এরশাদ-রওশনের জাপা’র সরকারে থাকা নিয়ে সাংবিধানিক বৈধতার মুখোমুখি হতে হবে

সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ নির্বাচনে অংশ নেওয়া না নেওয়া নিয়ে দীর্ঘ প্রায় এক মাস ধরে এরশাদ-রওশন যে নাটকের অবতারনা করেছিলেন, শনিবার এরশাদের শপথ গ্রহনের মধ্য দিয়ে তার পরিসমাপ্তি ঘটেছে। এরশাদ-রওশনের নাটকের চিত্রনাট্য এমনভাবে তৈরী করা হয়েছিল যা দেশের অতি সাধারণ মানুষের কাছে বিশ্বাস যোগ্যতা অর্জন করেছিল। একটু পরে হলেও থলের বিড়াল বেড়িয়ে গেল। সংসদে প্রধান বিরোধী দলের ভুমিকা ও সরকারে থাকা’র যে উদ্দেশ্যে নিয়ে এমন নাটকের মঞ্চায়ন হল, তাতে জাতীয় পার্টির শেষ পর্যন্ত হবে কি? এমন প্রশ্ন এখন নাটক উপভোকারী সাধারন মানুষের।

সাবেক রেলমন্ত্রী আওয়ামী লীগের নয়া সাংসদ সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত জাতীয় পার্টির সংসদে প্রধান বিরোধী দলের ভুমিকায় থেকে আবার সরকারে থাকার বিষয় নিয়ে সাংবিধানিক বৈধতার প্রশ্ন তোলার পর বিষয়টি নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল মাহমুদুল ইসলামও এতকই প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন।
আইন বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, মন্ত্রিসভায় জাতীয় পাটি যোগ দিলে সাংবিধানিক জটিলতা দেখা দিবে। কারণ, স্পিকার গতকাল রওশন এরশাদকে বিরোধী-দলীয় নেতা ঘোষণা করেছেন। এর মাধ্যমে সংসদীয় কার্যপ্রণালি বিধি অনুযায়ী তিনি নিশ্চিত করেছেন যে, জাতীয় পার্টি সংসদে সরকারের বিরোধিতা করবে। অর্থাৎ প্রধান বিরোধী দলের ভুমিকায় থাকবে। দৈত ভুমিকায় জাতীয় পার্টির থাকা নিয়ে সাংবিধানিক জটিলতা হবে বলেও উলেস্নখ করেন বিশেষজ্ঞরা।
সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল মাহমুদুল ইসলাম বলেছেন, ‘কনস্টিটিউশনাল ল অব বাংলাদেশ’ নামে একটি বই লিখেছিলেন। সে বইয়ে তিনি লিখেছেন, যদি কোয়ালিশন সরকার গঠন না করা হয় এবং যদি কোনো সদস্য একটি দলের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়ে অন্য দলের গঠিত মন্ত্রিসভায় যোগ দেন, তাহলে সেক্রেটারি পার্লামেন্ট বনাম খন্দকার দেলোয়ার হোসেন মামলায় আপিল বিভাগের রায়ের ‘রেশিও ডেসিডেন্ডি’ (সিদ্ধান্ত্ম গ্রহণের যৌক্তিকতা) সম্পূর্ণরম্নপে প্রয়োগযোগ্য হবে। এবং সংশিস্নষ্ট সাংসদের আসন তাৎক্ষণিকভাবে শূন্য হয়ে যাবে। বিষয়টি এ বইয়েও পরিস্কার উলেস্নখ করা আছে বলেও জানান তিনি।
উলেস্নখ্য, এক দল থেকে নির্বাচিত হয়ে অন্য দলের মন্ত্রিসভায় যোগদান নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে দুটি রায় প্রাসঙ্গিক। এটা ঘটে ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের নির্বাচনে গঠিত সপ্তম সংসদে। বিএনপি থেকে বিজয়ী দুজন সাংসদ শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন ‘জাতীয় ঐক্যমতের সরকারে’ যোগ দিলে বিএনপি তার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে। ওই সরকারে জাতীয় পার্টি থেকে তৎকালীন মহাসচিব আনোয়ার হোসেন মঞ্জুও মন্ত্রিত্ব গ্রহণ করেছিলেন। জাপার চেয়ারম্যান এরশাদ তখন জেলে ছিলেন। পরে জেল থেকে বেরিয়ে তিনি মঞ্জুকে মহাসচিবের পদ থেকে অপসারণ করেন এবং দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে সংসদে তার আসন শূন্য ঘোষণার জন্য স্পিকারের কাছে আবেদন করেন।
এ বিষয়ে হাইকোর্ট রায় দেন যে, মন্ত্রিসভা গঠনকালে এরশাদ মত দিয়েছিলেন। ১৯৯৬ সালের ১৭ জুন জাপার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান চৌধুরীর সই করা চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে তাকে মন্ত্রিত্ব দেওয়া হয়। ২০০০ সালে এসে এরশাদ তার মত পাল্টান। অথচ এর আগে তিনি তাকে মন্ত্রী হিসেবে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। তাই এ ক্ষেত্রে তার আপত্তি টিকবে না। ২০০১ সালের ৫ জুলাই হাইকোর্ট রায় দেন যে, ‘জাতীয় পার্টি ও তার নেতার সম্মতিতে’ মন্ত্রিত্ব গ্রহণ করায় তিনি ৭০ অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করেছেন বলে গণ্য হবে না।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ