চাপের মুখে এরশাদের শপথ

সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয়ার পর সিএমএইচে সিকিৎসা দেয়ার নাম করে আটকে রাখা হয় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদকে।ওখান থেকেও তিনি তার দল থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথ না নেয়ার নির্দেশ দেন এবং নিজেও শপথ না নেয়ার সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন। তার নির্দেশ অমান্য করেই গত বৃহস্পতিবার নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা শপথ নেয়। তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে সরকার তাকে শপথ নিতে বাধ্য করেছে এবং সরকারের ভয়ে তিনি মুখ খুলছেন না বলে অভিযোগ করেছেন জাতীয় পার্টিতে এরশাদপন্থী বলে পরিচিত নেতারা।

এরশাদপন্থী নেতারা জানান, প্রতিষ্ঠার পর থেকে জাতীয় পার্টি বর্তমানে চরম দুঃসময় পার করছে।বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট নির্বাচন বর্জন করায় জাতীয় পার্টিও নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয়।যদিও এরশাদের জাতীয় পার্টির ৬ জন সর্বদলীয় সরকারে ও নির্বাচনে অংশ নেয়।পরে এক সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন।

সরকার ক্ষুব্ধ হয়ে  এরশাদকে গ্রেফতারের ভয় দেখায়। তাতেও এরশাদ রাজী না হওয়ায় র‌্যাব তাকে তুলে নিয়ে চিকিৎসার নামে সিএমএইচে আটকে রাখে।

নেতারা বলেন, এরশাদকে আটকের পর দলের লোভী ও আদর্শচ্যুত অংশ এরশাদের নির্দেশ অমান্য করে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেয়। তারা বিরোধীদলের পাশাপাশি সরকারের মন্ত্রিসভায়ও যোগ দিতে চায়। তাই এরশাদ আটক হওয়ার আমরা প্রতিবাদ করলেও তারা নীরব। এরশাদের আটকের প্রতিবাদে জাতীয় পাটির এরশাদপন্থীরা হরতালসহ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে। জেলা প্রশাসকের কাছে তার মুক্তির ব্যাপারে স্মারকলিপি দেয়।অথচ বৃহস্পতিবার জাতীয় পর্টি থেকে যারা সংসদসদস্য হিসেবে শপথ নিয়েছে তারা প্রতিবাদতো দূরের কথা সরকারের প্ররোচনায় তারা এরশাদের আটকের  বিষয়টিও স্বীকার করেন না। মন্ত্রীত্বের জন্য তাদের দৌড়ঝাঁপ গণভবন ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের বাসায়।

তারা অভিযোগ করেন,সরকারি চাপে এরশাদের শপথ গ্রহণের বিষয়টি নেতাকর্মীদের মাঝে জানাজানি হয়ে যায়।তবে শনিবার এরশাদের শপথের সময় জাতীয় পার্টির কোনো নেতাকর্মী অনুষ্ঠানে ছিলেন না।  পার্টির কোনো নেতাকর্মী তার সঙ্গে দেখা করতে পারেননি। নেতাকর্মীদের উপস্থিত থাকার জন্য এরশাদ নিজে খবর দিতে পারেননি। আবার সরকারের তরফ থেকেও কোনো খবর দেয়া হয়নি। এমনকি তাকে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে দেয়া হয়নি।শপথ গ্রহণ শেষে তাকে আবার সিএমএইচে নেয়া হয়।

এরশাদের শপথ গ্রহণ সম্পর্কে জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন এবিসি নিউজ বিডিকে বলেন,  হাসপাতালে আটক রেখে এরশাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা হয় না। তিনি স্বেচ্ছায় শপথ নিতে আসেননি। অতীতে দায়ের করা মামলায় জেলের ভয় দেখিয়ে তাকে শপথ নিতে বাধ্য করা হয়েছে। শপথ অনুষ্ঠানে পার্টির কোনো নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন না।তাকে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে দেয়া হয়নি।

পার্টির আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য দেলওয়ার হোসেন খান এবিসি নিউজ বিডিকে বলেন, দলের সুবিধাবাদী অংশ শপথ নিয়েছে। এরশাদকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে শপথ নিতে বাধ্য করা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এরশাদপন্থী এক শীর্ষ নেতা এবিসি নিউজ বিডিকে বলেন, এরশাদের শপথ গ্রহণ ছিল অত্যন্ত গোপনীয়। যে কারণে পার্টির কোনো নেতাকর্মী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারেননি। গণমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদ থেকে আমরা তার শপথের কথা জানতে পারি। সরকার তাকে নিরাপদ মনে করেন না। এ কারণে শপথের পরপরই তাকে আবার সিএমএইচে নিয়ে যাওয়া হয়। সিএএমএইচে কেউ তার সঙ্গে দেখা করতে গেলে সারাক্ষণ ডিজিএফআইর নজরদারিতে থাকতে হয়। একান্তে এরশাদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ থাকে না।

জাতীয় পার্টি ঢাকা মহানগর (দ:) এর সাধারণ সম্পাদক জহিরুল আলম রুবেল এবিসি নিউজ বিডিকে বলেন, এরশাদকে হাসপাতালে আটক রাখা হয়েছে। কাউকে তার সঙ্গে দেখা করতে দেয়া হচ্ছে না। যারা সরকারের পক্ষে দুতিয়ালি করছে তারাই দেখা করার সুযোগ পাচ্ছেন। তার শপথ অনিচ্ছায়, স্বেচ্ছায় নয়।

তিনি বলেন,নবাব সিরাজউদ্দৌলার আমলে যেমন মিরজাফর ষড়যন্ত্র করে। তেমনি দলের দুর্দিনে এরশাদের আটকের সুযোগে সুবিধাভোগীরা সরকারে যাওয়ার ষড়যন্ত্র লিপ্ত।

তবে সরকারি চাপে এরশাদের শপথ গ্রহণের কথা অস্বীকার করেছেন রওশনপন্থী বলে পরিচিত পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মুজিবুর রহমান চুন্নু। তিনি এবিসি নিউজ বিডিকে বলেন, শপথ গ্রহণে এরশাদের ওপর সরকারের চাপ আছে বলে আমি মনে করি না। তবে সংসদ ভবনে এরশাদের সঙ্গে তিনিও সাক্ষাৎ করতে পারেননি বলে তিনি এবিসি নিউজ বিডিকে জানান।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ