উপজেলা নির্বাচনের আজ তফসিল হলে ভোট ১৮-২২ ফেব্রুয়ারি

সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রেশ কাটতে না কাটতেই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

রোববার এ তফসিল ঘোষণা করা হবে বলে জানা গেছে।

মেয়াদ পূর্ণ হতে চলেছে দেশের এমন ৪৮৭টি উপজেলা পরিষদের মধ্যে ১৮ থেকে ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শতাধিক এবং ১৮ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত বাকিগুলোর নির্বাচন করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। দেশজুড়ে এসএসসি পরীক্ষার মধ্যেই পরীক্ষার সময়সূচির সঙ্গে সমন্বয় করে এ নির্বাচন করা হচ্ছে বলে জানা যায় নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখা হতে।

শনিবার এই নির্বাচন নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দিন আহমদ বলেছিলেন, ‘ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে অনেকগুলোর উপজেলার মেয়াদ শেষ হবে। এগুলো করতে আইনি বাধ্যবাধকতা আছে। আমরা বুঝেশুনে ব্যবস্থা নেব। যাতে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের কম সমস্যা হয় এবং আমাদেরও আইন ভাঙতে না হয়।’

তবে নির্বাচন বিষয়ে ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের অনেকের অভিমত, আইনি বাধ্যবাধকতার চেয়ে দশম সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন মহলে বিরাজমান অস্বস্তি কাটাতে এবং এ নিয়ে সম্ভাব্য আন্দোলনের উত্তাপ হ্রাসে কৌশল হিসেবেই নেওয়া হচ্ছে এ নির্বাচনকে।

নির্বাচন শাখা তথ্য মতে, উপজেলা পরিষদগুলোর বর্তমান মেয়াদপূর্ণ হতে চললেও এর দেড় হাজারের বেশি সংরক্ষিত নারী সদস্যের নির্বাচন এখনও সম্পন্ন হয়নি। এসব নারী প্রতিনিধি ছাড়াই পরিচালিত হয়ে আসছে গুরুত্বপূর্ণ এ স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান। এছাড়া বেশ কয়েকটি উপজেলায় চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানের মৃত্যুর ফলে ওই সব আসন দীর্ঘদিন ধরে শূন্য হয়ে রয়েছে। নির্বাচনের পাঁচ মাসের মধ্যে ২০০৯ সালেই শূন্য হয়েছে চারটি উপজেলার চেয়ারম্যানের পদ। নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের রায়ে কয়েকটি আসনে পুননির্বাচনের নির্দেশ রয়েছে। কিন্তু এসব উপনির্বাচন বা পুননির্বাচন নানা জটিলতার কারণে সম্পন্ন করা হয়নি। সম্প্রতি ছয়টি নতুন উপজেলা গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে নির্বাচন হয়েছে মাত্র একটির।

কমিশন সচিবালয়ের তথ্য অনুসারে, ১৯ বছর পর ২০০৯ সালের ২২ জানুয়ারি দেশের ৪৮০টি উপজেলা পরিষদের তৃতীয় সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এদিন ব্যাপক দলীয় প্রভাব ও ব্যালট পেপার ছিনতাইসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে চারটি উপজেলার ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। এর আগে স্থগিত করা হয় আরো দুটি উপজেলার নির্বাচন। এসব উপজেলার মধ্যে পাঁচটির নির্বাচন হয় ২০০৯ সালের ৬ মার্চ। নির্বাচনের পর উপজেলা পরিষদগুলোর প্রথম সভা হয় ওই বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৭ মের মধ্যে।

আইন অনুসারে প্রথম সভা অনুষ্ঠানের দিন থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর হচ্ছে উপজেলা পরিষদের মেয়াদ। এ মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ১৮০ দিনের মধ্যে পরবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান রয়েছে। সে হিসাবে এখনই উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত সময়। আইন অনুসারে ১৯ ফেব্রুয়ারির আগেই এ নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। নির্বাচিত ৪৮৭টি উপজেলা পরিষদের মধ্যে ৪৮৬টির নির্বাচন প্রাপ্য হয়ে গেছে। বাকি একটি নতুন উপজেলা ময়মনসিংহের তারাকান্দায় নির্বাচন হয়েছে গত ৩ অক্টোব|

গতকাল ইসির সঙ্গে বৈঠকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দ্রুত এ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে মত দেওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ১৯৮৫ সালের ১৬ থেকে ২০ মে পর্যন্ত উপজেলা পরিষদের প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় নির্বাচন হয় ১৯৯০ সালের ১৪ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত। দ্বিতীয় এ নির্বাচনের পর গণ-আন্দোলনের মুখে এরশাদ সরকারের পতন ঘটলে উপজেলা পরিষদের ভাগ্যও অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত তৎকালীন বিএনপি সরকার উপজেলা পরিষদের ব্যাপারে কোনো আগ্রহ দেখায়নি। এরপর আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের শেষ দিকে উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠানের তাগিদ দেওয়া হলেও নির্বাচন কমিশন সে সময় বিষয়টিতে আগ্রহী হয়নি। ওই সরকার আমলে ১৯৯৮ সালের ৩ ডিসেম্বর প্রণয়ন করা হয় উপজেলা পরিষদ আইন এবং ১৯৯৯ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ওই আইন বলবতের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। সেই প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী প্রজ্ঞাপন জারির ১৮০ দিন বা ১৯৯৯ সালের জুলাই মাসের মধ্যে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও নারী সদস্যদের নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা ছিল। কিন্তু তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবু হেনা এতে সম্মত হননি। এ অসম্মতির পেছনে তার যুক্তি ছিল, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি উপজেলা নির্বাচনের অনুকূল নয়। বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে তৎকালীন নির্বাচন কমিশনের মতপার্থক্যের কারণেই ২০০১ সালে আইনটি সংশোধন করে সময়সীমা প্রজ্ঞাপন জারির পর ১৮০ দিনের বদলে ৩৩০ দিন করা হয় এবং নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণের এখতিয়ারটিও সরকারের অনুকূলে রাখা হয়। এ ছাড়া সংশোধিত আইনে বলা হয়, কোনো দৈব-দুর্বিপাকজনিত বা অন্য কোনো অনিবার্য কারণে নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব না হলে সরকার গেজেট প্রজ্ঞাপন দ্বারা ওই সময়সীমার পর নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য এক বা একাধিক তারিখ নির্ধারণ করতে পারবে।

২০০১ সালের অক্টোবরে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট ক্ষমতা গ্রহণ করলে আবারও উপজেলা নির্বাচনের সম্ভাবনা দেখা দেয়। কিন্তু সংসদ সদস্য ও উপজেলা চেয়ারম্যানদের মধ্যে প্রভাব-প্রতিপত্তি এবং উন্নয়নমূলক কাজের এখতিয়ার নিয়ে  দ্বন্ধ দেখা দিতে পারে- এ আশঙ্কায় নস্যাৎ হয়ে যায় সে সম্ভাবনাটি। এরপর ওয়ান-ইলেভেন-পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ ২০০৮ সালের ২৭ জানুয়ারি উপজেলা পরিষদ আইন সংশোধন করে এর তারিখ ঘোষণার এখতিয়ারটি নির্বাচন কমিশনের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং ১৯৯৮ সালের উপজেলা পরিষদ আইন রহিত করে রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে প্রণয়ন করা হয় স্থানীয় সরকার (উপজেলা পরিষদ) অধ্যাদেশ ২০০৮।

এ অধ্যাদেশে উপজেলা পরিষদে প্রথমবারের মতো চেয়ারম্যান ছাড়াও একজন নারীসহ দুজন ভাইস চেয়ারম্যানের পদ সৃষ্টি করা হয়। এ ছাড়া অন্যান্য স্থানীয় সরকার আইনের সঙ্গে সংগতি রেখে বেশ কয়েকটি নতুন বিধান সংযোজন করা হয়, যা ১৯৯৮ সালের আগের উপজেলা পরিষদ আইনে ছিল না। কিন্তু জাতীয় সংসদে ওই অধ্যাদেশ অনুমোদন না পাওয়ায় পুনর্বহাল হয় ১৯৯৮ সালের আইন। ফলে ভাইস চেয়ারম্যান পদের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়। পরে ১৯৯৮ সালের আইন সংশোধন করে এসব পদ অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ