চিরনিদ্রায় সুচিত্রা সেন
বিনোদন ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তী অভিনেত্রী সুচিত্রা সেন আর নেই। শুক্রবার সকাল ৮টা ২৫ মিনিটে কোলকাতার বেলভিউ হাসপাতালে তিনি পরলোক গমন করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর।
গত তিন সপ্তাহ ধরে ফুসফুসের সংক্রমণ ও বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত বেশ ভালই ছিলেন তিনি। তার সঙ্কট একেবারে না কাটলেও শারীরিক অবস্থা বেশ স্থিতিশীলই ছিল। তাকে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়ার কথাও ভাবতে শুরু করেছিলেন চিকিৎসকরা।কিন্তু বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকে ফের নন ইভেসিভ ভেন্টিলেশনে রাখতে হয় তাকে।
হাসপাতাল সূত্রে গতকাল জানা গিয়েছিল, সুচিত্রার বুকে কফ এখনও জমে রয়েছে। কিন্তু বুকের ফিজিওথেরাপি নিতেও তার কষ্ট হচ্ছে বলে শুক্রবার থেকে শুধু ওষুধ এবং ইঞ্জেকশনের সাহায্যেই কফ তোলার কথা ভাবা হচ্ছিল। কিন্তু সে সুযোগ পেলেন না চিকিৎসকরা।
চিকিৎসকদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল, সুচিত্রার শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখা। কিন্তু এন্ডোট্র্যাকিয়াল টিউব খুলে নেওয়ার পরে মাঝে মাঝেই তার রক্তে কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছিল। তখন আবার আচ্ছন্ন হয়ে পড়ছিলেন সুচিত্রা। এদিকে স্থিতিশীলতাও বিঘ্নিত হচ্ছিল। অথচ পুরোদস্তুর ভেন্টিলেশনে রাখার ক্ষেত্রেও অসুবিধা রয়েছে। তাই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এমনই পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে সাময়িক ভাবে সুচিত্রার জন্য ফের নন ইনভেসিভ ভেন্টিলেশন শুরু করার সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকরা। রাতের দিকে ওই ব্যবস্থা চালু করা হয়।
বৃহস্পতিবার সুচিত্রাকে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু রাতেই ফের অবস্থার অবনতি হয়। শুক্রবার সকালের দিকে তার ফুসফুস আর ভেন্টিলেশন নিতে পারছিল না। দিন দুয়েক ধরেই রক্ত পরীক্ষার জন্য ইনজেকশন দেওয়া এবং খাওয়ার জন্য জোর করা নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করছিলেন সুচিত্রা সেন। কেউ ডাকলেও রেগে যাচ্ছিলেন। কিন্তু আর বিরক্তি রাগ নয়। সব আবেগের উর্ধ্বে চলে গিয়ে মহানায়িকার জীবন অতীত হয়ে গেল।
বাংলাদেশের পাবনা জেলাতে ১৯৩১ সালে এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন রমা দাশগুপ্ত। বাবা করুণাময় দাশগুপ্ত স্থানীয় স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। ১৯৪৭ সালে বর্ধিষ্ণু শিল্পপতি পরিবারের সন্তান দিবানাথ সেনকে বিয়ের সূত্রে কলকাতায় আসেন পাবনার রমা। বিয়ের পরে ১৯৫২ সালে ‘শেষ কথায়’ রূপোলী পর্দায় নায়িকার ভূমিকায় প্রথম আত্মপ্রকাশ করেন তিনি।
পাবনার রমার নাম বদলে হয় সুচিত্রা। আর তার পরেরটা শুধুই ইতিহাস। তার হাত ধরেই বদলে যায় বাংলা চলচ্চিত্রের নায়িকার সংজ্ঞা। মহানায়ক উত্তম কুমারের সঙ্গে জুড়ি বেধে সুচিত্রা সেন বাংলা চলচ্চিত্রের স্বর্ণযুগে উপহার দিয়েছিলেন একের পর এক সুপারহিট ছবি। উত্তম কুমার ছাড়াও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, অশোক কুমার, বসন্ত চ্যাটার্জীর সহ বেশ কিছু নায়কের সঙ্গে জুটি বেঁধে অসাধারণ কিছু ছবি উপহার দিয়েছেন তিনি।
‘শাপ মোচন’, ‘হারানো সুর’, ‘পথে হল দেরি’, ‘ইন্দ্রাণী’, ‘সপ্তপদী’, `গৃহদাহ`, `হার মানা হার`, `হসপিটাল`, `সাত পাকে বাঁধা`, `সাগরিকা`, `দত্তা` প্রভৃতি সিনেমায় সুচিত্রা সেন তার অসাধারণ প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছিলেন। বাংলার গণ্ডি ছাড়িয়ে হিন্দি ছবির জগতেও সুচিত্রা করেছিলেন বেশ কিছু অসাধারণ সিনেমা। ১৯৫৫ তে দেবদাস সিনেমায় দিলীপ কুমারের বিপরীতে পার্বতীর ভূমিকায় প্রথম দেখা যায় তাকে। `মমতা` এবং `আঁধি` সিনেমার জন্য ফিল্ম ফেয়ার পুরস্কারের মাধ্যমে সুচিত্রার অভিনয় প্রতিভার প্রতি কুর্ণিশ জানিয়েছিল বলিউড।
১৯৬৩ তে প্রথম ভারতীয় অভিনেত্রী হিসাবে `সপ্তপদী`-র জন্য পান মস্কো ফিল্ম ফেস্টিভালে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার । ১৯৭৮ সালে `প্রণয় পাশা`-র পরেই হঠাৎ করেই স্বেচ্ছা অবসরে চলে যান মহানায়িকা। তারপর আর কখনও প্রকাশ্যে দেখা যায়নি ‘মিসেস সেন’-কে। এমনকি ২০০৫ সালে দাদা সাহেব ফালকে পুরস্কারও প্রত্যাখান করেন তিনি। ২০১২ সালে বঙ্গ বিভূষণ পুরস্কার পান। তার হয়ে কন্যা মুনমুন সেন এই পুরস্কার গ্রহণ করেন।