আঙুলের সমান বানর

পরিবেশের খবর, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ বিচিত্র পৃথিবীর প্রাণীজগতের বৈচিত্র্যের শেষ নেই। সেই বিচিত্র প্রাণীজগতের অন্যতম আদি প্রাণী বানর। এদের দুষ্টুমি আবর অদ্ভুত সব কর্মকাণ্ড দেখতে পছন্দ করেন সবাই। কিন্তু কেউ কি ভেবেছেন, একটি বানরের ওজন ৮৫-১৪০ গ্রাম বা উচ্চতা মাত্র ৪-৫ইঞ্চি হতে পারে! কি অবাক হচ্ছেন। অবাক হলেও এটাই সত্য।

smallest monkey 1

পৃথিবীতে পিগমি মারমোসেট নামে এক প্রজাতির বানর আছে, যারা অনায়াসে মানুষের আঙুলে বসে ঘুরে বেড়াতে পারে! এই ক্ষুদ্র বর্গভুক্ত স্তন্যপায়ী প্রাণীটিকে মূলত দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন রেইনফরেস্টে দেখা যায়। এরা পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট প্রজাতির বানর হিসেবে স্বীকৃত।

মারমোসেট গাছে চড়তে অত্যন্ত পটু। লম্বা লেজ শরীরের ভারসাম্য রক্ষা করতে সাহায্য করে। ওজন কম ও ছোট হওয়ায় গাছের শাখা-প্রশাখা মাড়াতে এদের সমস্যা হয় না। এক গাছ থেকে আরেক গাছ বা এক ডাল থেকে আরেক ডালে যেতে সাহায্য করে লম্বা লেজটি। কখনো সখনো এরা গাছের এমন জায়গায় পৌঁছায় যে তাদের প্রজাতির কোনো প্রাণীর পক্ষে সেখানে পৌঁছানো সম্ভব হয় না।

মারমোসেটদের আরও একটি অদ্ভুত গুণ বা ক্ষমতা রয়েছে। এরা ১৮০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে ঘাড় ঘোরাতে পারে, যা তাদের সাহায্য করে শিকার ধরতে এবং শিকারির হাত থেকে বাঁচতে।

smallest monkey 2পিগমি মারসোসেট বিশ্বজুড়ে ক্রমে পোষ্য প্রাণী হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কিন্তু তাদের বাঁচিয়ে রাখা বেশ কঠিন। যখন কোনো বাচ্চাকে তাদের পরিবারের কাছ থেকে আলাদা করা হয় তখন এরা প্রচণ্ডরকম ডিপ্রেশনে ভোগে। ফলে মারা যায়। জন্মের দুই সপ্তাহ পর্যন্ত এদের প্রতি দুই ঘণ্টা পরপর দুধ খাওয়াতে হয়। সুতরাং, এদের পালতে গেলে অনেক সময় ব্যয় করতে হয়। মেনে চলতে হয় অনেক নিয়ম। ছোট হলে কি হবে, এরা কিন্তু দাঁত বসিয়ে কামড়াতেও পটু! বৈজ্ঞানিক নাম ও প্রজাতি।

এক নজরে পিগমি মারমোসেট:

বৈজ্ঞানিক নাম ও প্রজাতি: এদের বৈজ্ঞানিক নাম Cebuella pygmaea Spix, 1823। ইংরেজি The Pygmy Marmoset. পরিবার Callitrichidae. প্রজাতি, Cebuella pygmaea Spix, 1823

দৈহিক গড়ন: পিগমি মারমোসেটের ওজন মদ্দা হলে সর্বোচ্চ ১৪০ গ্রাম, মাদী হলে সর্বোচ্চ ১২০ গ্রাম। যা একটি কমলা বা আপেলের চেয়েও কম। এদের ইচ্ছেমতো হাতের আঙুলে বসিয়ে ঘুরে বেড়ানো যায়। রাখা যায় পকেটে। তাই কেউ কেউ একে বলে ‘পকেট বানর’।

smallest monkey 3আবার ঘাড়ভর্তি কেশরের কারণে কেউ কেউ ডাকেন ‘খুদে সিংহ’ বলে। মাথায় ও বুকে লম্বা লোম রয়েছে যা দেখতে সিংহের মতো। আর লেজটি শরীরের মতোই লম্বা। আর এদের উচ্চতা গড়ে ৫.৫ -৬.৩ ইঞ্চি! লেজসহ মাত্র ৫.৯ -৭.৯ ইঞ্চি!

খাদ্যাভ্যাস: ফল, গুঁড়ি ও ছোট পোকামাকড় গাছের পাতা খেতে এরা পছন্দ করে। তবে এদের প্রধান খাদ্য গাছের গুঁড়ির রস। ক্ষুদ্র এই প্রাণীটি জীবনের অধিকাংশ সময় ব্যয় করে তার ধারালো নখের মাধ্যমে গর্ত খুঁড়ে।

অন্যান্য তথ্য: এরা একটি ক্ষুদ্র দলে বা পরিবারের মধ্যে বসবাস করে। সংখ্যায় দুই থেকে নয়জন। অন্য প্রাণীদের মতো এরাও ঘোরাফেরা, লাফালাফি ও খেলাধুলা করা। কোন শত্রুর উপস্থিতি বুঝতে পারলে এরা বিশেষ শব্দ সৃষ্টির মাধ্যমে দলের অন্য সদস্যদের সতর্ক করে দেয়।

এরা মূলত আমাজন রেইন ফরেস্টের বেসিন নিম্নাঞ্চলে বাস করে। এই ক্ষুদ্রাকৃতির কারণে তারা যেকোনো জায়গায় সহজে অবস্থান করতে পারে। এদের আরও দেখতে পাওয়া যায় পেরু, ব্রাজিল, কলম্বিয়া প্রভৃতি দেশে।

স্তন্যপায়ী এ প্রাণীটি প্রত্যেক বছরই বাচ্চা দেয়। মজার ব্যাপার হলো এরই মধ্যে ৭০ ভাগই শাবক হয় জমজ।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ