তুরাগ তীরে লাখ লাখ মুসল্লির জুমার নামাজ আদায়
সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে শুক্রবার দেশ-বিদেশের লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লির অংশ গ্রহণে দেশের বৃহত্তম জুমার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুক্রবার বাদ ফজর ভারতের মাওলানা জামশেদের বয়ানের মাধ্যমে ইজতেমার মূল কাজ শুরু হয়। ইজতেমা ময়দানে জুমার জামাতে অংশ নিতে ভোর থেকেই মুসল্লিদের আগমন শুরু হয়। কানায় কানায় ভরে উঠে ইজতেমা ময়দান। আশপাশে উপচে পড়া ভিড় রাস্তা ও অগি-গলির উপর হাজার হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করেন। দেশের ৩৩টি জেলার ধর্মপ্রাণ মুসলমান এতে অংশ নিচ্ছেন।
জুমার নামাজের খুতবা পাঠ ও ইমামতি করেন কাকরাইল মসজিদের ইমাম মাওলানা কারী জুবায়ের হাসান।
তিনি জুমার নামাজের আগে ইমান ও ইয়াকিনের উপর বয়ানে বলেন, মহান আল্লাহ জাল্লেজালালুহু তাঁর রসুলদের যেমন মর্যাদা দিয়েছেন তেমনই উম্মতদেরও তাদের রসুলের কথার মর্যাদা দিতে হবে।
বৃহত্তম জুমার জামাতে শরিক হয়ে নামাজ আদায় করতে শুক্রবার সকাল থেকেই রাজধানী ঢাকা ও আশ-পাশের এলাকা থেকে হাজার হাজার মুসল্লি ইজতেমা মাঠের দিকে দলে দলে ছুটতে থাকেন। তুরাগ তীরের চারপাশে যেদিকে চোখ যায় সেদিকেই দেখা যায় শুধু সাদা পাঞ্জাবি আর টুপি পরা মানুষের ভিড়। জুমার নামাজের সময় আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ছিল বিশেষ সতর্ক অবস্থায়। ইজতেমার প্রথম পর্ব থেকে দ্বিতীয় পর্বে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বেশি জোরদার করা হয়েছে। নামাজ চলাকালে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানচলাচল স্থবির হয়ে যায়।
রোববার দুপুরে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে ৪৯তম বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব।
লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমানের উপস্থিতিতে টঙ্গী এলাকা যেন এক পূণ্য ভুমিতে পরিণত হয়েছে। সমবেত মুসল্লিদের এবাদত বন্দেগি-জিকির আসকারে টঙ্গীর তুরাগ তীর এখন ধর্মীয় নগরীতে পরিণত হয়েছে।
ইজতেমার লাশঘরের দায়িত্বে থাকা মো. আদম আলী জানান, বৃহস্পতিবার রাতে ও শুক্রবার ভোর রাতে বার্ধক্যজনিত হৃদরোগ ও সড়ক দুর্ঘটনায় ৫ মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে।
এরা হচ্ছেন, গোপালগঞ্জের ফকিরহাটখোলার আবদুর রব শেখ (৭০), মাগুরার শালিখার হাজরাহাটি এলাকার বাসিন্দা তোজাম সরদার (৭২), নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের দুর্গাপুর এলাকার নূর আলম (৬৫) ও কুমিল্লার দেবিদ্বারের কুরছাব এলাকার আব্দুল লতিফ (৭৫)। এছাড়া ইজতেমায় অংশ নিতে আসা মাওলানা হেদায়েত উল্লাহ (৭০) টঙ্গী বাজার এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। তিনি নোয়াখালীর মাইজদী মদিনাতুল উলুম কওমি মাদ্রসার শিক্ষক।
নামাজে জানাজা শেষে মৃত মুসল্লিদের লাশ নিজ নিজ গ্রামের বাড়িতে পাঠানো হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়।
টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে সরকার সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। নিরাপত্তারক্ষায় প্রায় ১২ হাজারের বেশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত রয়েছেন। ৮টি ভ্রাম্যমাণ আদালত দুই শিফটে ২৪ ঘণ্টা ইজতেমা ময়দানে কাজ করছে।
আগত মুসল্লিদের স্বাস্থ্যসেবা দিতে ৪২টি ফ্রি মেডিকেল টিম কাজ করছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নির্মিত ৮টি পল্টুন ব্রিজ ব্যবহার করতে পারছেন মুসল্লিরা। অতিরিক্ত ৫টি ট্রান্সফরমার, ৩টি ফিডার ও ৪টি শক্তিশালী জেনারেটর ইজতেমা ময়দানে স্থাপন করা হয়েছে। ঢাকা ওয়াসা পাশাপাশি ১০টি গভীর নলকূপ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মুসল্লিদের পানি সরবরাহ করছে।
ইজতেমার প্রথম পর্ব থেকেই সরকারি মেডিক্যাল টিম মুসল্লিদের সার্বক্ষণিক স্বাস্থ্য সেবা দিয়ে আসছে।
এছাড়াও ইজতেমা মাঠের উত্তরে মন্নু নগর এলাকায় ৩০টি সহ প্রায় ৪২ টি ফ্রি-মেডিক্যাল ক্যাম্প স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করছে। সেখানে সার্বক্ষণিক অ্যাম্বুলেন্সও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। মুসল্লিদের জন্য টঙ্গী সরকারি হাসপাতালেও পর্যাপ্ত শয্যার ব্যবস্থা করা হয়েছে। রাজধানী ঢাকার উপকন্ঠে ঐতিহাসিক সোনাভানের শহর টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে ১৬০ একর জমির বিশাল ময়দানে ১৯৬৭ সাল থেকে দেশ-বিদেশের মুসল্লিদের উপস্থিতিতে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। ১৯৬৬ সালে টঙ্গির পাগার এলাকায় প্রথম বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়।
ইজতেমার অন্যতম আয়োজক ইঞ্জিনিয়ার গিয়াস উদ্দিন আহমেদ জানান, আগামী রোববার আখেরী মোনাজাত সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে ।
মুসুল্লিদের স্থান সংকুলান না হওয়ায় ২০১১ সাল থেকে টঙ্গীতে দু’দফায় বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দ্বিতীয় পর্বের আখেরী মোনাজাতে দেশ-বিদেশের প্রায় ৩৫ লাখ মুসল্লি অংশ নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।