নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের ৯০ ভাগই মিথ্যা মামলা

সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে দায়ের করা শতকারা ৯০ ভাগ মামলাই মিথ্যা। আর এসব মিথ্যা মামলায় হয়রানির স্বীকার হচ্ছেন নিরীহ মানুষ। আদালতের বারান্দায় ঘুরতে হচ্ছে দিনের পর দিন। মামলা চালাতে অনেককে হতে হচ্ছে নি:স্ব ।

ঢাকার পাঁচটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পেশকার ও ঢাকা বারের শতাধিক আইনজীবী এবিসি নিউজ বিডিকে এ তথ্য জানান ।

হাজারীবাগ থানায় দায়ের করা একটি ধর্ষণ মামলার আসামি রবিউল। তার বিরুদ্ধে সাবিনা (ছদ্মনাম) নামে এক মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগ আনা হয়। ২০০৯ সালের ৯ সেপ্টেম্বর তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।

মামলার নথিসূত্রে জানা যায়, রবিউল হাজারীবাগের একটি বাসায় মা নিয়ে ভাড়া থাকতেন। বাবা বেঁচে নেই। রবিউল ডিশলাইনের একটি কোম্পানিতে ইলেকট্রেশিয়ান হিসেবে কাজ করতেন। ওই বাড়ির কেয়ারটেকার রানু। তার মেয়েই সাবিনা।

রবিউলের এক আত্মীয় এবিসি নিউজ বিডিকে জানান, রবিউল দেখতে সুন্দর। কর্মঠ ছেলে। কাজ ছাড়া কিছুই বোঝেন না। তার ওপর নজর পড়ে রানু বেগমের। তার মেয়েকে রবিউলের সঙ্গে বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। রবিউল সাবিনা নামে মেয়েটিকে পছন্দ করতেন না।রানু বেগমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় স্থানীয় প্রভাবশালীদের সহায়তায় রবিউলের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা দেন তিনি।

২০০৯ সালে দায়ের করা ধর্ষণ মামলাটি ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৫ এ বিচারাধীন রয়েছে। এ মামলার নয়জনের মধ্যে পাঁচজন সাক্ষ্য দিয়েছেন। প্রত্যেক ধার্য তারিখে জামিনে থাকা রবিউলকে আদালতে আসতে হয়। তার আইনজীবীকে প্রত্যেক ধার্য তারিখে দিতে হয় চার হাজার টাকা।

ঢাকার মহানগর পুলিশের প্রসিকিউশন বিভাগের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ১২ বছরে ঢাকা মহানগরীতে ২ হাজার ৮১৯টি ধর্ষণের মামলা হয়েছে। এসব মামলার বিচার চলছে ঢাকার পাঁচটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে। আর গত বার বছরে ঢাকা মহানগরীতে ১ হাজার ৭৩টি শিশু নির্যাতনের মামলা হয়েছে।অপহরণের মামলা হয়েছে ১ হাজার ৯৬৯টি ।

ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল-৫ এ মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে ৪৫০টি। এর মধ্যে সাজা হয়েছে মাত্র দশটি মামলায়। বাকি সব মামলায় আসামিরা খালাস পেয়েছেন। ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল-১ এ গত বছর মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে ৪৭৫টি। এর মধ্যে মাত্র পনেরটি মামলায় আসামিদের সাজা হয়েছে।

ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর সামনে দাঁড়িয়ে আসামি মহব্বত এবিসি নিউজ বিডিকে বলেন, ‘মিথ্যা মামলার যন্ত্রণা কত ভয়ংকর তা বোঝানো যাবে না। রাতে ঘুম হয় না। কীভাবে টাকা জোগাড় করব। আইনজীবীকে টাকা না দিলে আবার আমার জামিন বাতিল হয়ে যাবে। আর আইনজীবী যদি ভালোভাবে সাক্ষীদের জেরা না করেন, তবে আমি মামলায় হেরে যাব।’

মহব্বত আরও বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যৌতুক ও মারধরের মামলা দেওয়া হয়েছে। অথচ আমি আমার স্ত্রীকে মারধর করিনি। ২০০৮ সালে আমার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে যাত্রাবাড়ী থানায়। সেই থেকে আমাকে আদালতে হাজির হতে হচ্ছে। আমি রিকশা চালাই। কীভাবে এত টাকা জোগাড় করবো। নিজে খেতে পারি না; তারপরও আইনজীবীর হাতে টাকা তুলে দিতে হয়।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালের এক পাবলিক প্রসিকিউটর এবিসি নিউজ বিডিকে বলেন, ‘ঢাকার পাঁচটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে অন্তত পনের হাজার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা রয়েছে। এসব মামলার মধ্যে বেশিরভাগ মিথ্যা ও হয়রানিমূলক। এসব মামলা করার মধ্য দিয়ে আদালতে নিরীহ অনেক মানুষ চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়ছেন। এসব মিথ্যা মামলায় নিরীহদের অর্থের অপচয় হচ্ছে। পুলিশের উচিৎ, থানায় অভিযোগ আসলে তা তদন্ত করে মামলা নেওয়া। কোনও নারী এসে কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ আনলেই মামলা নেওয়া উচিৎ নয়।’

অনুসন্ধানে জানা যায়, ঢাকার পাঁচটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে অন্তত এক হাজার মামলার বিচারকাজ শুরু হয়নি। মামলার বাদীরা আদালতে আসেন না। অথচ আদালত তাদের বিরুদ্ধে অজামিনযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি রেখেছেন।

সবুজবাগ থানার মামলা নং ৫০(১২)২০০৩।

এ মামলার বাদী আব্দুস সাত্তার। তার তের বছরের মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে তিনি রফিকের বিরুদ্ধে এ মামলা করেন। ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৫ এ বিচারাধীন রয়েছে। গত দশ বছরে আব্দুস সাত্তার আর আদালতে আসেননি। অথচ আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি রেখেছেন।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ