আদালতের নিষেধাজ্ঞার পরও ডিএসসিসি’র দোকান বিক্রি
সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) জায়গায় দোকান বেচা-কেনা হচ্ছে। সরকার সমর্থিত বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা এসব দোকান বিক্রি করছেন। দোকানগুলো বেচা-কেনার সঙ্গে ডিএসসিসি’র কিছু অসাধু কর্মকর্তা জড়িত রয়েছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতায় আসার পর আ’লীগের অঙ্গ সংগঠনের নেতারা রাজধানীর গুলিস্থান ফুলবাড়ীয়া মার্কেটের উত্তর পার্শে অবৈধভাবে অস্থায়ী কিছু দোকান গড়ে তুলে। দোকানগুলো টিঅ্যান্ডটি অফিসের দেয়াল ঘেষে গড়ে উঠায় বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ঢাকা সিটি করপোরেশনকে জানায়। এরপর ডিএসসিসি একাধিকবার অবৈধ এ দোকানগুলো উচ্ছেদ করে। শুধু টিঅ্যান্ডটি অফিসের দেয়াল ঘেষেই নয়, সরকারি এ অফিসের গেট দখল করে ৫৭ নং ওয়ার্ড সেচ্ছাসেবক লীগের ক্লাবও গড়ে উঠেছে। ফলে বর্তমানে টিঅ্যান্ডটি কর্তৃপক্ষ গেটটি ব্যবহার করতে পারছে না।
এদিকে অস্থায়ী দোকানগুলো বার বার উচ্ছেদ করার কারণে ২০১৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে ইটের দেয়াল দিয়ে স্থায়ী ২৮টি দোকান গড়ে তুলেন নেতারা। সিটি করপোরেশন উচ্ছেদ কার্যক্রমে গিয়ে ওই দোকানগুলোও ভেঙে দেয়। এক পর্যায়ে এসব দোকানের সঙ্গে জড়িত নেতারা আদালতের আশ্রয় নেন। তারা আদালতে একটি রিট দাখিল করেন।
এরই প্রেক্ষিতে ওই জায়গায় কোনো প্রকার কার্যক্রম গ্রহণ করা যাবে না বলে আদালত একটি নিষেধাজ্ঞা জারি করে। কিন্ত এ নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই সরকার দলীয় নেতারা দোকানগুলো মেরামত করেন। এরপর বর্তমানে এগুলো বিক্রি করে দিচ্ছেন তারা। এর সঙ্গে ডিএসসিসি’র কর্মকর্তারা জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। আর এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন রহস্যজনক কারণে নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে।
ডিএসসিসি’র একটি সূত্রে জানা গেছে, অতীতে বিভিন্ন মার্কেটে দোকান বরাদ্ধ নিয়ে জালিয়াতির অনেক প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ বেআইনি কাজের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন ডিএসসিসির কিছু অসৎ কর্মকর্তা ও কর্মচারী। ফুলবাড়ীয়া মার্কেটের পাশে টিঅ্যান্ডটি’র দেয়াল সংলগ্ন গড়ে ওঠা মার্কেট নিয়ে আদালত নিষেধাজ্ঞা জারি করে। তা উপেক্ষা করে কিছু অসৎ কর্মকর্তার যোগসাজশে নেতারা দোকান বরাদ্ধ নিয়ে তা বিক্রি করছেন। ডিএসসিসির সম্পত্তি শাখার উর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত রয়েছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিটি দোকানের প্রস্থ ৪ ফুট এবং দৈর্ঘ ৭ ফুট। দোকানগুলো তত্ত্বাবধানে রয়েছেন ফুলবাড়ীয়া ইউনিট, ৫৭ নং ওয়ার্ডের সেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি লিয়ন। তবে মূলত এগুলো নিয়ন্ত্রণ করছেন ঢাকা মহানগর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রিপন।
মিশু নামের একজন ব্যবসায়ী বলেন, আমি দোকান ভাড়া নেয়ার জন্য গিয়েছিলাম। লিয়ন আমাকে জানান, যদি ভাড়া নেন তাহলে ২ লাখ টাকা অগ্রীম দিতে হবে। প্রতিমাসে ভাড়া ১০ হাজার টাকা দিতে হবে। দোকান ক্রয় করতে চাইলে ব্যবসায়ী মিশুকে যুবলীগ নেতা রিপনের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য পরামর্শ দেন লিয়ন।
সে অনুযায়ী রিপনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, দোকানগুলো সিটি করপোরেশনের কাছ থেকে বরাদ্ধ নেয়া হয়েছে। প্রতিটি ১০ লাখ টাকা দামে বিক্রি করবেন বলে জানান রিপন। তিনি মিশুকে আরও জানান, অগ্রীম বায়না করলে কাগজপত্র দেখানো হবে। কত টাকা বায়না করতে হবে জানতে চাইলে তিনি ব্যবসায়ী বলেন অগ্রীম ১ লাখ টাকা দিলে ডিএসসিসি’র বরাদ্ধের কাগজপত্র আপনার জন্য রেডি করা হবে। বাকি টাকা দেয়ার সময় যাবতীয় কাগজপত্র হস্তান্তর করা হবে।
আদালতের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টির সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি মিশুকে বলেন, আদালতের রায় আমাদের পক্ষে এসেছে। আমরা ৯৯ বছরের জন্য লিজ নিয়েছি। এখন আপনি নিলে আমার কাগজপত্র আপনার নামে টান্সফার করে দেবো।
এ সম্পর্কে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুবলীগ নেতা রিপন এবিসি নিউজ বিডিকে বলেন, আমরা নিজেদের টাকা খরচ করে দোকানগুলো করেছি। এরপর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এগুলো ভেঙে দেয়। বিষয়টি নিয়ে আদালত পর্যন্ত যেতে হয়েছে। আদালত নির্দেশনা দিয়েছে ভেঙে ফেলা দোকানগুলো যেমন ছিলো তেমনি মেরামত করে দিতে। সে অনুযায়ী ডিএসসিসি এগুলো মেরামত করে দিয়েছে। পাশাপাশি আমাদেরকে বরাদ্ধ দিয়েছে। তাই আমরা এগুলো ব্যবসায়িদের কাছে ভাড়া ও বিক্রি করতে পারছি।
এ সম্পর্কে জানতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা খালিদ আহমেদের সঙ্গে একাধিকবার কথা বলতে চেয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি অনেকটা রাগান্বিত হয়ে এবিসি নিউজ বিডিকে বলেন, ‘আমি এসম্পর্কে কিছু বলতে পারবো না।’