জনগণ ভোটের অধিকার ফিরে পেতে চায়
সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার নিজেদের স্বার্থের জন্য যা খুশি তাই করছে। তারা জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। দেশের মানুষ ভোটের অধিকার ফিরে পেতে চায়। মানুষ শান্তি চায়। কিন্তু এ অবৈধ সরকারের কাছ থেকে সে আশা করা যায় না।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ অস্ত্রের জোরে ক্ষমতায় এসেছে। গায়ের জোরে ভোট হয় না। জনগণ তাদের ভোট দেয়নি।
সোমবার বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপির গণসমাবেশে প্রথান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। নতুন করে আবারও তারা তা প্রমাণ করলো। এর আগে বাকশাল কায়েম করে তারা তা প্রমাণ করেছিল। মিডিয়ার ওপর সরকারের নগ্ন হস্তক্ষেপ লজ্জাকর। তিনি সরকারের উদ্দেশে প্রশ্ন রেখে বলেন, আপনারা কেন ইনকিলাব পত্রিকাট বন্ধ করলেন? পত্রিকা অফিস বন্ধ করেছেন। কেন আপনারা সাংবাদিকদের জেলে নিয়েছেন জাতি তা জানতে চায়।
৫ জানুয়ারির প্রহসনের নির্বাচন বর্জন করায় অভিনন্দন জানানোর জন্য গণসমাবেশ আয়োজন করা হয়।
বিএনপি চেয়ারপরসন বলেন, এই দুর্নীতিবাজ সরকার দেশের কল্যাণ করতে পারবে না। তারা সবচেয়ে বেশি ভয় পায় দেশের জনগণকে। ২৯শে ডিসেম্বর মার্চ ফর ডেমোক্রেসি আহবান করেছিলাম। জাতীয় পতাকা নিয়ে মানুষ আসবে। কিন্তু দুই দিন আগে আমাকে গৃহবন্দী করেছে। সারা দেশে তারা অবরোধ করেছে। এই হলো সরকার। যদি জনগণের সরকার হতো তাহলে তারা তা করতে পারতো না। আমরা ক্ষমতায় ছিলাম। আমরা যখন ক্ষমতায় ছিলাম তখন কোনো দিন এভাবে কর্মসূচিতে বাধা দিইনি।
বিএনপি চেয়ারপারসন একটি পত্রিকা দখিয়ে বলেন, ভোটকেন্দ্রে কুকুর রয়েছে। কুকুরের দুঃখ আমার যদি হাত থাকতো তাহলে আমি ভোট দিতাম। সরকার নির্বাচনকে এভাবেই কলঙ্কিত করেছে। সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, জনসমর্থন যাচাই করতে হলে অবিলম্বে নির্বাচন দিন।
খালেদা জিয়া বলেন, এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। জনগণ ১৫৩ আসনে ভোট দিতে পারেনি। আর যে ১৪৭ আসনে ভোট হয়েছে সেসব ভোটকেন্দ্রে মাত্র ৫ শতাংশ ভোট পড়েছে। নির্লজ্জ সরকারকে বলবো নির্বাচন দিয়ে জনপ্রিয়তা যাচাই করুন। জনবিচ্ছিন্ন হয়ে সারাদেশে খুন, গুম চলছে। আর এর সঙ্গে আওয়ামী লীগের লোকরাই জড়িত।
আওয়ামী লীগের লোকেরা ও পুলিশ দিয়ে যৌথবাহিনী অভিযানের নামে খুন গুম করছে দাবি করে এসব বন্ধ করার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান খালেদা জিয়া।
সরকারকে দ্রুত আলোচনায় বসার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, আলোচনার মাধ্যমে সমাধান সম্ভব। আপনার তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রথা কেন বাতিল করলেন। শান্তি, স্বস্তি ও গণতান্ত্রিক ধারা ফিরিয়ে আনতে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করে ক্ষমতার মোহ ত্যাগ করে আলোচনায় বসুন।
তিনি আশাপ্রকাশ করে বলেন, আগামী ২৯ জানুয়ারি দেশব্যাপী শান্তিপূর্ণ কালো পতাকা কর্মসূচিতে সরকার বাধা দেবে না।
বেগম খালেদা জিয়া তরুণদের উদ্দেশ্যে বলেন, দীর্ঘ ৪৩ বছর পর দেশের স্বাধীনতা হারানোর পথে। এই স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার করতে হবে।
সরকারের যৌথাবাহিনীর অভিযান প্রসঙ্গে খালেদা জিয়া বলেন, সাতক্ষীরায় যৌথবাহিনীর অভিযান প্রশ্নের সম্মুকীন হয়ে পড়েছে। সেখানে অভিযানের নামে যেভাবে দেশের মানুষের উপরে হামলা নির্যাতন করা হচ্ছে তা এদেশের আইশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহনীর সদস্যরা করতে পারে না। এটা এদেশের মাসনুষ বিশ্বাস করে না। জঙ্গিবাদের সূচনা হয়েছে আপনাদের সরকারের সময়, বিএনপি সরকারের সময় নয়। আপনারা জঙ্গিদের ধরতে পারেননি। বরং আমরা জঙ্গিদের ধরে বিচার করেছি।
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, এনডিপির চেয়ারম্যান খন্দকার গোলাম মূর্তজা, লেবার পার্টি চেয়ারম্যান ড. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান।
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম, সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার শাজাহান ওমর বীর উত্তম, শামসুজ্জামান দুদু, শওকত মাহমুদ, এড.আহমেদ আযম খান, ডা. এজেড এম জাহিদ হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব সালাউদ্দিন আহমেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মশিউর রহমান, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল কবির খোকন, গণ শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক এড. সানাউল্লাহ মিয়া, যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিবুন নবী খান সোহেল, মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইসহাক আজিজ উলফাত, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা প্রমুখ। সহ-তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহামন হাবিব, নির্বাহী কমিটির সদস্য এবি এম মোশাররফ হোসেন, ওলামদলের সভাপতি এম এ মালেক প্রমুখ।
সমাবশে পরিচালনা করেন, বিএনপির প্রচার সম্পাদক জয়নুল আবদিন ফারুক, সহ-দফতর সম্পাদক আব্দুল লতিফ জনি, শামীমুর রহমান শামীম।