মুদ্রানীতি বাস্তবায়ন নিয়ে অর্থনীতিবিদদের সংশয়

সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ চলতি (২০১৩-১৪) অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের (জানুয়ারি-জুন) নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাকের মুদ্রানীতি ঘোষণার মূল লক্ষ্য হচ্ছে ঋণ সরবারহ ও মুল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং কাঙ্খিত জিডিপি’র প্রবৃদ্ধি অর্জনে সরকারকে সহায়তা করা। কিন্তু ঘোষিত মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ, জিডিপি’র প্রবৃদ্ধি ও মুল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তা অর্জন বা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না বলছেন অর্থনীতি বিশ্লেষকরা।

মুদ্রানীতিকে সরকারের রাজস্ব ঘাটতি পুরণের এ মুদ্রানীতি বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংরেক সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ। আর তত্ত্ববধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেছেন, এ মুদ্রনীতি বাস্তবায় কঠিন হবে। মুদ্রনীতি ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ার তারা এসব কথা বলেন।

চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গত (জুলাই-ডিসেম্বর) ছয় মাসের ঘোষিত মুদ্রানীতির কোনো লক্ষ্যমাত্রাই পূরণ হয়নি। বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ কমেছে, বেড়েছে মূল্যস্ফীতি। তাই আগের অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকের ভিত্তি ধরে বিশেষ কোনো পরিবর্তন ছাড়াই দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতি আগামী ছয় (জানুয়ারি-জুন) মাসের জন্য মুদ্রানীতি ঘোষণা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি আগের মতো ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ ও ব্যাপক মুদ্রা সরবরাহে প্রবৃদ্ধি অপরিবর্তিত ১৭ শতাংশ রাখা হয়েছে। তবে এ মুদ্রনীতিতে সরকারের ঋণের প্রবৃদ্ধি ১৯ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২২ দশমিক ৯০ শতাংশ করা হয়েছে। নীট বৈদেশিক সম্পদের প্রবৃদ্ধি বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে, যা আগে ছিল ৮ দশমিক ৪ শতাংশ। নিট অভ্যন্তরীণ সম্পদের প্রবৃদ্ধি কমানো হয়েছে। নিট অভ্যন্তরীণ সম্পদে প্রবৃদ্ধি হবে ১৮ দশমিক ৬ শতাংশ, যা আগের মুদ্রানীতিতে ধরা হয়েছিল ১৯ শতাংশ।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ এবিসি নিউজ বিডিকে বলেন, ‘দেশে বেশকিছু দিন থেকে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা থাকায় সরকারের রাজস্ব আদায় কমে গেছে। তাই দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য সরকারের অর্থের প্রয়োজন। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারের ঋণের প্রবৃদ্ধি বাড়িয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘প্রস্তাবিত প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশ অর্জন করা কঠিন হবে। কারণ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। অর্থাৎ দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন তথা গ্যাস-বিদ্যুতের পর্যপ্ত সরবরাহ রেখে বেসরকারি খাতকে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করতে হবে। কিন্তু বর্তমানে পরিস্থিতিতে বিনিয়োগ বাড়ার তেমন কোনো সম্ভাবনা দেখছি না। তাছাড়া রাজনৈতি অনিশ্চয়তা এখনও কাটেনি। আর দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের আলোচনা করে সমোঝতা না হলে দেশে দীর্ঘ মেয়াদি স্থিতিশীলাতা ফিরবে না।’

সাবেক এ গভর্নর আরও বলেন, ‘মূল্যস্ফীতির ৭ শতাংশে নামিয়ে আনার যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। কারণ সরবরাহ ব্যাবস্থা ভালো ও বিনিয়োগ পরিস্থিতী পর্যপ্ত না থাকলে সাধাণত মূল্যস্ফীতি কমে না।’

দ্বিতীয়ার্ধের (জানুয়ারি-জুন) নতুন মুদ্রানীতি সম্পর্কে অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে প্রথমার্ধের মুদ্রানীতি বাস্তবায়ন হয়নি। শেষ ৬ মাসের জন্য যে মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়েছে সেটা বাস্তবায়ন অনেক কঠিন হবে।’

তিনি এ নীতিকে শুধুই ইন্ডিকেটর হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, ‘এ নীতিতে ৬ শতাংশের যে প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে তা সর্বোচ্চ ৫ দশমিক ৫ থেকে ৬ শতাংশ হতে পারে। বেসরকারি খাতের যে প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে সেটা যথেষ্ট। কারণ চাহিদা বাড়ছে। তবে সেটাও অর্জিত হবে কিনা সেটা নিয়ে সন্দেহ আছে। কারণ রাজনৈতিক অনিশ্চিয়তার কারণে বেসরকারি খাতে ঋণের চাহিদার কমতি আছে।’

সরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি বাড়ানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি বাড়ানো ঠিক আছে।’

তবে ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের সাবেক চেয়ারম্যান ও বেসরকারি এনসিসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নুরুল আমিন বলেন, ‘সরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি বাড়ানো ঠিক হয়নি। সরকারি অর্থ জোগানে ব্যাংকিং খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি না বাড়িয়ে রাজস্ব আদায়ে নজর দেওয়া উচিত।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ