কোটিপতিদের কাছে ব্যাংকিং খাত জিম্মি
সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ আওয়ামী লীগ নেতৃত্ত্বাধীন মহাজোট সরকারের সাড়ে চার বছরে (জানুয়ারি ২০০৯-জুন ২০১৩) কোটি টাকার ঋণ গ্রহীতার সংখ্যা বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। ব্যাংকিং খাতে কোটিপতি আমানতকারীদের চেয়ে কোটি টাকার ঋণগ্রহীতার সংখ্যা ও ঋণের পরিমাণ বেশি। ব্যাংকিং খাতে মোট ঋণ প্রবাহের প্রায় ৬৯ শতাংশ ঋণ ৪৭ হাজার কোটিপতির দখলে। যার কারণে ব্যাংকিং খাত কোটিপতিদের কাছে জিম্মি হয়ে আছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৩ সালের জুন শেষে ব্যাংকিং খাতে মোট ঋণগ্রহীতার সংখ্যা ৯৬ লাখ ৬২ হাজার ৯৫৮ জন। আর তাদের মোট গৃহীত ঋণের পরিমাণ ৪ লাখ ২৪ হাজার ৮০৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে কোটি টাকার ঋণ গ্রহীতার সংখ্যা ৪৭ হাজার ২১০ জন (মোট ঋণ গ্রহীতার মাত্র দশমিক ৫ শতাংশ) এবং তাদের গৃহীত ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ২ লাখ ৯২ হাজার ৪৫৪ কোটি টাকা। এটা ব্যাংকিং খাতে মোট ঋণ প্রবাহের ৬৮ দশমিক ৮৬ শতাংশ।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ১৯৭৫ সালে দেশে এক কোটি টাকার অধিক ঋণগ্রহীতার সংখ্যা ছিল ২১২ জন। ১৯৯০ সালে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২ হাজার ১২৫ জনে এবং গৃহীত ঋণের পরিমাণ ছিল মোট ঋণ প্রবাহের ৩৮ শতাংশ। ১৯৯৬ সালের জুন শেষে দেশে কোটি টাকা ঋণ গ্রহীতার সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ৫২৬ জন, যা গৃহীত ঋণের পরিমাণ ছিল মোট ঋণ প্রবাহের প্রায় ৪৪ শতাংশ। আর ২০০১ সালের ডিসেম্বরে কোটি টাকা ঋণ গ্রহীতার সংখ্যা দাঁড়ায় ৮ হাজার ৮৪৪ জনে। মোট ঋণ প্রবাহের প্রায় ৫২ শতাংশ।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার প্রথমবার ক্ষমতায় আসার প্রাক্কালে ২০০৮ সালের ডিসেম্বর শেষে কোটি টাকা ঋণগ্রহীতার সংখ্যা ছিল ২৫ হাজার ২০৬ জন এবং তাদের গৃহীত ঋণের পরিমাণ ছিল মোট ঋণ প্রবাহের সাড়ে ৬২ শতাংশ। আর ২০১৩ সালের জুন শেষে সাড়ে চার বছরে কোটি টাকার অধিক ঋণগ্রহীতার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৭ হাজার ২১০ জনে। অর্থ্যাৎ সাড়ে চার বছরে বেড়েছে ২২ হাজার চার জন বা ৪৬ দশমিক ৬০ শতাংশ।
শুধু ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে নয়, ঋণ খেলাপির ক্ষেত্রেও দখল করে আছে কোটিপতিরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৩ সালের জুন শেষে শীর্ষ ২০ ঋণ খেলাপির বেসরকারি ও বিদেশি ১৩টি ব্যাংকের প্রায় ৬২ থেকে ৮২ শতাংশ পর্যন্ত খেলাপি রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, কোটিপতিদের ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশে যা হয়। আমাদের এখানেও তা-ই হয়েছে। তবে এটা ব্যাংকিং খাতের জন্য ভালো লক্ষণ নয়। আর এর ফলে সুষম উন্নয়ন ব্যাহত হবে। ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর নজর রাখা প্রয়োজন, যেন তারা কোনো একটি গোষ্ঠীর হাতে জিম্মি হয়ে না যায়।