ হাসিনা কতোদিন পর্যন্ত তা চালিয়ে যেতে পারবেন বলে বিশ্বাস করেন, তা পরিষ্কার নয়। বিদেশী রাষ্ট্রগুলো নতুন করে নির্বাচন আয়োজনের জন্য চাপ প্রয়োগ করবে। তবে, তা দৃঢ়ভাবে নয়। পশ্চিমা রাষ্ট্রসমূহ বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠানোর বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেছিল। গত ৬ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট, বৃটেন ও অন্যান্য দেশের সরকার নির্বাচনকালীন সহিংসতা ও ত্রুটিযুক্ত নির্বাচনের ব্যাপারে হতাশা ব্যক্ত করেছে। কিন্তু, কোনো রাষ্ট্রই বলেনি যে, শেখ হাসিনা ও তার সরকারের বিজয় অবৈধ। বিদেশীরা বাংলাদেশে সহযোগিতা বা বাণিজ্য সুবিধা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিতে পারে (বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়নে পোশাকের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার রয়েছে)।

কিন্তু, বাংলাদেশে দারিদ্র দূরীকরণে প্রশংসনীয় যে অবদান তারা রাখছে, সেটি খাটো করে দেখার ক্ষেত্রেও সতর্কতা অবলম্বন করবে তারা। তাই শেখ হাসিনা মনে করেন, তিনি ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে পারবেন। এতে বলা হয়, শেখ হাসিনা যদি বেগম খালেদা জিয়াকে প্রস্তাব দেন, তবে সেটি তার সময়ক্ষেপণের জন্য যথেষ্ট হতে পারে। সরকারি পক্ষ থেকে সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন ও নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ নির্বাচনের প্রস্তাব দেওয়া হতে পারে। কিন্তু, এ বিষয়গুলোতে সমঝোতায় পৌঁছতে বেশ কয়েক মাস পর্যন্ত সময় লেগে যাবে ও হয়তো কখনোই সমঝোতায় পৌঁছানো সম্ভব হবে না। এদিকে জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে বিএনপিকে প্রবল চাপ প্রয়োগ করবে সরকার।

ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, শেখ হাসিনা ভারতের রাজনৈতিক সমর্থন পাচ্ছেন। নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠিয়েছিল সবচেয়ে বড় প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত এবং নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রশংসাও করেছিল তারা। আগে ভারত চেষ্টা করেছিল প্রধান দুটি দলের প্রতিই দেশটির মনোভাব একই তা প্রদর্শন করতে। কিন্তু, বাংলাদেশের জনগণ এখন ধারণা করছেন, প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় ভারতের অনেক বেশি সুনজরে রয়েছেন হাসিনা। এটা সুস্পষ্ট যে, ভারত জামায়াত ও অন্যান্য ইসলামী দলগুলোকে দুর্বল দেখতে চায় ভারত। ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০০৭ সালে বাংলাদশে সেনাবাহিনী দুই স্বেচ্ছাচারী নেত্রী হাসিনা ও খালেদাকে রাজনীতি থেকে একই সঙ্গে নির্বাসনে পাঠানোর যে ব্যর্থ চেষ্টা করেছিল, তেমনটা ঘটবে বলে মনে হয় না। ২০০৭-০৮ মেয়াদে সেনাবাহিনী বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল। এদিকে শেখ হাসিনা সশস্ত্র বাহিনীকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর লোভনীয় দায়িত্ব এবং রাশিয়া থেকে অস্ত্র ও চীন থেকে সাবমেরিন আমদানির প্রতিশ্রুতি দিয়ে যে মধুর সম্পর্ক সৃষ্টি করেছিলেন, তা থেকে ফায়দা পাচ্ছেন। এর ফলে আসন্ন মাসগুলোতে ব্যারাকেই থাকতে সেনাদের উৎসাহিত করবে। অধিকাংশ বিষয়ই নির্ভর করছে বিরোধী দল কিভাবে নেতৃত্ব দিতে পারে। বিশেষ করে তারা নতুন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের দাবিকে বিক্ষোভের মাধ্যমে সফল করতে পারে কিনা, তা দেখার বিষয়।

ওই প্রতিবেদনের শুরুর দিকে বলা হয়, সরকার দাবি করছে, ৪০ শতাংশের কিছু কম মানুষ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ আসনসমূহে ভোট দিয়েছেন। অন্যরা তা আরও কম মনে করেন। এ বিষয়টি শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগকে আরেকটি মেয়াদে ক্ষমতায় আসার শক্ত ভিত তৈরি করে দেয় না। অধিকাংশ ভোটকেন্দ্রে প্রায় কোনো ভোটার উপস্থিতিই ছিল না। এরপর সন্দেহজনকভাবে বিপুল সংখ্যক ভোট পড়ে দিনের শেষ দিকে। সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি ১৫৩টি আসনে কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতাই হয়নি যেহেতু শুধু আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী মিত্র দলগুলো নিবন্ধন করেছিল। রাজধানী ঢাকায় ২০টি আসনের মাত্র ৯টিতে ভোটগ্রহণ হয়। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও ছোটখাটো বেশ কিছু দল ভোটে অংশ নিতে অস্বীকৃতি জানায়। তারা বলেছিল, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন না হলে, তা নিরপেক্ষ হবে না। কিন্তু, শেখ হাসিনা ২০১১ সালে সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তিক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়। তৃতীয় বৃহত্তম দল জাতীয় পার্টির নেতা ও সাবেক সেনাশাসক হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদকে সামরিক হাসপাতালে আটকে রাখা হয়। কারণ, এরশাদও শেষদিকে নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা দিয়েছিলেন। মাত্রাতিরিক্ত ধর্মীয় মনোভাবের কারণে নির্বাচন থেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত হয় চতুর্থ দল জামায়াতে ইসলামী। গত ৭ জানুয়ারি বিরোধী দলের আরও বেশ কয়েকজন নেতাকমীকে গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যে খালেদা জিয়ার একজন বিশ্বস্ত উপদেষ্টাও ছিলেন। হাজার হাজার কর্মী-সমর্থককে গ্রেফতার করা হয়। রাজনৈতিক ত্রাসকে সরকারিভাবে সহিংসতা বন্ধের প্রচেষ্টা হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়। আওয়ামী লীগ নির্বাচনে জয় পাওয়ার পর তা চলতে থাকে।

এ প্রতিবেদনে পুলিশের আক্রমনাত্মক ভূমিকা এবং আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী বাহিনীর সহিংস সংঘর্ষ, ভোটারদের নিরুৎসাহিত করতে বিরোধী দলের  বাসে পেট্রোল বোমা মারার বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়।

এতে বলা হয়, এর মাধ্যমে আরেকটি রক্তাক্ত বছরের কুৎসিত সূচনা হলো। স্বাধীনতার পর সহিংসতম ঘটনার বছরগুলোর একটি ২০১৩ সাল। এ বছরে রাজনৈতিক সহিংসতায় ৫০০ জনের মানুষ নিহত হয়েছেন। বিএনপি ও বিশেষ করে এর ইসলামপন্থী মিত্রদের দায়ী করে সরকার। জামায়াতপন্থীদের নির্বাচনের সময় থেকে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা চালিয়েছে। তা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগও এ অস্থিরতা, অস্থিতিশীলতার জন্য দায়ী। যুদ্ধাপরাধের ত্রুটিপূর্ণ বিচারব্যবস্থা, যার মাধ্যমে ১৯৭১ সালে সংঘটিত অপরাধে বিরোধী দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেওয়া হয়েছে, তাতে উত্তেজনা ভীষণভাবে বেড়েছে। বিচার ও রায় কার্যকর বেশ কয়েক মাস ধরে চলবে।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ